ডেল্টা লাইফে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধের রায় স্থগিতের মেয়াদ বাড়ল

নানা কারণে আলোচিত ডেল্টা লাইফ ইনসিওরেন্সে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের স্থগিতাদেশের মেয়াদ আবারো বাড়ানো হয়েছে। ২৩ জানুয়ারি শুনানির দিন রেখে ওই পর্যন্ত স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
রবিবার বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) আবেদনে এই আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
আদালতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী তানজিব উল আলম, মোস্তাফিজুর রহমান খান ও আবুল কালাম আজাদ।
ডেল্টা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের চার সদস্য ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ৬ জানুয়ারি প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে আইডিফআরএ।
গত ১০ জানুয়ারি সে আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে রবিবার শুনানির জন্য রাখেন। সেই সঙ্গে ডেল্টা লাইফ ইনসিওরেন্সের স্বাভাবিক কার্যতক্রমে হস্তক্ষেপ না করতে আইডিআরএকে নির্দেশ দেন।
সেই ধারাবাহিকতায় রবিবার বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য উঠলে আইডিআরএর আবেদনে স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়ে দেন আপিল বিভাগ।
আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, হাইকোর্টের রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি আমরা এখনো পাইনি। তাই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর আরজি জানালে আদালত ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে সেদিন শুনানির জন্য রেখেছেন।
জীবন বিমা তহবিল বাড়িয়ে দেখানো, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ বরখাস্ত করে চার মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয় বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ আনার কয়েক দিন পর ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সাসপেন্ড করে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
আইডিআরএর ওই নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে ডেল্টা লাইফের বরখাস্ত হওয়া পর্ষদ হাইকোর্টে রিট করেছিল। রিটে প্রশাসক নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণার আবেদন করা হয়েছিল।
রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত করে আইডিআরএ যে প্রশাসক নিয়োগ করেছিল হাইকোর্ট তা অবৈধ ঘোষণা করেছে। এর মানে হচ্ছে, এখন থেকে ডেল্টা লাইফের সাসপেন্ড হওয়া পর্ষদ পুনর্বহাল হয়েছে এবং প্রশাসক তার পদ হারিয়েছেন।
এদিকে হাইকোর্টের রায় আসার পর ডেল্টা লাইফের প্রশাসক থেকে ইস্তেফা নেন। একইদিন তৎকালীন পর্ষদের এক সভাও অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ করে ডেল্টা লাইফ। আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষপূর্ণ আচরণেরও’ অভিযোগ আনে প্রতিষ্ঠানটি।
আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। যদিও এ কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। পরবর্তীকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে, যা এখনো চলমান রয়েছে।
ঘুষের অভিযোগ তুলে ডেল্টা লাইফের সংবাদ সম্মেলনের পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির পর্ষদ সাসপেন্ড করে চার মাসের জন্য আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।
এর চার মাস পর দ্বিতীয় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয় সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে। গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে তৃতীয় প্রশাসক নিয়োগ পান বীমা খাতের বাইরের ব্যক্তি আইডিআরের আরেক সাবেক সদস্য (প্রশাসন) মো. কুদ্দুস খান। ডেল্টা লাইফের জীবন তহবিল রয়েছে চার হাজার কোটি টাকার।
সর্বশেষ গত মাসে ডেল্টা লাইফের স্থগিত পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, রাজস্ব ফাঁকি ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিন হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনে আইডিআরএ।
এদিকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে প্রশাসক তুলে নেবে আইডিআরএ। আর সরকার ও এসইসি যৌথভাবে কোম্পানিটির জন্য নতুন একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করবে।
এ ছাড়া আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার করবে ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ। আর ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোও প্রত্যাহার করবে আইডিআরএ।
বর্তমানে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আইডিআরএ ও এর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২১টি মামলা চলমান রয়েছে। আর আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে চারটি। এসব মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
(ঢাকাটাইমস/১৬জানুয়ারি/বিইউ/জেবি)

মন্তব্য করুন