কিশোরদের সুস্থ মনন গঠনে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে

মুশফিক খান আকাশ
| আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:২৪ | প্রকাশিত : ১০ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৩৯

কিশোর,পশ্চিমা বিশ্ব, সংস্কৃতি, শিষ্ঠাচার,শিক্ষা, যৌন শিক্ষা, মূল্যবোধ ও কিশোর, বাংলাদেশ, সংস্কৃতি, শিষ্টাচার, শিক্ষা, মূল্যবোধ, আধুনিকায়ন, পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব। উপরোক্ত কথাগুলো কিছুটা অমিলের মনে হতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে দুইটা শব্দ বেশি লেখা হয়েছে এবং একটা শিক্ষা সম্বন্ধে লেখা হয়নি, সেটাও নজর না এড়াতে পারে।

২০২১ সাল। আধুনিকায়ন আর পশ্চিমা বিশ্বের জোরালো প্রভাব উহ্য রেখে আমাদের দেশের কিশোরদের কল্পনা করাই যায় না। তাতে কেউ দ্বিমত হবেন বলে আশা করি না, কিন্তু যৌন শিক্ষা উহ্য থাকাটা খুব স্বাভাবিক এবং অনেকের কাছে যৌক্তিকও মনে হতে পারে। হাজার হোক এই নিয়ে আলোচনা করা মানা!

মাস দুয়েক হয় কিশোর নামক একটা প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পাই। যেখানে ছেলে কিশোরদের যারা নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে, তাদের সাথে যৌনতা নিয়ে মুক্ত আলোচনা করার সময় তারা প্রচন্ড অস্বস্তি অনুভব করতে শুরু করে এবং অনেকই আলোচনা থেকে বের হয়ে যায়। একরকম তারা মেনে নিতে পারছিলেন না এই নিয়ে কেউ তাদের সাথে আলোচনা করবে।

তাদের সাথে আলোচনায় এই জানাও যায় তাদের ৮০ শতাংশেরই পর্নোগ্রাফি দেখার অনুভব রয়েছে। ভেবে দেখুন তারা পর্নোগ্রাফির সাথে স্বাভাবিক জীবনের যৌনতার শিক্ষা গ্রহণ করছে তার পরবর্তী রূপটা কি হতে পারে?

এবার আসুন কথা বলি ডিজিটাইজেশন এবং কিশোরদের মানসিক অবস্থা নিয়ে, পাড়াগায়ে আজকাল মাঠে খেলাধুলা থেকে মাঠের এক কোনে জটলা পাকিয়ে মুঠোফোনে গেমস খেলতে বেশি দেখা যায়। আর শহরে তো কথাই নেই। জটিলতাগুলো হচ্ছে যখন আমরা ডিজিটালাইজ টুলসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি আমাদের কিশোরদের কিন্তু তার মন্দ এবং প্রভাবকে উহ্য রাখছি, তারা পর্ন দেখার সুযোগ পাবে জেনেও সে নিয়ে তাদের সাথে সুস্থ আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তাটাকে দমন করে যাচ্ছি। ঠিক যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে যৌনশিক্ষা উহ্য রেখছি।

পশ্চিমা বিশ্বে কিশোর কিশোরীদের জন্য ব্যায়ামাগার, খেলার মাঠ, থিয়েটার ইত্যাদি সংস্কৃতি চর্চার জায়গার প্রচুর অপ্রতুলতা রয়েছে যা তাদের সঠিক মনোবিকাশের দিকে ধাবিত করে, সেখানে সবক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে কিশোরদের সমান সুযোগ করে দেয়া হয়।

আবার তারা পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সব স্থান থেকে সঠিক যৌনশিক্ষা পাচ্ছে যা তাদের বিকৃত রুচির দিকে ধাবিত করতে গেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

আর আমাদের দেশের বিষয়টা লক্ষ করুন, এখানে এখন পর্যন্ত যৌনতায় নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মতামত দেয়ার স্থান নেই। এইভাবে শেখানো হয় তাই তাদের সবসময় অধীনস্থ রূপেই থাকতে হবে। আবাল, কিশোর সবাই এই জেনেই বড় হয়।

এই তো মাস দুয়েক আগের কথা টাংগাইলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া নূর নাহার, বিয়ের তেত্রিশ দিনের মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায়, তার স্বামীর বয়স ছিল পঁয়ত্রিশ । যাক হাজার হোক স্বামী তো, বিয়ে করেছিল রক্তক্ষরণে মারা গেলে আর দোষের কি? তার টাকায় বিয়ে করা বউ, বিকৃত যৌনচর্চা তার অধিকার, শাস্তিরই বা কি আছে? সে গল্প এখন বলা চলে বছর পুরানো কারণ একুশ সাল এসে হাজির!

এবার আসি নতুন গল্পে বছরেই শুরুতেই যা সকল যোগাযোগ মাধ্যমকে সরব করে দিয়েছে, দুইজন নব্য কিশোর, রেপকারীর মৃত্যুদন্ড অপরাধকে থমকে দিবে, কিন্তু আসলেই রেপ নির্মূল কি? তাই শুরু করতে হবে সেখান থেকে যেখান থেকে এর উদ্ভব হচ্ছে এই বিকৃত চর্চা। যৌনশিক্ষা, সঠিক সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা, পারিবারিক, সামাজিক কাউন্সিলিং সব কিছু মিলিয়ে প্রস্তুত করতে হবে আমাদের নতুন প্রজন্মকে যাতে তারা বিকৃতির পথে ধাবিত না হতে পারে।

আমরা নিজ অবস্থান থেকে শুরু করতে পারি আমার পাশেই যে কিশোর আছে তাকে সুস্থতার চর্চা নিয়ে ধারণা দিতে পারি, আর বৃহৎ পরিসরে নতুন এবং সুন্দর প্রজন্মের জন্য সমাজ, রাষ্ট্রকেই বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। তা নাহলে এই রাষ্ট্র ধর্ষকের রাষ্ট্র হবে আর একসময় এই হবে আমাদের সুস্থতার চর্চা।

লেখক: মুশফিক খান, শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

ঢাকাটাইমস/১০জানুয়ারি/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :