আন্তর্জাতিক আল-কুদস দিবস উপলক্ষে ঢাকায় ওয়েবিনার

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ০৭ মে ২০২১, ২০:৫৫
অ- অ+

আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকাল ৩টায় আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক ও আল-কুদ্স কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী এতে সভাপতিত্ব করেন।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম শমশের আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মাদ রেজা নাফার। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ. কে. এম বদরুদ্দোজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিকুর রহমান খান, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী স¤পাদক জামাল উদ্দিন বারী, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মওলানা এ. কে. এম. মাহবুবুর রহমান ও দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন।

ওয়েবিনার সঞ্চালনায় ছিলেন আল-কুদ্স কমিটি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা তারেকুল হাসান। ক্বারী এ. কে. এম. ফিরোজের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ওয়েবিনার শুরু হয়।

প্রতি বছর রমযান মাসের শেষ শুক্রবার জুমআতুল বিদাকে আন্তর্জাতিক আল-কুদস দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনি (রহ.) জুমআতুল বিদাকে আন্তর্জাতিক কুদস দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন এবং ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা ও তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য এ দিবসটি পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। তারপর থেকে বিশ^ব্যাপী এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

প্রধান অতিথি ড. এম শমশের আলী বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী দেশ এবং সবসময় শান্তির পক্ষে কথা বলে আসছে। বাংলাদেশের একটি সুন্দর পররাষ্ট্র নীতি রয়েছে। তা হলো- সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতিই শত্রুতা নয়।

তিনি যুবকদের জন্য আয়োজিত একটি বিজ্ঞান কনফারেন্সে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, সে কনফারেন্সের আলোচনার একটি বিষয় ছিল পারমাণবিক শক্তির বিধ্বংসী ব্যবহার নয় যেটি হিরোশিমা-নাগাশাকির ক্ষেত্রে ঘটেছিল, বরং পারমাণবিক শক্তির ইতিবাচক ব্যবহার করতে হবে। তিনি হল্যান্ডে আয়োজিত আরেকটি কনফারেন্সের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে তিনি লর্ড নোয়েল বেকারের সাক্ষাৎ লাভ করেন যিনি লীগ অব নেশন্স-এর প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন, তিনি বলেন, আমি বাদশাহ আবদুল আজিজকে বলেছিলাম যে, ইসরাইলিরা এখানে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আবদুল আজিজ জবাব দেন, ইহুদিরা যেহেতু জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক উন্নত তাই তারা যদি আমাদের পাশে আসে তাহলে আমরা শুধু উপকৃতই হব। কিন্তু তারা এটি চিন্তা করেনি যে, এতে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভূমিতেই উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে।

বিশেষ অতিথি মোহাম্মদ রেজা নাফার একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোন মুসলমান অপর কোন মুসলমানকে আহ্বান করে আর সে তার ডাকে সাড়া না দেয় তবে সে মুসলমান নয়।’

এ হাদিস অনুযায়ী ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণের আহ্বানের বিষয়টি আমাদের স্মরণ করা উচিত। পৃথিবীব্যাপী করোনা মহামারির মধ্যে ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য এই ওয়েবিনারের মাধ্যমে আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের কাছে এ বার্তাই পৌঁছাতে চাই যে, ফিলিস্তিন ইস্যু আজও জীবন্ত।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে ইসরাইল বিশ্বের ১৬০টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। ২০টি দেশে এখনও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেনি যাদের মধ্যে বাংলাদেশ ও ইরান রয়েছে। ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

আল-কুদস হলো মুসলিম বিশ্বের জন্য রেড লাইন। কারণ, এটি অনেক নবী-রাসুলের জন্মভূমি, মহানবীর মেরাজ যাত্রার সূচনা ও মুসলমানদের প্রথম কিবলা যেটি যায়নবাদীরা দখল করে আছে। ইমাম খোমেইনী (রহ.) কর্তৃক আল-কুদস দিবস ঘোষণা ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি প্রতীক।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অপরিবর্তনীয় ও অফিসিয়াল সুস্পষ্ট অবস্থান হলো দখলদার যায়নবাদীদের বিরুদ্ধে। ইরান ফিলিস্তিনিদের সর্বব্যাপী স্বাধীনতার সমর্থক। ফিলিস্তিনিদের মুক্তির একমাত্র পথই হলো যায়নবাদীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত প্রতিরোধ। ফিলিস্তিনিদের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে, বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনিদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে, জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে।

পরিশেষে তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, মহান আল্লাহর অনুগ্রহে আগামী ২০ বছর পরে ইসরাইল নামক কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এ অঞ্চলে থাকবে না।

ওয়েবিনারের সভাপতি ড. কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যাচার, নির্যাতনের মধ্যে অতিবাহিত করছে। অনেকে শহীদ হয়েছেন। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। শিশুহত্যা, দেশ থেকে বিতাড়ন, নির্যাতন সবকিছুরই শেষ রয়েছে।

তিনি বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনী মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আল-কুদস দিবস ঘোষণা করেন যাতে মাজহাব নির্বিশেষ সবাই ফিলিস্তিন ইস্যুতে একত্র হতে পারে।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। কিন্তু কতিপয় আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে। সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের চেষ্টা করছে যেটি ঠিক নয়। আমাদেরকে শত্রু-মিত্র চিনতে হবে। নিজেদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও অভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা বিভক্ত হয়ে পড়লে সেটি ইসলাম ও মানবতার দুশমনদের জন্য ভাল হবে যেটি কাম্য নয়। তাই আমাদের ইমানকে সমুন্নত করতে হবে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি সাধন করতে হবে, নৈতিকতাকে উন্নত করতে হবে, সর্বোপরি ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে।

যায়নবাদী ইহুদিদের কবল থেকে ফিলিস্তিন ও বাইতুল মুকাদ্দাস মুক্তকরণে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা ও মুসলমানদেরকে জাগিয়ে তোলাই এ দিবস পালনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।-বিজ্ঞপ্তি

(ঢাকাটাইমস/৭মে/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চাঁদা না দেওয়ায় পল্লবীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ – গ্রেপ্তার ৩
ছন্দে ফিরলেন লিটন,সমতায় ফিরল টাইগাররা
১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১০৭ কোটি মার্কিন ডলার
নিবন্ধন স্থগিত হলেও ইসির তফসিলে থাকছে ‘নৌকা’, অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না ‘শাপলা’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা