বিস্কুটের অজানা রহস্য, নিজেই তৈরি করুন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:৫০ | প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:৪৮

বিস্কুট পছন্দ করেন না এমন মানুষ রীতিমতো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। চা বা কফির আড্ডা মানেই সঙ্গে সুস্বাদু কুকি বা মচমচে বিস্কুট। এদিকে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ক্রমশ পরিবর্তিত হয়েছে বিস্কুটের স্বাদ এবং গঠনের। বর্তমান সময়ে বাজারে বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট আমরা দেখতে পাই। যেগুলো স্বাদের ক্ষেত্রে একে অপরের থেকে আলাদা হয়।

প্রস্তর যুগের শেষ পর্যায়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে চাপা পড়া শস্যের অবস্থা দেখে কেউ কেউ তাকে বিস্কুটের আদি রূপ বলতে চান। তবে বিস্কুট বলতে এখন যা বোঝায়, সেকালের বিস্কুট এমন ছিল না। তবে রুটিকে দুবার সেকে যে রূপ দেয়া হতো তাকে বিস্কুটের আদিরূপ বলা চলে।

বিস্কুট সাধারণত ময়দা-ভিত্তিক এক প্রকার খাদ্য। উত্তর আমেরিকার বাইরে বিস্কুট সাধারণত শক্ত, চেপ্টা এবং ঈস্ট ছাড়াই তৈরি করা হয়ে থাকে। উত্তর আমেরিকায় বিস্কুট নরম হয় এবং ঈস্টযোগে তৈরি করা হয়ে থাকে।

বিস্কুটের ইন্ডাস্ট্রি বিকাশের পেছনে ব্রিটেনের বিস্কুট শিল্পে ইতালিয়ান ও ফ্রেঞ্চ প্রভাব পড়েছিল। কাঁচা ময়দা ব্যবহার না করে ময়দা সিদ্ধ করে ব্যবহার করা হতো। পাশাপাশি বাদামের ব্যবহার বিস্কুটকে সুস্বাদু করে তোলে। বিস্কুট তৈরির উপাদান হিসেবে ডিম ব্যবহার শুরু হয়। ডিম ফেটে নিয়ে ময়দার সঙ্গে মেশানো হলে বিস্কুট তৈরিতে সুবিধা এবং স্বাদ বৃদ্ধি পায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইংরেজিভাষী কানাডার কিছু অংশে "বিস্কুট"কে এক প্রকার কেক হিসাবে বোঝায়, যা কিছুটা বনরুটির মতো হয়ে থাকে। বেকিং পাউডার অথবা বাটার মিল্ক, বেকিং সোডা ব্যবহার করে এগুলো গাঁজানো হয়।

আমরা বিস্কুট খেতে অভ্যস্ত হলেও মার্কিনরা স্বচ্ছন্দ কুকিতে। 'কুকি' আমেরিকান ইংরেজি শব্দ । যা এসেছে ডাচ শব্দ কোয়েকজে থেকে । যার অর্থ ছোট কেক। কুকিজ-এর ব্যাটার ঘন হয়। বাদাম, ওটস, চকোলেট চিপস, কিসমিসের মতো উপাদান থাকায় বেক হতে বেশি সময় লাগে । খেতেও মুচমুচে হয় না।

অন্যদিকে, বিস্কুট শব্দটা ব্রিটিশ । যা এসেছে মিডস ফ্রেঞ্চ শব্দ বিস (মানেই দুবার) এবং ককের (কুক) থেকে । অর্থাত্, বিস্কিট কথার অর্থ যা দুবার সেঁকা হয়েছে। সাধারণত মাখন, ময়দা, চিনি বা লবণ দিয়ে তৈরি হয় বিস্কুট। কুকিজ-এর তুলনায় অনেক পাতলা হয় বিস্কুট।

একদিকে যেমন কুকি তৈরির জন্য নরম ব্যাটার প্রয়োজন, বিস্কুট তৈরি হয় অনেক শক্ত ব্যাটার দিয়ে। কুকি বিস্কিটের তুলনায় ভারী, আবার বিস্কুট কুকি-র তুলনায় মুচমুচে। কুকি-তে বিস্কুটের তুলনায় চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। বিস্কুট দেখতে সাধারণ হয়। কিন্তু কুকি তৈরির সময় গ্লেজিং, ফ্রস্টিং, রয়্যাল আইসিং-এর মতো ডেকরেশন ব্যবহার করা হয়।

রুগীকে অন্যান্য খাবার খেতে বারণ করলেও এক নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের বিস্কুট খেতে বলা হয়। অবশ্য বিস্কুটে অনেক পরিমাণে ক্যালোরি থাকার জন্যে বর্তমানে লো ক্যালোরি যুক্ত বিস্কুট বাজারে পাওয়া যায়।

ক্রিমক্র্যাকার বা মেরি, পারলে জি, বাজারচলতি অধিকাংশ বিস্কুটেই দেখা যায় ছোট ছোট ছিদ্র। এই বিস্কুটগুলোতে কেন এমন ছিদ্র থাকে?

অনেকেই ভাবতে পারেন, এই ফুটোগুলো বিস্কুটের নকশা হিসাবে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। এ কথা অবশ্য পুরোপুরি ভুল নয়। সত্যিই বেশ কিছু বিস্কুটে ছিদ্র করা হয় দেখতে আকর্ষণীয় হবে বলেই। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। বিস্কুটের গায়ে ছিদ্র থাকার পিছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক যুক্তিও।

বিস্কুটের এই ফুটোগুলোকে বলা হয় ডকার ছিদ্র। অধিকাংশ বিস্কুট তৈরিতে ময়দার সঙ্গে চিনি ও নুনের মতো উপাদান মিশিয়ে একটি মণ্ড তৈরি করা হয়। তার পর সেগুলিকে পাতলা করে গড়ে নিয়ে থালার মতো পাত্রে পর পর সাজিয়ে বেক করতে দেওয়া হয়। এই বেক করতে গেলেই অনেক সময়ে মণ্ড ফুলে ওঠা ও তার ভিতরে বাতাসের বুদ্বুদ তৈরি হওয়ার মতো বিড়ম্বনা দেখা দিতে পারে। এই ধরনের বুদ্বুদ বিস্কুটের গঠন নষ্ট করে। ভঙ্গুরও করতে পারে ক্ষেত্র বিশেষে। সে জন্যই ওই ছোট ছোট ছিদ্রের ব্যবস্থা। যাতে বেক করার সময়ে সহজে বায়ু চলাচল করতে পারে ভিতর দিয়ে। বিস্কুট ফেঁপে না যায়।

কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য বিস্কুট তৈরির উপকরণের তারতম্য থাকায় ছিদ্রের প্রয়োজন হয় না। ময়দার পরিমাণ কতটা বা কত ক্ষণ বেক করার প্রয়োজন হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে বিস্কুটে ছিদ্র থাকবে কি না। যেমন, কিছু বিস্কুট ফোলা-ফোলা থাকাই দস্তুর। তাই উপরটা মসৃণ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সেই বিস্কুটগুলিও নিশ্ছিদ্র হয়।

অতিরিক্ত বিস্কুট ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। মার্কিন চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, বিস্কুট মানেই ময়দার ব্যবহার। অতিরিক্ত বিস্কুট খেলে অস্বাভাবিক স্থূলতা, ডায়াবেটিস, এমনকী ক্যানসারের মতো রোগ বাসা বাঁধতে পারে শরীরে।

বিস্কুটে ব্যবহৃত রং, কৃত্রিম ফ্লেভারও ভীষণ ক্ষতিকর। তাই বিস্কুট খাওয়ার আগে আরেকটু ভেবে নিন। কিংবা নিজেই ঘরে স্বাস্থ্যসম্মত উপাদান দিয়ে বিস্কুট তৈরি করে নেন। তবে বিস্কুট মাত্রই পরিত্যাজ্য নয়। ডাইজেস্টিভ জাতীয় বিস্কুটের বেশ কিছু উপকারিতাও আছে। এই বিস্কুট শরীরে অনেকটা এনার্জি এনে দেয়।

চুলায় চকলেট বিস্কুট তৈরি করবেন যেভাবে

চকলেট বিস্কুট অনেকর খুব পছন্দের একটি খাবার। অনেকেই মনে করেন ওভেন ছাড়া বিস্কুট ভাল হয়না, কিন্তু চুলাতেই তৈরি করতে পারবেন বেকারির মত স্বাস্থ্যকর চকলেট বিস্কুট। চলুন জেনে নেওয়া যাক সহজ রেসিপি-

উপকরণ

ময়দা: ১ কাপ

আইসিং সুগার: ১/২ কাপ

কোকো পাউডার: ১/৪ কাপ

বেকিং পাউডার: আধা চা চামচ

বেকিং সোডা: ১ চা চামচ

তেল: প্রয়োজনমতো।

প্রণালি

একটি মিক্সিং পাত্রে ময়দা, আইসিং সুগার, কোকো পাউডার, বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা একটি চালনির সাহায্যে চেলে নিন। এরপর অল্প অল্প করে তেল দিয়ে ডো তৈরি করে নিন। বিস্কুট বেক করার জন্য ছড়ানো ট্রে নিতে হবে। ট্রে-এর উপরে সামান্য তেল ব্রাশ করে একটি কাগজ বিছিয়ে দিন। এবার বিস্কুটের ডো থেকে অল্প করে নিয়ে বিস্কুটের আকৃতি দিন। এবার ট্রেতে বিস্কুটগুলো নিন। এবার চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে তার উপর একটি স্ট্যান্ড দিয়ে ৫ মিনিট প্রিহিট করে নিন। এবার বিস্কুটের ট্রে পাত্রের স্ট্যান্ডের উপরে দিয়ে দিতে হবে। চুলার আঁচ মাঝারি রেখে ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর বিস্কুটগুলো তৈরি হয়ে যাবে। এবার নামিয়ে ঠান্ডা করে এয়ার টাইট বক্সে সংরক্ষণ করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৯ সেপ্টেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :