১৫ বছর ধরে নির্বাচন বঞ্চিত ধামইরহাট পৌরবাসী

অরিন্দম মাহমুদ, ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:৪৭

নওগাঁর অবহেলিত জনপদ ধামইরহাট উপজেলা। এ উপজেলার অর্ধেক অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছে ধামইরহাট পৌরসভা। একটানা প্রায় ১৫ বছর ধরে কোনো নির্বাচন না হওয়ায় পৌরসভার ১২-১৩ হাজার ভোটার ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

উন্নয়ন বঞ্চিত ধামইরহাটে সুপরিকল্পিত কোনো অবকাঠামো বা নাগরিক সুবিধা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে পৌরবাসীর মাঝে একরকম চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে হতে পারে ধামইরহাট পৌরসভা নির্বাচন। লোক মুখে এমন আলোচনা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা হাট-বাজার ও চায়ের আড্ডায় হরহামেশা শোনা যাচ্ছে।

২০০৪ সালের ১৫ জুলাই ধামইরহাট পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকে ১৮ মাস প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক ও বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান চৌধুরী চপল। তারপর ৩০ মে ২০০৬ প্রথম ও শেষ নির্বাচন হলে ছাতা মার্কা নিয়ে বিএনপির প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী চপলকে ২৬ ভোটে পরাজিত করে আওয়ামী লীগে সদ্য যোগ দেয়া আমিনুর রহমান গরুর গাড়ি মার্কা নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।

গত ২৭ ডিসেম্বর ২০১১ সালে মেয়র আমিনুর রহমানের মেয়াদকাল শেষ হলেও অজ্ঞাত কারণে আজও পৌরসভার নির্বাচন হয়নি। লোকমুখে শোনা যায়, এলাকা সম্প্রসারণের দাবিতে তালঝাড়ি গ্রামের নাইকি হাজদা গং দুটি মামলা করেন আদালতে। সেই থেকে ঝুলে আছে পৌর নির্বাচন।

অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনের স্বার্থে মামলাটি বারবার নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হলেও কে বা কারা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মামলাটি বরাবার সচল রাখার চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সাধারণ মানুষের কণ্ঠ রোধ করে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ধামইরহাট পৌরসভার নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। শুধু তাই নয় পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১১ বছর আগে কাউন্সিলর পদটি শুন্য হলেও সেখানে অজ্ঞাত কারণে আজও উপনির্বাচন দেয়া হয়নি।

আলোচনায় সরকারি দলের নবীন ও প্রবীণ মেয়রর প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। কে হবেন নৌকার মাঝি তার জন্য শুরু হয়েছে দৌড় ঝাঁপ। বিএনপি থেকে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী চপল প্রার্থী হলে আর কোনো প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

তবে ভোটের পরিবেশ কেমন হবে, আদৌ ভোট হবে কিনা এসব বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝে হতাশা ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এরপরও সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক তৎপরতা। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চায়ের স্টলগুলোতে শুরু হয় পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তর্ক আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

দীর্ঘ ১৫ বছর ভোট দিতে না পারায় পৌর সাধারণ ভোটাররা এবার ভোট দেয়ার স্বাদটুকু নিতে চায়।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন বলেন, এ সংক্রান্ত মামলা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে চেম্বার আদালতে আপিল করি। আপিল শুনানি শেষে মামলা নিষ্পত্তির ফলে বর্তমানে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলমান আছে।

তিনি বলেন, যেকোনো সময় নির্বাচনী তফশিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আইনজীবী হিসেবে আমার একক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ধামইরহাট পৌরবাসী তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছে বলে মনে করি। এই মুহূর্তে ধামইরহাট পৌরবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পৌর নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার ও পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পৌরসভাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটা মামলা ছিল। এরই মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে পৌরসভার বর্ধিত অংশটির ২ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাকি অংশটুকু অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একমাস আগে আমার কাছে নির্দেশনা এসেছে। বর্তমানে ২ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার তালিকাসহ সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মামলা থাকায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদটি শূন্য হলে সেখানে উপনির্বাচন দেয়া সম্ভব হয়নি।

পৌর মেয়র আমিনুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে বলেন, এতদিন মামলা চলমান থাকায় নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। শুনছি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আবার একটা মামলা হতে পারে। এ বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। দল চাইলে এলাকার উন্নয়নের জন্য আবার আমি পৌর নির্বাচনে দাঁড়াবো।

জেলা নির্বাচন অফিসার মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরাতো নির্বাচন চাই। সেই লক্ষে কাজও করছি। কিন্তু পৌরসভাকে নিয়ে বার বার মামলা হওয়ায় আমরা এগোতে পারছিনা।

তিনি বলেন, পৌরসভার বর্ধিত অংশটির ২ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন করে ভোটার তালিকাসহ সীমানা নির্ধারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। আশাকরি আমরা খুব শিগগির নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবো।

(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :