চট্টগ্রাম বন্দরে বিপজ্জনক রাসায়নিক স্তূপ!

হাশেম তালুকদার, চট্টগ্রাম ব্যুরো
  প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:০৭
অ- অ+

গত বছরের ৪ আগস্ট লেবাননের রাজধানী শহর বৈরুত বন্দরে রাসায়নিক বিস্ফোরণে অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু দেখেছে বিশ্ববাসী। এ ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় চার হাজার মানুষ। রাসায়নিক পদার্থের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরও।

সতর্কতার অংশ হিসেবে সাড়ে নয় হাজার কেজি রাসায়নিক পণ্য ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। ইতোমধ্যে পণ্যগুলো ধ্বংস করতে সুনামগঞ্জের ছাতকে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের প্ল্যান্টে পাঠানো হয়েছে।

সারা বছরই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রাসায়নিক পণ্য আমদানি করা হয়। কিন্তু আমদানিকারকরা যথাসময়ে পণ্য খালাস না করার কারণে বন্দরের ‘পি’শেডটি রাসায়নিক পণ্য রাখার গুদামে পরিণত হয়েছে। এদিকে বিপজ্জনক পণ্য চিহ্নিত করার যথাযথ কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যেকোন মুহূর্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা বন্দরে।

আমদানি হওয়া রাসায়নিক পণ্যের গায়ে মূল উপাদানের নাম না লিখে শুধুমাত্র এ পণ্যটি কী কাজে ব্যবহার করা হয় সেটাই লেখা থাকে। রাসায়নিক পণ্যে গায়ে যথাযথ পণ্য চিহ্নিতকরণ লেবেল না থাকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পণ্যটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না।

বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো রাসায়নিক পণ্য আমদানি করে থাকে। চাহিদা কমে গেলে অনেক সময় আমদানিকারকরা পণ্য খালাস না করে ‘পি’শেডেই রেখে দেন। এতে পণ্য জট তৈরি হয়। এসব পণ্য খালাস না হলে অথবা নিলামে বিক্রি না হলে ধ্বংস করে দিতে হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে। এর আগেও বার বার নিলামে তুলে প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারেনি কাস্টমস। তাই বন্দরের ঝুঁকি কমাতে ৩০ লটের আরও নয় হাজার ৪৭৮ কেজি রাসায়নিক পণ্য ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ১৪টি শেড রয়েছে। এর মধ্যে ‘পি’শেডে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরাইড, কস্টিক সোডা, সালফেট, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, রঙ তৈরির কাঁচামাল, এস্ট্রোজেনসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ রাখা হয়। এখান থেকেই রাসায়নিক পণ্যের খালাস দেয়া হয়।

‘পি’ শেডে ৮৩ লটে ৫৮ হাজার ৩৪৮ কেজি রাসায়নিক পণ্য ছিল। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৩ লটে থাকা ৪৮ হাজার ৮৭০ কেজি রাসায়নিক পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। বাকি ৩০ লটের ৯ হাজার ৪৭৮ কেজি রাসায়নিক পণ্য ধ্বংসের জন্য সুনামগঞ্জের ছাতকে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিনিধির নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, বন্দরে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি আয়তনের ‘পি’শেডটিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরাইড, কস্টিক সোডা, সালফেট, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, রঙ তৈরির কাঁচামাল, এস্ট্রোজেনসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ রাখা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের আমদানি করা রাসায়নিক পদার্থের ৯৮ ভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) আলী রেজা হায়দার বলেন, রাসায়নিক পণ্য এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। তার উপর দিনের পর দিন পণ্যগুলো পি শেডে পড়ে থেকে বন্দরের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। আমরা সব সময় চাই বন্দর নিরাপদে থাকুক। তাই আমরা আরও কিছু রাসায়নিক পণ্য ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে পণ্যগুলো বন্দর থেকে সরিয়ে ধ্বংস করার জন্য লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

হায়দার বলেন, রাসায়নিক পণ্য নিলামে উঠলে বিডারদের (ক্রেতাদের) আগ্রহ থাকে। কিন্তু এসব পণ্য কেনার আগে বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি কিছু শর্তও থাকে। তাই ক্রেতারা এসব ঝামেলা পোহাতে চান না, পণ্যগুলোও অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকে। আমাদেরকেও বার বার নিলামের ব্যবস্থা করতে হয়। আমরাও রাসায়নিক পণ্য নিয়ে ঝামেলায় পড়ি।

চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে বিভিন্ন শেড ও ইয়ার্ডে পড়ে আছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পণ্য। বিপজ্জনক হওয়ায় এসব পণ্যের মাধ্যমে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বন্দরে পড়ে থাকা এসব রাসায়নিক পণ্যগুলো পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে বন্দরে ঝুঁকি কমাতে ও জায়গা খালি করতে ১৫২ কেজি সালফিউরিক এসিড, এক ব্যাগ টেক্সটাইল কেমিক্যাল, ৭৬২ ব্যাগ এলুমিনিয়াম পাউডার ও ৮০ ড্রাম সাইক্লো হেক্সানন পণ্য নিলামে তুলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। আগামী ২ ডিসেম্বর এসব পণ্যের নিলাম হওয়ার তারিখ রয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার।

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/কেএম/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান এম জুবায়দুর রহমান
মাইলস্টোনে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা কার্যত অসম্ভব: প্রেস সচিব
সরকার চাইলে আমি চলে যাব, নিজে থেকে পদত্যাগ করব না: শিক্ষা উপদেষ্টা
দগ্ধ ৪৪ জনের চিকিৎসা চলছে, ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক: বার্ন ইনস্টিটিউট পরিচালক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা