সালথার তাণ্ডবে মামলার আসামি ৪ হাজার, আরেকজনের মৃত্যু

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৩৫

ফরিদপুরের সালথায় উপজেলার বিভিন্ন সরকারি অফিস ও থানায় তাণ্ডবের ঘটনায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও চার হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন।

এদিকে তাণ্ডবের ঘটনায় মিরান মোল্যা(৩৫) নামে আহত আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের দরজাপুরুরা গ্রামের আব্দুর রব মোল্যার ছেলে। বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাওয়াল ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া। এর আগে এ ঘটনায় জুবায়ের হোসেন(২০) নামে এক যুবক নিহত হয়। মোট দুই যুবকের মৃত্যু হলো এই সহিংসতায়।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, উপজেলা পরিষদ ভবন, ভূমি অফিস, মুক্তযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও থানা এলাকায় তাণ্ডবের ঘটনায় ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিসহ ১২ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালিয়া গ্রামের ক্বারী ইনছুর শেখের ছেলে নুরু শেখ (১৮), বিনোকদিয়া গ্রামের করিম কাজীর ছেলে সজিব কাজী(১৯), ইউসুফদিয়া গ্রামের শাহজাহান মাতুব্বরের ছেলে রাব্বি মাতুব্বর(১৯), মিনাজদিয়া গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে ইউনুস মাতুব্বর(৬০) ও গোপালিয়া গ্রামের সালাম মোল্যার ছেলে আমির মোল্যা(৩০)।

অন্যরা হলেন, ফুকরা গ্রামের গ্রামের আবুল কালাম শেখ(৩৫), রিপন শেখ(৩২), ইলিয়াস মোল্যা(২৭), চিলারকান্দা গ্রামের শহিদুল শেখ(৩২), পিসনাইল গ্রামের রুবেল ফকির(২৫), সোনাপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম(১৮) ও বিনোকদিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম(১৮)।

জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানিয়েছেন, সালথার তাণ্ডবের ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের দুটি কমিটি করা হয়েছে। এর একটি প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা আলীকে। অন্য কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম মোল্যাকে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই দুই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে ধ্বংসযজ্ঞ শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এলাকার অবস্থা এখনো থমথমে। উপজেলা পরিষদজুড়ে এখন পড়ে আছে শুধুই ক্ষত-বিক্ষত চিহ্ন। উপজেলা সদরের বাতাসে পোড়া গন্ধ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাঁচ আর আসবাবপত্রের টুকরা। মানুষের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। টানা তিনঘণ্টা তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড উপজেলা পরিষদ এলাকা। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যাক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম আলী বলেন, সোমবার রাতে চালানো তাণ্ডবের ঘটনা এখনও চোখে ভাসছে। স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, সালথা দাঙ্গাপ্রবণ এলাকা হলেও এমন ঘটনা কখনো ঘটতে দেখিনি। এই ধরনের ভয়াবহ তাণ্ডব প্রথম দেখল সালথাবাসী। এ কারণে সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি। এ সময় সহকারী কমিশনারের গাড়ি থেকে নেমে কয়েক ব্যক্তি বাজারে উপস্থিত কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা পুলিশের গুলিতে কয়েকজনের মৃত্যু ও স্থানীয় হেফাজত নেতা মাওলানা আকরাম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় কয়েক হাজার মানুষ দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা ও লাঠিসোটা নিয়ে উপজেলা চত্বরে ঢুকে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও থানায় তাণ্ডব চালায়। তিন ঘণ্টাব্যাপী চলে তাদের ধ্বংসযজ্ঞ।

তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি উপজেলা পরিষদ চত্বরের গাছপালা ও বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যাল। এতে সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তাণ্ডবচলাকালে ইউএনও-এসিল্যান্ডের দুটি সরকারি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয় তারা।

এছাড়াও তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় ও দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের ৫৮৮টি গুলি, ৩২টি গ্যাস গান, ২২টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫টি রাইফেলের গুলি ছুঁড়ে।

(ঢাকাটাইমস/৭এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :