পদ্মা সেতু ও সরকারের অমঙ্গল কামনায় খালেদা জিয়া

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ
 | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:০৩

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শুভ সকাল। আগামী ২০২১ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কথা ছিল। সেই আশায় আমিও অপেক্ষায় আছি - মুক্তির পথ পদ্মা সেতু হবে, আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো। আমরা গর্ব করে বলবো আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি আমাদেরকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। আমরা যত আগে মাথাটাকে উঁচু করতে পারবো ততই আমাদের মনোবল আরো দৃঢ় হবে। পদ্মা সেতু একদিন দেরি হলে হাজারো সমস্যা নিয়ে পথচলা। আর সেই বোঝা যে কত ভারী সেটা আমরা সকলেই জানি। সুতরাং জনগণকে সরকার যে আশা দেখিয়েছে সেটা আর দূরে সরানোর মতো বিষয় নেই।যথা সময়ে পদ্মা সেতু চালু করতে হবে- এটিকে বঙ্গবন্ধুর আদেশ মনে করতে হবে।

কিন্তু কথাহলো কিভাবে সেটি সম্ভব - আমার একটি উত্তর আছে -

যেভাবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এর উপর সড়ক সেতু চালু করা সম্ভব হয়েছে সেভাবে পদ্মা ব্রিজের রেল সেতু ওর সড়ক সেতু চালু করা যাবে। পুরো সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না করেই। ফলে ওই রেল সেতুর উপর দিয়ে বাস ট্রাক চালু করা যাবে। সুতরাং, আপনারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি ?

সরকারের ভাবমূর্তি অনেক উপরে নিয়ে যাবে যদি যথা সময়ে পদ্মা সেতু চালু করা হয়। এখানে আমি যে সম্ভাবনা দেখছি তাকে হয়তো কারো কাছে দিবাস্বপ্ন মনে হবে। কিন্তু সেটি সত্য নাও হতে পারে।

একসময় পদ্মার ওপারে উন্নয়ন ও পদ্মা সেতুর মতো বিষয় কিছু মানুষ ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করেছে। সেটি মূলত ভারত বিরোধী অবস্থান থেকে করা হয়। তারা যেমন বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বা স্বাধীনতার ঘোষক মানতে পারে না, তেমনি তারা পদ্মার ওপারে উন্নয়ন চায় না। আর তারাই ষড়যন্ত্র করে কিভাবে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করা যায়। আপনি আজ হয়তো মানবিক হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাড়িয়ে দিবেন - কিন্তু সুযোগ পেলে তিনি আবার ফণা তুলতে কিংবা সবল মারতে কুন্ঠিত হবেন না। তিনিতো বলেছেন পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে আপনার কেউ যাবেন না। আমার মনে হয় ওই ভারত সুবিধা পাবে নেতিবাচক মনোভাব থেকে পদ্মা সেতুর কাজকে ধীরে করে দেয়া হচ্ছে। আর চীন যেখানে খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিনে উপহার পাঠায়, সেখানে আমাদের মনে এমন বিশ্বাস হতেই পারে ! আমার যখন হেঁটে যাই তখন আশপাশ থেকে শুনতে পাই - ভারতের মোদিকে দিয়েতো আর আওয়ামী লীগকে সরানো যাবেন না -তাই পাকিস্তান ও চীনের কাছে যেতে হবে। যারা এরকম আওয়াজ দেয় তারা যে সত্যি সত্যি মন্দ কাজগুলো করছে না কিভাবে নিচ্চিত হওয়া যায়। করোনা ভীতি ছড়াতে তারাই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে নয় কি ?

সত্য তো আর লুকিয়ে রাখা যায় না - সত্য একটি বের হয়ে আসে। ১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন - তারা বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা শুনিয়েই সেই মহান কাজটি করেছিলেন। আর জিয়া কি করলেন - সামরিক অভ্যুর্থান করলেন। নিজেকে সুপ্রিম কমান্ডার দাবি করলেন এবং নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করলেন। সেদিন চট্টগ্রাম বাসীরা জিয়াকে বাধ্য করেছিল তার বক্তব্য সংশোধন করতে। সেই পরাজয়ের গ্লানি জিয়াকে চালিত করেছে বছরের পর বছর। মুক্তিযুদ্ধের আবরণে তিনি মূলত গঠন করেছেন এমন একটি ধারা যারা ১৯৭৫ সালে অভ্যুর্থান করেছিল। এবং পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। অনেকটা নোপলিয়ানের মতো। ভাগ্যে নেই কিন্তু ভাগ্যকে গড়ে নেবো ছিল জিয়ার স্বপ্ন। আর তাই জিয়া ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ থেকে অন্তরে বঙ্গবন্ধুকে অপসারনের ভাবনা ভাবতেন। এখন ব্রেন গবেষকরা দাবি করেন ব্রেইনের ভেতরে কি ঘটছে তা তার জানতে পারেন। মিথ্যা বললে ধরা পড়বে, কুচিন্তা করলে ধরা পড়বে, মতলব বোঝা যাবে। একদিন গবেষণা করে ওই কবরের মাটি থেকেও বের করা যাবে জিয়া ১৯৭১ সালে কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে অপসারন করে ক্ষমতায় বসবার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।

সুতরাং আপনাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেকোনোভাবেই হোক যথাসময়ে পদ্মা সেতু চালু করতে হবে। এমনকি একটি টানেল নির্মাণ শেষ হয়েছে কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেলে। প্রয়োজনে ওই একটি টানেল দিয়েই আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। মেট্রোরেল যতটুকু হয়েছে তত টুকু চলতে হবে। এভাবে জনগণকে আনন্দ দিয়ে তাদের মনের হতাশা, অসুখ , আশংখা , টেনশন দূর করে দিতে পারলে তারা উন্নয়নের কাজে আরও মনোযোগী হবে। একদিকে বাঁচবে সময় , অর্থ ও অপর দিকে হবে শান্তির সঙ্গে বসবাস। খালেদা জিয়াকে আপনি ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা জন্য দোষী বলেছেন। যদি তাকে এভাবে করুণা করা হয় তবে কি প্রায়ত: রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বা শহীদ আইভি রহমানের প্রতি সুবিচার করা হবে ? তিনি কারো কারো ভালো করেছেন - কিন্তু কারো কারো সর্বনাশ করেছেন। যে খালেদা জিয়া জেনারেল জিয়ার উত্তরসূরি ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের নায়কদেরকে সম্মানিত করেন তার জন্য কেন আমাদের মায়া থাকবে ? ২৫, ২০০৯ ফেব্রুয়ারী যারা ৫৭ জন সামরিক অফিসারকে হত্যা করেছে তাদের দোসর নয় কি ওই দুর্নীতির সাজা পাওয়া ব্যক্তিটি ?

আপনিতো তাকে দেখতে গিয়েছিলেন যখন কোকো মারা যায়। সেদিন কি তিনি আপনাকে গ্রহণ করেছেন ? আজ একটা আবেদন করছে রোগের দোহাই দিয়ে - কিন্তু তিনি কি ক্ষমা চেয়েছেন ? আইন সকলের জন্য সমান। আদালত বার বার তার জামিন নামঞ্জুর করেছে - আপনি কেন তাকে বারবার অনুকম্পা দেখবেন যদি না সে ক্ষমা চায় এবং ধ্বংসের রাজনীতিকে পরিত্যাগ করে। নিঃশর্ত ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার তিনি রাখেন কি ? তারা রাজনীতি করতে গিয়ে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে , সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকেছে , বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দ্বার রুদ্ধ করেছে- তারা কি বলবার ভাষা আমার নেই তবে -তাদের স্থান কারাগার তা বিচারকরা নির্ধারণ করেছেন। অনুকম্পা পেতে হবে সুযোগ থাকতে হয় এবং যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। তিনি কিভাবে যোগ্য জানাতে চাইতে পারি কি ? জনগণের মনে যদি প্রশ্ন থাকে তবে সরকার বার বার ভেবে দেখবে এবং জনমনের প্রশ্নকে দূরীভূত করবে বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক : শিক্ষক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :