কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মদিন

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:০৮

রূপসী বাংলার কবি বলেই সুপরিচিত জীবনানন্দ দাশ। তার কবিতায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফুটে উঠেছে বাংলার প্রকৃতির বিস্ময়কর সৌন্দর্যের প্রতিটি দিক। উনবিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষে ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন জীবনানন্দ দাশ। সে হিসাবে ২০২২ সালে জীবনানন্দ দাশের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী।

বরিশালের বগুড়া রোডের পৈতৃক নিবাসে তার বেড়ে ওঠা। পড়ালেখা করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে। অধ্যাপনা করেছেন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে। একটা লম্বা সময়ে থেকেছেন কর্মহীন। সেই সময়ে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করা একজন মানুষ চাকরি খুঁজে পাচ্ছে নাই এমন উদহারণ বোধহয় জীবনানন্দ একজনই ছিলেন।

জীবনানন্দের কবিতায় এই না পাওয়ার ব্যাপারটি বারবার ফুটে উঠেছে। যৌবনে পিসতুতো বোনের ভালোবাসা না পাওয়া, বৈবাহিক জীবনে সহধর্মিণী লাবণ্য দাশের কাঙ্ক্ষিত সঙ্গ না পাওয়া, সংসারে সফল পুরুষ হিসেবে স্থান করে নিতে না পারা, তৎকালীন সাহিত্য সমাজে নামজাদা কবিদের তালিকায় জায়গা করে নিতে না পারা, কলকাতায় কবিতার সহজাত উপাদান খুঁজে না পাওয়া ও অবশেষে মাথার ওপরে সূর্যকে রেখে মাঝ সমুদ্রে ডুবে মরতে না পারার প্রতিটি যন্ত্রণাই কবিকে মর্মান্তিক কষ্ট দিলেও তার কবিতাকে করেছে সমৃদ্ধ।

বরিশালের জাহাজঘাটায় দাঁড়িয়ে জীবনানন্দ কল্পনা করেছিলেন তার স্বপ্নের ধানসিঁড়ি নদীকে। লিখেছিলেন সেই অপার আকাঙ্ক্ষার কথা- 'আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়, হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে।' ধানসিঁড়ি নদী, শঙ্খচিল, শালিক, ভোরের কাক, নবান্নের ধান, শীতের কুয়াশা, কাঁঠাল গাছের ছায়া, কলমী শাকের ঘ্রাণ, লক্ষ্মীপেঁচা, শিমুলের ডাল, খৈয়ের ধান এসবের মাঝে ডুবে থেকে জীবনানন্দ ভুলে থাকতে চেয়েছেন তার সব বেদনা। 'রূপসী বাংলা' কাব্যের প্রতিটি কবিতাই যেন এই ব-দ্বীপের অনিন্দ্য কোনো চিত্র যা কেবল জীবনানন্দের মতো কবির পক্ষেই এতটা গভীর এবং স্নিগ্ধভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।

বাংলার প্রেমিক সম্প্রদায়ের কাছে জীবনানন্দ পরিচিতি পেয়েছেন তার বিখ্যাত 'বনলতা সেন' কবিতার মাধ্যমে। এখনো এতটা বছর পরে প্রেমিকার রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে প্রেমিক যখন বলে উঠে- ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য’, তখনই প্রমাণ হয়ে যায় কতটা ধ্রুপদী ছিল জীবনানন্দের লেখা। এ ছাড়া ‘আকাশলীনা’ কবিতায় প্রেমিকের সেই একপাক্ষিক আকুলতা- ‘সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি, বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে; ফিরে এসো সুরঞ্জনা: নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে’, আজও সচেতন বাঙালির মনে নক্ষত্রের মতো জ্বলে আছে।

ব্যক্তিগত জীবনে জীবনানন্দ দাশ অনেকটাই ছিলেন নৈরাশ্যবাদী। দেশভাগের পরে কলকাতা থিতু হয়ে অনেকটা ঝিমিয়ে পরেন জীবনানন্দ দাশ। কসমোপলিটানের বাতাসের মাঝে চিরচেনা বাংলার মাটি-হাওয়াকে মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করেছেন তিনি। জীবনানন্দের মাঝে ছিল আত্মহননের এক তীব্র প্রবণতা। তার সেই বিখ্যাত কবিতা ‘আট বছর আগের একদিন’ এ কবি বোধহয় সেই ভবিষ্যদ্বাণীই করে গিয়েছিলেন- ‘কাল রাতে—ফাল্গুনের রাতের আঁধারে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ, মরিবার হল তার সাধ।'

১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন জীবনানন্দ দাশ। অনেকেই একে বলেন আত্মহত্যা, অনেকেই বলেন দুর্ঘটনা।

জীবনানন্দের জীবনকালে তার কোনো আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হলেও, মৃত্যুর আগ মুহূর্তে কলকাতার শম্ভূনাথ হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কাছের যাকেই পেয়েছেন, তার হাত ধরে জিজ্ঞাসা করেছেন- 'আমি কি আদৌ বাংলা সাহিত্যে এমন কিছু রেখে যেতে পেরেছি, যাতে করে মানুষ আমাকে মনে রাখবে? আদৌ কি আমার লেখা লেখার মতো কিছু হয়েছে?' এমন আকুতি মাখা প্রশ্ন থেকে বোঝা যায়, বাংলার মানুষের মনে জীবনানন্দ কতখানি থাকতে চেয়েছেন। আর অবশেষে পেরেছেনও সেটি তিনি।

জীবনানন্দ দাশের মা কুসুমকুমারী দাশ লিখেছিলেন তার অনবদ্য কবিতা 'আদর্শ ছেলে'। সেই কবিতার লাইন- 'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?' আজও আমাদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। নিভৃতে লুকিয়ে থাকা অন্তর্মুখী কবি জীবনানন্দ দাশ বোধহয় তার মায়ের কবিতার আকাঙ্ক্ষাই পূরণ করে গেছেন। নীরবে করে গেছেন বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ।

(ঢাকাটাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :