আবার চলতে শুরু করল জ্ঞানের গাড়ি
মহামারি করোনার ২য় ঢেউয়ের কারণে গত ২ মাস জ্ঞানের গাড়ির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আজ থেকে আবার জ্ঞানের গাড়ি কার্যক্রম আরম্ভ করেছে। ঢাকার এয়ারপোর্ট সংলগ্ন দক্ষিণখান, উত্তরখান এবং চালাবন এলাকাতে চলবে জ্ঞানের গাড়ির চাকা।
করোনা অতিমারির কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ এবং করোনার ২য় ঢেউয়ের জন্য এখন অনেকটা অনিশ্চিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ কবে খুলবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ ও হারাচ্ছে এবং এটা অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। এর ফলে এই নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুদের শিক্ষাজীবন অনেকটা অনিশ্চিত।
এই অবস্থায় এই বছরের শুরুতে গ্রো ইউর রিডার শুরু করে তাদের জ্ঞানের গাড়ি (WOW – Wheels of Wisdom”) প্রোজেক্ট। এই জ্ঞানের গাড়িটি বই নিয়ে চলে যায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বাড়িতে বাড়িতে এবং শিশুরা সেই গাড়ি থেকে বিনামূল্যে বই সংগ্রহ করে সেগুলো পড়তে পারে। এই প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুরা যাতে স্কুলে যাওয়ার বা পড়াশুনা করার আগ্রহ ধরে রাখতে পারে। বইয়ের সাথে শিশুদের সম্পর্ক যাতে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়।
মূলত গাড়িটি সপ্তাহে ৫ দিন ঢাকার ৩ টি নিম্নআয়ের মানুষদের কমিউনিটিতে বই সরবরাহ করে থাকে এবং একইসাথে করোনা সম্পর্কে ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে।
পুরো পৃথিবীতে ১০ মিলিয়ন শিশুর করোনা অতিমারির প্রভাবে স্কুলে ফিরে না যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ও সেই ঝুঁকির বাইরে নয়। একটি গবেষণায় উঠে এসেছে ৮৪ শতাংশ মানুষ যারা শিক্ষা বিষয়ক উন্নয়ন সংস্থার সাথে যুক্ত এবং শিক্ষকতা পেশায় আছেন তারা মনে করেন করোনা পরবর্তী সময়ে শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহের হার বাড়বে।
কার্যক্রমের উদ্বোধনীতে গ্রো ইউর রিডার পুতুল নাচের আয়োজন করেছে। যার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে করোনা সচেতনতা এবং জ্ঞানের গাড়ি থেকে বই সংগ্রহ করার উপায় জানানো হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হয়েছে এয়ারপোর্ট সংলগ্ন গাওয়াইর এলাকায়।
গ্রো ইউর রিডারের সহপ্রতিষ্ঠাতা সাদিয়া জাফরিন মনে করেন, এই উদ্যোগটি কিছুটা হলেও ওই এলাকার শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার কমাবে এবং শিশুদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা আমিনা আজাদ বলেন, “এই করোনা মহামারির এই অনিশ্চিত সময়ে সবাইকে আমাদের পাশে চাই যাতে এরকম আরো উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করতে পারি”।
ইউর রিডার আগামী মাস থেকে ঢাকার ৪ টি জায়গায় ‘বুক গ্যারেজ’ নামে ৪ টি পথ লাইব্রেরী স্থাপন করতে যাচ্ছে যেখানে মানুষ তাদের পুরানো বই রেখে যেতে পারবে যাতে যাদের বই নেই তারা পড়তে পারে। এই অসাধারন উদ্যোগটির জন্য তারা পুরানো ও নতুন বই সংগ্রহ করছে যেখানে আপনারা চাইলে ও আপনাদের ঘরের কোনে পড়ে থাকা বইগুলো পাঠিয়ে দিতে পারেন Book Garage Event Link এর ঠিকানায়।
গ্রো ইউর রিডার একটি নন প্রফিট অরগানাইজেশন যারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গুণগত শিক্ষা নিয়ে কাজ করে। তারা যাত্রা শুরু করেছে ২০১৬ সালে। এখন মাঠ পর্যায় ছাড়াও অনলাইনে তাদের অনেক ধরনের কার্যক্রম চলছে। তারা করোনাকালীন সময়ে অনলাইন লাইব্রেরির ব্যবস্থা করেছে যাতে শিশুরা ঘরে বসেই বই পড়ার সুযোগ পায়।
ঢাকাটাইমস/৭জুন/এসকেএস