হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত কত দূর?

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১২:৪১| আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১৩:০১
অ- অ+

আবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর নাম সামনে এসেছে। আর তাতে যেন বিতর্কেরই সমার্থক হয়ে উঠেছেন তিনি। এর আগে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সরকারের শুদ্ধি অভিযানে এই হুইপের নাম উঠে এলে তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সেই তদন্ত এখন কত দূর? দুদকের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, সেই তদন্ত এখনো চলছে। এরই মধ্যে হুইপ ও তার ছেলের বিরুদ্ধে মসজিদের জায়গা দখলসহ উঠেছে আরও নানা অভিযোগ।

২০১৯ সালের ক্যাসিনো অভিযানের পর ওই বছরের ২৩ অক্টোবর মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে এমপি সামশুল হক চৌধুরীসহ ২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি পাঠায় দুদক।

দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্টরা দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তারা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

একই সঙ্গে ওই সময় জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সামশুল হকসহ সংশ্লিষ্ট দুই ডজন সাংসদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনুরোধ জানায় দুদক।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে হুইপসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছিল দুদক। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দুদকের পাঠানো ওই চিঠির বিষয়ে সংস্থাটির সাবেক সচিব দিলওয়ার বখত তখন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

দেশে ক্যাসিনোকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকার যখন ধরপাকড় করছিল, তখন এর সমালোচনা করেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। এর মাধ্যমে তিনি প্রকারান্তরে ক্যাসিনো-বাণিজ্যের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দেন। তিনি তখন বলেন, ‘চট্টগ্রামে ১২টি ক্লাব আছে। ক্লাবগুলো প্রিমিয়ার লিগে খেলে। ওদের তো ধ্বংস করা যাবে না। ওদের খেলাধুলা বন্ধ করা যাবে না। প্রশাসন কি খেলোয়াড়দের পাঁচ টাকা বেতন দেয়? ওরা কীভাবে খেলে, টাকা কোন জায়গা থেকে আসে, সরকার কি ওদের টাকা দেয়? দেয় না। এই ক্লাবগুলো তো পরিচালনা করতে হবে।’

ক্লাব জুয়া থেকে হুইপের আয় শত কোটি টাকা!

দুদক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের আবাহনী ক্লাব থেকে গত পাঁচ বছরে সামশুল হক আয় করেছেন কয়েক শ কোটি টাকা। ঠিক এমনই একটি বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন একজন পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল আমিন। পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরপত্তা আইনে মামলা করেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্লাব থেকে ক্যাসিনোর মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সামশুল হক চৌধুরীর প্রধান সহযোগী ও তার কথিত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএ) নুর উর রশীদ চৌধুরী ওরফে এজাজ চৌধুরীকে গত বছরের ২১ জানুয়ারি দুদক প্রধান কার্যালয়ে টানা ছয় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে নুর উর রশীদ জাতীয় সংসদের হুইপের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন। এর আগে তাকে ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবি নোটিশ পাঠানো হয়। তবে ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছেন হুইপ।

রক্ষা পায়নি মসজিদের জায়গা

হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘পটিয়া থানা জামে মসজিদ’-এর জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। ওই মসজিদের ২২ গন্ডা জমি দখল করে তাতে ১০ তলা অভিজাত মার্কেট নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ।

সামশুল হক চৌধুরী ও তার ছেলে শারুন চৌধুরী এরই মধ্যে তাদের অনুসারী এক নেতাকে দিয়ে কথিত মসজিদ পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে। পরিবর্তন করে দিয়েছেন মসজিদের নাম। এরই মধ্যে মসজিদ ভেঙে ১০ তলা মার্কেট করে তাতে দোকান তৈরির আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

বাবুর্চিকে দিকে হুইপের জালিয়াতি

জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমি আত্মসাতের অভিযোগও আছে চট্টগ্রামের পটিয়া আসনের এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। জানা যায়, বাসার বাবুর্চিকে মালিক সাজিয়ে বাকলিয়া কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পের তিন গণ্ডা দুই কড়া জমি বিক্রি করে দেন তিনি।

বাকলিয়া কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পের ওই জমির বরাদ্দ পান আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল হায়দার মজুমদার। ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ওই জমি বিক্রি করে দেন মোহাম্মদ শফিক আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে।

সামশুল হক চৌধুরী ২০০১ সালে বাবুর্চি সোলেমানকে মোহাম্মদ শফিক আহমেদ সাজিয়ে এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য খুরশিদা খানম নামের এক নারীকে রেজিস্ট্রি করে দেন। ওই দলিলের শনাক্তকারী ছিলেন হুইপ নিজে।

২০০২ সালের মাঝামাঝি জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পারেন সোলেমান বাবুর্চি। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের প্রথম শ্রেণির হাকিম আদালতে হলফনামা দিয়ে জালিয়াতির বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন তিনি।

দুদকের তদন্ত কত দূর?

২০১৯ সালে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে সামশুল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তবে এখনো দুদকের পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডাকা হয়নি।

এই বিষয়ে দুদকের পরিচালক (অনুসন্ধান) ও তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগোযোগ করা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তার (সামশুল) বিরুদ্ধে এখনো দুদকের তদন্ত ও অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।’ তদন্তের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে কোনো কিছু বলেননি এই কর্মকর্তা।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর দুই শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকা করে তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক। ইতোমধ্যে এই তালিকা থেকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বেশ কয়েকজন আলোচিত নেতাসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

দুদকের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তালিকায় উঠে আসে সামশুল হক চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের আরও পাঁচ সংসদ সদস্যের নাম। তবে অনুসন্ধান শুরুর পর কেবল সুনামগঞ্জের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পেরেছে দুদক।

(ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সিরাজগঞ্জে পৃথক স্থান থেকে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার
জাতীয় পার্টি আর ভাঙবেন না, বাবাকে আর অপমান করবেন না: এরিক এরশাদ
মোহাম্মদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযান, পেশাদার মাদক কারবারিসহ ৩৫ জন গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের উন্নয়নে পল্লীবন্ধু এরশাদের অবদান অনস্বীকার্য: মামুনুর রশীদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা