গাইবান্ধায় আরও ১৫০০ পরিবার পেল বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২১, ২৩:১০

লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটেন ৯০ পেরোনো দিপজান বেগম। বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন, ভারী একটা বস্তা। কিন্তু ওটা বহনের শক্তিটুকুও নেই তার। এদিকে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে শত শত হাতে ত্রাণ তুলে দিতে ব্যস্ত কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সদস্যরা। বৃদ্ধার দিকে হঠাৎ চোখ পড়ল শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামানের। এগিয়ে গেলেন তিনি। বস্তাটা এক হাতে আর অন্যহাতে দিপজানকে ধরে সামনে এগোতে থাকেন রিকশার খোঁজে। কিন্তু দিপজানের বাড়ি যাওয়ায় রাস্তা এতটাই খারাপ যে কোনো চালক যেতে রাজি হলেন না। বস্তাটা টেনে বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয় বৃদ্ধার পক্ষে। তাকে তো ছেড়েও দেয়া যায় না। অগত্যা জাকারিয়া হাঁটতেই থাকলেন। এক হাতে ১৬ কেজি ওজনের বস্তা আরেক হাতে বৃদ্ধাকে ধরে পাড়ি দিলেন এক কিলোমিটার পথ। অবশেষে দিপজানের বাড়ি পৌঁছলেন। তারপর একটা চমক অপেক্ষা করছিল জাকারিয়ার জন্যে।

হাত ছেড়ে বৃদ্ধাকে বস্তাটা বুঝিয়ে দিতেই দিপজান তার খুতি (টাকা রাখার থলে) থেকে ২০ টাকা বের করে শুভসংঘ পরিচালকের হাতে ধরিয়ে দেন। মাথায় হাত বুলিয়ে কানে মুখ নিয়ে বললেন, 'বাবা ২০টা টেকা দেই, তুমি চা-বিস্কুট খাইয়ো। আমার বেটাপুত্র নাই। তুমি অনেক কষ্ট করে আমাকে এতদূর নিয়া আইছো। তোমার জন্য দোয়া করি বাবা। আল্লায় তোমাগো শান্তিতে রাখুক।'

করোনায় লেখাপড়া স্থবির হয়ে পড়েছে পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া শিল্পী আক্তারের। বাবা আসতে না পারায় সে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপের উপহারসামগ্রী নিতে। তার বস্তাও ভ্যান পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছেন শুভসংঘের এক সদস্য। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় পেয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছে শিল্পী। হাসিমুখে বলল, আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এটা বাসায় নিয়ে গেলে আম্মু খুশি হবে। আপনাদের জন্য দোয়া করবে।

শুধু দিপজান-শিল্পী নয়, এমন অসংখ্য অসহায়ের কষ্ট লাঘবে নিরন্তর ঘাম ঝরিয়ে যাচ্ছেন শুভসংঘের সদস্যরা। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় খাবারসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের দ্বারে দ্বারে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল গাইবান্ধা জেলায় আরও ১৫০০ অসহায় ও অতিদরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। এসময় সকলের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয় ও করোনা সচেতনামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়।

এদিন সকালে সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়নে ৩০০, সাদুল্যাপুর উপজেলায় ৩০০, সাঘাটা উপজেলায় ৩০০ এবং গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ৩০০ জনকে এই ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়।

ত্রাণ পাওয়াদের একজন রাজু মিয়া। তিনি ঘুরে ঘুরে হাড়িপাতিল বিক্রি করেন। এতেই ঘোরে তার সংসারের চাকা। পরিবারে আছেন বৃদ্ধ মা, স্ত্রী আর এক মেয়ে। করোনার টালমাটাল পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে তার বিক্রি। ফলে পরিবার নিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পরেছে। রাজু বলেন, করোনার পর থেকে দিনগুলো খুব কষ্টে যাচ্ছে। এই সময় আপনাদের সাহায্য পেয়ে খুব উপকার হইল। পরিবার নিয়ে কিছুদিন খাইতে পারব। অনেক ভালো হইলো। আপনাদের জন্য দোয়া করি৷ সুখে থাকেন।

এসময় কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় কালের কন্ঠ শুভসংঘ প্রান্তিক হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা উত্তরবঙ্গের ছয়টি জেলায় ত্রাণসহায়তা দিয়েছি। সামনেও আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আমাদের শুভসংঘের সেচ্ছাসেবীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই কাজগুলো করছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে।

ত্রাণ বিতরণে আরও উপস্থিত ছিলেন কামারজানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির, প্রধান শিক্ষক মো. সবুজ মিয়া, কামারজানীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আসাদ।

এরপর গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলায় ৩০০ অসহায় ও অতিদরিদ্র পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে শুভসংঘ। সাদুল্লাপুর খোদেজা মেমোরিয়াল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এসময় উপস্থিত হয়ে সাদুল্যাপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহরিয়ার খান বিপ্লব বলেন, করোনাকালীন মুহূর্তে খুব সুশৃংখলভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় শুভসংঘের স্বেচ্ছাসেবীরা আমাদের গাইবান্ধা জেলায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন৷ আমার এই উপজেলায়ও আজ তারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শুধু তাই নয় বসুন্ধরা গ্রুপ করোনার রোগীদের জন্যও মেডিকেল তৈরি করেছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান তার কর্মীদের দিয়ে অসহায় মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। আজকে শুভসংঘের সেচ্ছাসেবীরা আমার উপজেলার যেসকল মানুষ ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার যোগ্য তাদেরকেই খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিয়েছেন যা অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। তাই আমি শুভসংঘের বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাই এবং তাদের জন্য দোয়া করি।

আপন বলতে কেউ নেই রোকেয়া বেগমের। বৃদ্ধ বয়সে নিজের কুড়ে ঘরটাই শেষ সম্বল। এক বেলা না খেয়ে থাকলেও দেখতে আসেন না কেউ৷ বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে রোকেয়া বলেন, তোমরা দয়া কইরা যা দিলা তাই খামু বাবা। আমার আর কেউ নাই। তোমাদের জন্য হাজার হাজার দোয়া। তোমাদের ভালো হোক, বসুন্ধরার ভালো হোক।

কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন হাছেন আলী। চলতি মৌসুমে খেতে কোন কাজ পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, "আষাঢ়-শাওন মাসে কাম কাইজ করবার পারি না। অনেক খেত খালি পরে থাকে। তাই কেউ কামে ডাকে না।" বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় পেয়ে তিনি বলেন, "এহন খুব কষ্টে আছি। কোন সাহায্যও পাই নাই। আজকে আপনারা চাল-ডাল-আটা দিলেন। অনেক ধন্যবাদ জানাই। আল্লার কাছে হাজার শুকুর। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিককে ভালো করুক। তারে আরো দেক। আমাদের দেওয়ার মত আরো সামর্থ্য দেক।"

এখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নবী নেওয়াজ শেখ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাদুল্লাপুর উপজেলা শুভসংঘের সভাপতি মোরসালিন রহমান মুন্না, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণ সাহাসহ অন্যান্যদের মধ্যে রওশন আলম, জয় সরকার, সজীব সরকার, মোরশেদ আলম, বাধন সাহা, সাব্বির হোসেন, সিজ্জাত হাসান, শফিকুল ইসলাম, সুমন মিয়া, ওমর ফারুক, মেহেদি হাসান, এনামুল হক, আবদুর রহমান প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :