ঈদের পর আশ্রয়স্থল ছাড়তে হবে বৃদ্ধা সুরুজা বিবির

আশফাক জুনেদ, বড়লেখা (মৌলভীবাজার)
 | প্রকাশিত : ১১ মে ২০২১, ১৫:২৪

নিজের কোনো বাড়ি নেই। থাকেন অন্যের বাড়িতে। সেই বাড়ি থেকেও ঈদের পর চলে যেতে হবে। মালিক বাড়ি বিক্রি করে দেবেন। তাই ঈদের পর বাড়ি ছাড়ার কথা বলেছেন। এমন অবস্থায় কোথায় যাবেন, কি করবেন বুঝতে পারছেন না মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের করমপুর গ্রামের বৃদ্ধা সুরুজা বিবি (৭০)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে নদীভাঙনের স্বীকার হয়ে মুক্তিযুদ্ধের আগে স্বামী মৃত আছমত আলীর সাথে করমপুর গ্রামে এসেছিলেন সুরুজা বিবি। তার স্বামী ছিলেন দিনমজুর। নিজের বাড়ি না থাকায় অন্যের বাড়িতে থাকতেন তারা। দিনমজুর স্বামীর উপার্জিত অর্থে কোনমতে সংসার চলতো। এভাবেই চলছিল দিন। প্রায় ত্রিশ বছর আগে মারা যান স্বামী আছমত আলী। স্বামীর মৃত্যুর পর চরম বিপাকে পড়েন সুরজা বিবি। তিন মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে শুরু হয় সুরুজা বিবির জীবনযুদ্ধ। মানুষের বাড়িতে থেকে কোনমতে কাজ করে সংসার চালাতে থাকেন। সন্তানরা বড় হয়। ইতোমধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের এক ছেলে থাকেন আলাদা আর আরেক ছেলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় আট বছর আগে মারা গেছেন। বড় ছেলেরও অভাবের সংসার। তাই সুরুজা বিবি থাকেন ছোট ছেলের সংসারে। ছোট ছেলের সংসারে তার স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছেন। পরিবারে নেই উপর্জনক্ষম কোনো মানুষ। বড় নাতি একটু আধটু কাজ করে। এছাড়াও মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় চলে তাদের সংসার। এমন অবস্থায় অনেক সময় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে সুরুজা বিবি ও তার পরিবারের। অভাবের তাড়নায় ও বার্ধক্যের কারণে সুরজা বিবি ঠিকমত চলতে পারেন না। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে আরো অনেক আগে। কথাও বলতে পারেননা ঠিক মতো।

সরেজমিন করমপুর গ্রামে সুরুজা বিবির আশ্রয়স্থলে গেলে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে আছেন তিনি। বয়সের ভারে একেবারে নুয়ে পড়েছেন। এসময় কথা হয় সুরুজা বিবির সঙ্গে।

তিনি জানান, তার স্বামী একজন দিনমজুর ছিলেন। পরিবারের অসচ্ছলতায় কোনো বাড়ি করতে পারেননি। মানুষের বাড়ি বাড়ি থাকতে হয়েছে। বর্তমানে আছেন উত্তর শাহবাজপুরের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে। তিনিও জানিয়ে দিয়েছেন ঈদের পর বাড়ি ছাড়তে হবে। এমন অবস্থায় কোথায় যাবেন, কার বাড়িতে উঠবেন, কোথায় হবে নতুন ঠিকানা ভেবে কূল পাচ্ছেন না তিনি।

তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকার ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছে। তিনিও যদি একটি ঘর পান তাহলে শেষ বয়সে নিজের নিবাসে শান্তিতে মরতে পারবেন।

সুরুজা বিবির ছেলের বউ বিধবা আফিয়া বেগমের বলেন, ‘পঞ্চাশ বছর থেকে আমরা মানুষের বাড়ি বাড়ি থাকছি। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, সরকার যেন আমাদের একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়।’

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাইদুল মাহবুব ও কে আই সবুজ বলেন, ‘সরুজা বিবি আমাদের গ্রামে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে আছেন। মন্ত্রী মহোদয়েরর কাছে অনুরোধ থাকবে এই ভূমিহীন অসহায় পরিবারটিকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।’

তবে বড়লেখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খান বলেন, বর্তমানে দক্ষিণভাগে ঘর নির্মাণ চলছে। ওই বৃদ্ধা যদি দক্ষিণভাগে আসতে চান তাহলে তাকে একটা ঘর দেওয়া যাবে।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আল ইমরান বলেন, ‘বর্তমান শাহবাজপুরের দিকে কোন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে না। দক্ষিনভাগে ঘর নির্মানের কাজ চলছে। তিনি যদি দক্ষিনভাগের দিকে ঘর নিতে চান তাহলে আমরা তাকে ঘর দিতে পারব। আর যদি দক্ষিনভাগে না নিতে চান তাহলে পরবর্তীতে শাহবাজপুরে ঘর নির্মাণ করা হলে সেখানে তাকে একটি ঘর দেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১১মে/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :