দুর্ভোগের আরেক নাম বিশমাইল-জিরাবো সড়ক

ঢাকার সাভারের বিশমাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত রাস্তার বিভিন্ন অংশ চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় জনজীবনে বেড়েছে দুর্ভোগ। দীর্ঘদিন ধরেই পুরো সড়কজুড়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে জমে হাটু পানি। প্রতিদিনই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে উল্টে যাচ্ছে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশাসহ আটকে পড়ছে প্রাইভেটকার ও মালবাহী কাভার্ডভ্যান।
সরেজমিনে বিশ মাইল-জিরাবো সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, কাঠগড়া বাজারের আলম সুপার মার্কেট এলাকায় রাস্তার এমন কোনো জায়গা নেই যেখান দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা যায়। আর সম্পূর্ণ রাস্তায় পানি জমে আরেক দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় মালবাহী ট্রাক ফেঁসে আটকে আছে। ভয়াবহ জ্যামে পিঁপড়ার মতো মন্থর গতিতে সকল যানবাহল চলাচল করছে। সিএনজি, অটো এবং রিকশায় যারা চলাচল করছে, তাদের ভোগান্তি আরও বেশি। প্রতিবেদকের সামনেই একটি অটোরিকশা রাস্তায় পানিতে উলটে যায়। গাড়িটিতে একটি শিশু বাচ্চা ও মহিলাসহ অন্য যাত্রীরা ছিল। দুর্ঘটনায় মহিলার পা ভেঙে যাওয়ায় অন্যরা তাকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার সাথে থাকা শিশু বাচ্চাটিও পানিতে পড়ে যায় এবং কাঁদা দিয়ে সারা শরীর মেখে যায়। এভাবে প্রতিদিনই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশা উল্টে দুর্ঘটনায় পড়ছেন মানুষজন। এছাড়া আমতলা এলাকার বড় গর্তের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ বড় গাড়িগুলো আটকে যাচ্ছে। যে কারণে এই সড়কটি সবসময় যানজট লেগেই থাকে।
একই দৃশ্য চোখে পড়ে সড়কজুড়েই। সড়কটির কাঠগড়া, কাঠগড়া বাজার, পুকুরপাড়, জিরাবোসহ অন্তত ১৫-২০ জায়গায় একই রকম বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। কোথাও কোথাও সড়কের মাঝখানে বিপদজনক স্থানে বাঁশ দিয়ে সতর্কীকরণ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যস্ততম সড়কটির ভাঙা জায়গা গিয়ে একপাশ থেকে গাড়ি এলে অন্য পাশের গাড়িকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এসময় সৃষ্ট যানজট খানাখন্দে জমে থাকা জলজটের কারণে কর্মজীবী লোকজন সময়মতো অফিসে পৌঁছতে পারেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিক প্রামাণিক জানান, এই রাস্তাটি সরকার কয়েক বছর আগে করলেও ড্রেনেজ সিস্টেম না থাকায় এবং গ্যাসের লাইন নিতে গিয়ে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পানি জমে রাস্তার এই বেহাল দশা। আমাদের চলাচলে খুব অসুবিধা হচ্ছে। এক বস্তা চাউল যে বাড়িতে নেব- সে উপায়ও নাই। ৪/৫ কেজি করে চাউল কিনে নিয়ে বাড়ি যেতে হয়। এসব ময়লা পানি মাড়িয়ে প্রতিনিয়ত পেটের তাগিদে কারখানায় আসা-যাওয়া করছে পোশাকশ্রমিকরা। আমরা সরকারের কাছে এই রাস্তার সংস্কারের জন্য আবেদন জানাই।
পোশাকশ্রমিক জিয়াউর রহমান বলেন, আগে ১০ মিনিট সময় নিয়ে বাসা থেকে অফিসে আসতে পারতাম। এখন রাস্তার কারণে বেশি সময় নিয়েও অফিসে সময়মতো আসতে পারি না।
একই কথা জানালেন অপর শ্রমিক শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, দুপুরে খাবার জন্য যে সময় দেয়া হয় তখন অটো না পাওয়ার কারণে কারখানায় পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। এছাড়া অফিস ছুটি হলে পুরুষ-মহিলা সবাই একযোগে বের হয়, তখন ভিড়ের কারনে রাস্তায় থাকা গর্তে পড়ে গিয়ে আহত হয় অনেকেই।
আশুলিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ আলী সরকার ঢাকাটাইমসকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশমাইল-জিরাবো সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত লোকজন আমাদের গালিগালাজ করে। সড়কটি এলজিইডির তত্ত্বাবধানে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের সামান্য অর্থায়নে এতো বড় রাস্তায় কিছুই করা সম্ভব না। এরপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজের নির্বাচনী এলাকায় কিছু ইট ফেলেছি। তারপরেও আর কিছু ইট ফেলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী সময় দিয়েছেন যে কাজ শুরু হবে, তাই ফেলতে পারিনি।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মাদবর বলেন, প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কজুড়েই খানাখন্দের কারণে আমি কয়েকবার রাবিশ ফেললেও তেমন কোন কাজে আসেনি। তবে উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানিয়ে সড়কটি মেরামতের জন্য তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
সাভার উপজেলা পরিষদের প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামানিক ঢাকাটাইমসকে জানান, দীর্ঘদিন ধরেই সড়কটিতে বেহাল দশার কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে সড়কটি মেরামতের জন্য নয় কোটি টাকার একটি ইস্টিমেট করে জেলা অফিসে ফাইল পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি এবং অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলেই দ্রুত সড়কটি মেরামত করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/এলএ)

মন্তব্য করুন