আওয়ামী লীগের জন্য এখন দুটি চ্যালেঞ্জ

আয়শা এরিন
| আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২২, ১৯:১১ | প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট ২০২২, ১৭:৫৯

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বলেছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। তিনি বললেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতায় আমরা যেতে পেরেছি। কিন্তু জনশ্রেণি তা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করতে আগ্রহী নয়। তাই মাঝেমাঝে লোডশেডিং এর মত কিছু হলে ভাল হয়। তেমন উদাহরণে না গেলে আমাদের প্রিয় মানুষগুলো ভুলে যায়, এই দেশে বিদ্যুতের জন্য খাম্বা লাগানো হয়, কিন্তু বিদ্যুৎ এর আয়োজন তাঁরা করতে পারে না। বিদ্যুতের জন্য তাই কত একসময় হাহাকার ছিল। আর আমরা তা করার পরেও মানুষ কী তা স্বীকার করে? তাই মনে করিয়ে দেয়া দরকার যে, আওয়ামী লীগের সরকার মানুষের জন্যই লড়ে।’

হালে অবশ্য সত্যিকার অর্থেই লোডশেডিং হচ্ছে। পরিপাটি শৃঙ্খলপন্থায় জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, সারাদেশে কখন কোন এলাকায় লোডশেডিং থাকবে। এমন চিত্র দেখতে পারার মধ্যেও প্রমাণিত সত্য হয়ে ইতিহাস জানান দেয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে গেছে।

অতি সম্প্রতি তিনি নিজেই বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাশুল বৈশ্বিক পরিমন্ডলে প্রভাব রাখছে। বাংলাদেশেও জ্বালানি সংকট থাকছে, তাই একটু কষ্ট করতেই হবে জনগোষ্ঠিকে। ধারণা করা যায়, শেখ হাসিনা তেমন সংকট মোকাবেলা করে পুনরায় বিরামহীন বিদ্যুৎ সরবরাহে সচেষ্ট হবেন।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য আগামী দেড় বছরে দুইটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করার সুযোগ আছে। প্রথমটি, তাদের দলের ২২তম সম্মেলনটি অর্থবহ দৃষ্টান্তে সফল করা। অন্যটি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবেলাকরত নিজেদের জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখা। যদিও চাউর আছে, একজন শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের চেয়েও এখন জনপ্রিয়।

সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে অবগত হওয়া যায় যে, আগামী ডিসেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। আগামী বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ঘিরে ও নির্বাচন কমিশনের নতুন ব্যবস্থাপনার ডাকে কাউন্সিল করাটার বাধ্যতামুলক অনিবার্য দিক তো রয়েছেই। আসন্ন এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতে কি ধরণের জনস্বার্থ রক্ষা করতে চায়, সে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে। এমনিতেই দলটি ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ নিয়ে নিয়ে কাজ করছে বলা জানা যায়।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আসনটি শেখ হাসিনার। তিনি শুধু্ নিজ দলের মধ্যে জনপ্রিয় নন, পুরো বাংলাদেশের জন্য আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। কাজেই সভাপতি পদে পরিবর্তন আসবে না। সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে বলে ধরেই নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে বলে গুঞ্জন আছে।

সাধারণ সম্পাদক পদে এবারের সম্মেলনে নতুন মুখ আসতে পারে। প্রখর ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা, প্রতিপক্ষ শিবিরকে কড়া-মিষ্টি বচনে ঘায়েল করার মজ্জগত অভ্যাস, ঘটনা প্রবাহের সাথে দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা, একজন শেখ হাসিনার চেয়ারের পাশে বসে থাকার যোগ্যতা—এমন সব কিছুতে চোখ রাখলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্লিন ইমেজের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে ছাড়া অন্যদের মধ্যে তা দেখতে যাওয়াটাও বোকামি বলে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। তাঁর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আরেক ক্লিন ইমেজের ড. আব্দুর রাজ্জাক মন্দ নাম নয়। লিটনের মতো তাঁর নামেও বদনাম নেই। কিন্তু, সততা থাকলেই হবে না, সাংগঠনিক দক্ষতার অনন্য গুনে গুণান্বিত হয়েই দেশের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় করে দলের সেনাপতি আবহে নেতৃত্ব দেয়াটা সহজ হবে না, হয় না। তাই আওয়ামী লীগের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ।

খুব খারাপ সময় আসছে, এমন কানাঘুষার আশ্লেষে দেশের মানুষ। সেই খারাপ সময়টি মোকাবেলা করার জন্য নেতাকে মাস্তান হলে তো হবে না। যেকোনো পরিস্থিতিকে শীতল করে স্থিতিশীল বাংলাদেশ করে রাখার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি কার্যত তাই দলিয় নয়, ফলত জাতীয় পদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা।

আওয়ামী লীগের জন্য মুলত দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি হল, জাতীয়তবাদী শক্তির নামে জামায়াতবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিকে মোকাবেলা করা। ওই বলয়ে বাম ধারার কেউ কেউ কিংবা বৈশ্বিক পর্যায়ে ক্ষমতাধর বলে ঘোষণা দেয়া কয়েকজন ব্যক্তিও থাকবেন। এদের কেউ কেউ শ্রেণি-সংগ্রামের লড়াইয়ের কথা বলেন। অথচ, বুর্জোয়া শ্রেণির বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে এক কাপ চা পানের অপেক্ষায় তৃষ্ণার্ত থাকে। সারাদিন গণতন্ত্রের কথা বলতে থেকে নীতিকথার চাদরে ঢেকে রেখে ক্ষণে ক্ষণে তাঁরা নাক উঠিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলতে নির্দেশ দেয়। আবার কেহ কেহ সরাসরি ছাত্র রাজনীতির হার্ডলস পেরিয়ে লন্ডন ভিত্তিক নেতার স্কাইপি-সিগন্যাল বার্তার তথা আদেশের অপেক্ষায় থাকে।

আগস্ট মাস চলছে। আওয়ামী লীগকে পুনরায় বরাবরের মত সতর্ক থাকতে হবে। দু'টো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় হোমওয়ার্ক করতে হবে। দেশে মুলধারার রাজনৈতিক পরাশক্তি হিসাবে তাদের কোন প্রতিপক্ষ না থাকাটাও এক ধরণের উদ্বিগ্ন ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। সঙ্গত যুক্তিতে আওয়ামী লীগের এখন ক্লিন ইমেজের একজন দক্ষ সাধারণ সম্পাদক দরকার, দরকার, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবেলা করা। এছাড়া অপশক্তির সাথেই রয়েছে রাজনীতির বাঁকা পথে আসতে চাওয়া একদল জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠি। আওয়ামী লীগ পারবে তো তা সামাল দিতে?

লেখক: সাংবাদিক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :