করোনা উপসর্গে গ্রামে মৃত্যু বাড়লেও নেই সচেতনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০২১, ০৯:০৭| আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২১, ০৯:১৪
অ- অ+

সারাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউন চললেও তাতেও থামছে না সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের পাশাপাশি সংক্রমিতের সংখ্যাটাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। একদিন মৃতের সংখ্যা বেশি হচ্ছে তো অন্যদিন সংক্রমিতের সংখ্যা। চলতি মাসের ২৯ দিনে শনাক্ত ও মৃত্যুতে একাধিকবার রেকর্ড ভেঙেছে। জুলাইয়ের ২৯ দিনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে, যা দেশে মহামারিটি শুরুর দেড় বছরের মধ্যে রেকর্ড। গ্রামাঞ্চলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গ্রামের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে না পারলে সামনে আরও মারাত্মক পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ভাইরাসটি শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্তের কথা জানিয়েছিল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এরপর ভাইরাসটির কখনো ঊর্ধ্বগতি কখনো নিম্নগতি দেখা যায়।

শুরু থেকে শহরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সংক্রমণ দেখা গেলেও গ্রামে তেমন ছিল না। ওই সময় অনেকটা ভালোই ছিল গ্রামাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু চলতি বছর করোনার ভারতীয় ধরন ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়লে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। ফলে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত মৃত্যু এবং সংক্রমণের রেকর্ড হচ্ছে। মেহেরপুরে এক মাসে দুই গ্রামে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনার করোনা ও উপসর্গে। এছাড়া দেশের অনেক জেলায় গ্রামে গ্রামে করোনা উপসর্গে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ গ্রামে বাস করলেও করোনা নিয়ে সচেতনতা না থাকায় গ্রামীণ জনপদের অধিবাসীরা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।

আইইডিসিআরের তথ্যমতে, করোনা শনাক্তের পর থেকে দেড় বছরে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট ২০ হাজার ৪৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ৩০ দিনেই মারা গেছেন চার ভাগের এক ভাগেরও বেশি। এই কয়েক দিনে ৫ হাজার ৯৬৪ মানুষের প্রাণ কেড়েছে অদৃশ্য ভাইরাসটি। শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১২ লাখ ৪০ হাজার ১১৫ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে চলতি মাসের ৩০ দিনেই এই সংখ্যাটা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৭ জন।

হাসপাতালে করোনা পজেটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যারা মারা যাচ্ছেন, শুধুমাত্র সেই সংখ্যাটি নিহতদের তালিকায় উঠলেও গ্রামে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের কারো নাম আসছে না তালিকায়। পরীক্ষা না করে গ্রামে করোনার উপসর্গ নিয়ে যারা মারা যাচ্ছেন সেই সংখ্যাটাও কম নয়। উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা না করায় কিংবা হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ায় তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন কিনা তা জানা যাচ্ছে না।

দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষ সর্দি, জ্বর-কাশি ও গলায় ব্যথায় আক্রান্ত হলেও তাদের বেশিরভাগই নমুনা পরীক্ষা করাতে আগ্রহী নয়। বর্ষার মৌসুম হওয়ায় সাধারণ সর্দি–জ্বর বা কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে ধারণা তাদের। সেজন্য পরীক্ষা না করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেরাই প্যারাসিটামল খাচ্ছেন। যাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তারা হয়তো কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না। সর্দি-কাশি-জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাচ্ছেন বাড়িতেই। আবার অনেকের অবস্থার বেশি খারাপ হলে শেষ মুহূর্তে যখন হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে তখন আরও বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সব এলাকায় পরীক্ষা করানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামে ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কুমারগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা শামসুল ইসলাম। বয়স ৫০ বছরের বেশি। ঈদের দুই দিন পর নিজ বাড়িতে মারা গেছেন তিনি৷ ঈদের একদিন আগে তীব্র শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশিসহ করোনার নানা উপসর্গ দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে আনা হলে দুইদিন পর মারা যান তিনি।

গ্রামের অনেক মানুষের ধারনা বর্ষা মৌসুমে জ্বর, কাশি সবারই হয়। শামসুলও তেমন সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। তাই তার অসুস্থতাকে তেমন গুরুত্ব দেননি তারা।

শুধু শামসুলই নন, ওই গ্রামের আরও অনেকের তীব্র জ্বরসহ নানা উপসর্গ থাকলেও কেউ পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এছাড়া আশপাশের গ্রামগুলোতেও বাড়িতে বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু পরীক্ষা না করায় তারা করোনায় আক্রান্ত কিনা তা জানা যাচ্ছে না।

করোনায় গ্রামাঞ্চলেও যে মানুষ মারা যাচ্ছেন তা জানা গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেয়া তথ্যেও। গত ৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সভা শেষে স্বাস্থ্যের ডিজি আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছিলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের ৫০ শতাংশের বেশি গ্রামের। এসব রোগী রোগের তীব্রতা অনেক বেশি হওয়ার পর হাসপাতালে আসছেন। আক্রান্ত হওয়ার অনেক পরে, যখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে পড়ছে তখন তারা হাসপাতালে আসছেন।

গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথা বললে তাদের অনেকেই করোনাভাইরাস নামে কিছু আছে বলে বিশ্বাসই করছেন না। কেউ আল্লাহর গজব বলে মন্তব্য করলেও আবার কেউ বলছেন করোনা বলতে কিছু নেই। এ নিয়ে অনেকে ব্যঙ্গও করছেন। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করলেও তাদের অনেকের টিকা নেয়ার আগ্রহ নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার অভাবে গ্রামের মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা কম। সেজন্য গ্রামে গ্রামে গণসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঢাকাসহ দেশের ৭ জেলায় ঝড় ও বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস
গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে আজ সারা দেশে এনসিপির বিক্ষোভ
গাজায় ইসরাইলের হামলায় আরও ৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত
কলা খেলেই সুস্থ-সবল থাকবে কিডনি, ওজন কমবে তাড়াতাড়ি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা