ফেনীতে অজ্ঞাত রোগে মরে গেছে হাজারো মুরগি

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
 | প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০২১, ১৮:৩৯

ফেনীতে গত কয়েক সপ্তাহে অজ্ঞাত রোগে শতাধিক খামারির কয়েক হাজার মুরগি মরে গেছে। এতে এসব খামার মালিকদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসব পোল্ট্রি ফার্মে মুরগিগুলো এ রোগে আক্রান্ত হয়।

ফলে অল্প সময়ের ব্যবধানে হাজারো মুরগি মরে গেছে। আর এ কারণে ফেনীতে হঠাৎ করে সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা জানিয়েছেন, তাদের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। খামারিরা তাদের আক্রান্ত মুরগি ও মোরগ নিয়ে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হলে কিট দিয়ে এগুলোর বার্ড-ফ্লু টেস্ট করানো হয়। টেস্ট বার্ড-ফ্লুর নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। পরবর্তীতে খামারিরা প্রাণি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা ঘউ রানীক্ষেত রোগ বলে মুরগির চিকিৎসা দেন। কিন্তু এ চিকিৎসায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অজ্ঞাত এ রোগ অল্প সময়ের ব্যবধানে পুরো জেলার পোল্ট্রি খামারগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

সোনাগাজী পৌর এলাকার মেসার্স আরিফ অ্যান্ড ব্রাদার্স অ্যাগ্রো প্রজেক্টের মালিক কাজী বাকি বিল্লাহ আরিফ জানান, ২০১৭ সালে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে ও বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে পাঁচ হাজার লেয়ার মুরগির শেড চালু করেন তিনি। ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় পরবর্তীতে প্রজেক্টের পরিধি বাড়িয়ে পাঁচ হাজার সোনালি মুরগি এবং তিন হাজার লেয়ার মুরগির শেড করেন। এর সঙ্গে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট চালুও করেন। এ গ্যাস প্ল্যান্ট থেকে খামারের আশপাশের পাঁচটি চায়ের দোকান এবং একটি খাবার হোটেলসহ ২৫টি পরিবারের রান্নার কাজে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে খামার প্রতিষ্ঠার পর ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু স্বাভাবিক রোগে খামারের মুরগি আক্রান্ত হলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে তা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু অজ্ঞাত রোগ মহামারি আকার ধারণ করায় দ্রুত তা খামারে ছড়িয়ে পড়লে এক সপ্তাহের মধ্যে তার পাঁচটি শেডের চারটির মোরগ মরে শেডগুলো শূন্য হয়ে যায়।

বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে প্রায় ৫৫ লাখ টাকাসহ এক কোটি টাকার বেশি তিনি খামারে বিনিয়োগ করেছেন বলে জানান আরিফ।

ফেনী সদরের মমতাজ মিয়ার হাটের সুপ্রিম পোল্ট্রি কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক (এমডি) হাজী নুরুল আলম সুমন এবং ফেনী জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হোসেন জানান, সম্প্রতি এ অজ্ঞাত রোগে ফেনীতে শতাধিক খামারির হাজারো মোরগ ও মুরগি মারা গেছে। অনেক খামারির কোটি কোটি টাকার পুঁজি হারিয়ে এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

তারা আরও জানান, ফেনীতে নিবন্ধনকৃত পোল্ট্রি ফার্মসহ কয়েকশ খামারি রয়েছেন। এর মধ্যে বেশি ক্ষতি হয়েছে সোনালি এবং লেয়ারের মুরগি ফার্মে। ফেনীতে সোনালি ব্রিডার হ্যাচারি সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে পাঁচটি মা মুরগির হ্যাচারিইও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খামারিরা আভিযোগ করে বলেন, ফার্মের মুরগি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, আমাদের উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন। বার্ড-ফ্লু কিংবা অজ্ঞাত রোগে পোল্ট্রি ফার্মের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন লিখিত কোনো অভিযোগ কেউ করেননি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা খামার পরিদর্শন করেছেন। খামারিদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :