শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ঢুকছে মিয়ানমারের সিগারেট

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
  প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪২| আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১২:১০
অ- অ+

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকা ও বাজারে শুল্ক ফাঁকি দেয়া বিদেশি সিগারেটে সয়লাব হয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী উপজেলার টেকনাফের একাধিক পয়েন্ট, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে চোরাইপথ দিয়ে সরাসরি নিয়ে আসছে কোটি কোটি টাকার এসব অবৈধ সিগারেট। আর এসব নিম্নমানের সিগারেট ধূমপান করে ধূমপায়ীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অবৈধ সিগারেট প্রবেশের কারণে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সর্বনাশা মাদক ইয়াবা-আইস প্রবেশ অনেকটা কমেছে। সীমান্তে মাঝেমধ্যে ইয়াবা ও আইসের মালিকবিহীন চালান জব্দ হলেও সম্প্রতি দক্ষিণ সীমান্তের প্রায় পয়েন্টে মাদক আনাগোনা চোখে পড়ে না এখন। তবে এখন অবৈধপথে মিয়ানমার থেকে আনা হচ্ছে সিগারেটের চালান। এতে দুইপাড়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। এ কারণে সরকার হারাচ্ছে প্রচুর রাজস্ব। চোরাকারবারিরা কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। বিশেষ করে টেকনাফ ও চট্টগ্রাম বন্দরে মিয়ানমারের সাথে ব্যবসায়ীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি টেকনাফ থানা পুলিশ বিদেশি সিগারেটসহ এক রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছে।

এদিকে বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অলিগলিতে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য দোকানপাট। রোহিঙ্গাদের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে দেশি-বিদেশি নিত্যপণ্য ছাড়াও বার্মিজ সিগারেট। আবার সুযোগ বুঝে এ দোকানিরা ইয়াবা বিক্রি করছে, এমন অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের।

তারা জানান, রোহিঙ্গাদের ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন দোকানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নানা রকম মাদক। ফলে স্থানীয় যুব সমাজ অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়ছে। আর এখন মিয়ানমারের সিগারেটে সয়লাব হয়েছে পুরো জেলা। কক্সবাজার শহরেও মিয়ানমার থেকে আসা ওরিস সিগারেটের প্রচুর চাহিদা বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন সিগারেটের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় অল্প দামে এসব সিগারেট খাচ্ছেন ধূমপায়ীরা।

জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি পথ, উখিয়া ও টেকনাফের নাফনদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে চায়নায় তৈরি বিভিন্ন নমুনার সিগারেটের চালান।

এসবের মধ্যে ওরিস ন্যানো, ওরিস লাইট, ইএসএস লাইট, প্রাইড, মন্ড ছাড়াও রয়েছে চিকন শলার অনেক সিগারেট।

সবশেষ বাংলাদেশের বাজেটে মুল্যবৃদ্ধির চাপে ধূমপায়ীদের মধ্যে আকাল দেখা দিয়েছে। এ সুবাধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক চোরাচালানিরা কম দামে এসব সিগারেট বাজারে ছেড়েছে।

গেল কয়েক মাসের ব্যবধানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৮ এপিবিএন পুলিশ গোপন সংবাদে ক্যাম্পে তল্লাশি করে প্রায় ৫০ লাখ টাকার চোরাই পথে আনা অবৈধ সিগারেট জব্দ করে আইনের কাছে সোপর্দ করেছে এবং র‌্যাব সদস্যরাও কুতুপালং এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সিগারেট ডিলার শাহ জালালের ভাই নাছির উদ্দিনকে ১৪৪৬ কার্টুন সিগারেটসহ আটক করে। এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে অবৈধ সিগারেটের চালান ঘুমধুম কচুবনিয়া ব্রিজ এলাকায় ১৫শ’ প্যাকেট বিদেশি সিগারেটসহ ইমরান নামে এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করে। সবশেষ গত ১৭ নভেম্বর টেকনাফ থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২৭৮ কার্টুন বিদেশি সিগারেট পরিত্যক্ত উদ্ধার করেছে। যার মূল্য ৩ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা।

টেকনাফ থানার (ওসি) আব্দুল হালিম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ভোরে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউপির কাটাখালী এলাকার পূর্বপাড়া জামে মসজিদের সামনে পাকা রাস্তার উপর হতে অভিযান চালিয়ে ৯০ কার্টুন গোল্ডেন ফ্লাওয়ার সিগারেট, ৯০ কার্টুন ওরিস ব্রাউন সিগারেট ও ৯৮ কার্টুন প্যাটরন সিগারেট উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো জানান, মিয়ানমার থেকে অল্প খরচে চোরাইপথে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক চোরাকারবারি বেশ তৎপর। তারা বাংলাদেশের এ বাজারকে টার্গেট করে মিয়ানমারভিত্তিক চোরাচালানির মাধ্যমে এসব অবৈধ সিগারেটের চালান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে আনছে।

সূত্র জানায়, এসব সিগারেট ছাড়াও মিয়ানমারের তৈরি বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ, বিয়ার, ইয়াবা, আইস, বাংলাদেশের সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফের জল ও স্থলপথে। এরপর রোহিঙ্গা শিবিরে মজুদ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর হাতে ধরাও পড়ছে এসব অবৈধ পণ্যের চালান। এই অবৈধ পণ্যের সঙ্গে জড়িত ও হাতেনাতে আটক হয়ে রোহিঙ্গা-স্থানীয়দের অনেকে কারাবন্দিও রয়েছে।

টেকনাফের হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, মিয়ানমারের সিগারেটসহ আরো কিছু অবৈধ পণ্য নিয়ে আসছে একটি অসাধু চক্র। এটা নিয়ে তিনি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা বৈঠকে অনেকবার আলোচনা করেছেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না এসব চক্রের চোরাই কাজ।

উখিয়ার পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বাংলাদেশের প্রায় দোকান-মার্কেটে এখন মিয়ানমারের অবৈধ সিগারেট। দেশীয় ও মিয়ানমারের একটি চোরাকারি চক্র বাংলাদেশের রাজস্ব ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় আনা খুব জরুরি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, ঘুমধুমে বাংলাদেশি সিগারেট কম। মিয়ানমারের সিগারেট দাম কম ও ছোট দেখতে সুন্দর। ধুমপায়ীদের হাতে হাতে এসব সিগারেট দেখা যায়।

টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, সীমান্তে সবসময় টহলে থাকে বিজিবি। এরকম অবৈধ সিগারেটের চালান হাতেনাতে অনেক জব্দ করা হয়েছে। অনেকে কারাগারে রয়েছে এসব মামলায়। বিজিবি সবসময় বদ্ধপরিকর সীমান্ত দিয়ে কোনভাবে যাতে মাদক চোরাচালান আসতে না পারে।

এদিকে কক্সবাজারসহ দেশের যুব সমাজকে বাঁচাতে মাদকের বিস্তৃতি কমাতে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা মনে করেন, সরকার যখন তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদ্যমান আইনের অধিকতর সংশোধনের কথা চিন্তা করছে সেই সময় এসব অবৈধ সিগারেটের প্রবেশের ফলে আইন বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে । কেননা দেশে তামাক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানা বিধি নিষেধ দিয়ে তামাক পণ্য উৎপাদনে নিরুৎসাহী করা হলেও অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা এসব বিদেশি সিগারেটের বিরুদ্ধে লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না।

(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/এলএ/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভা কলোনি থেকে ৯ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার 
বগুড়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ঢাকায় গ্রেপ্তার
শ্রীপুরে পোশাকশ্রমিককে তুলে নিয়ে জঙ্গলে দলবদ্ধ ধর্ষণ, বাধা উপেক্ষা করে মামলা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা