উত্তরণ শিক্ষালয়ে দিনভর আয়োজন, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বেদে পল্লীর শিশুরা
সুবিধাবঞ্চিত বেধে সম্প্রদায়ের একঝাঁক শিশু শিক্ষার্থী। সঙ্গে ছিলেন তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকসহ অন্যান্যরা। সবমিলে প্রায় চারশ’ মানুষের আয়োজন। দুপুরের খাওয়াসহ সারাদিন বিনোদনের নানা আয়োজনে কেটেছে তাদের। এমন আয়োজনে এর আগে কখনো অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়নি এই মানুষদের।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের হলদিয়া ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামে উত্তরণ শিক্ষালয় প্রাঙ্গণে এসব আয়োজন হয়েছে শুক্রবার। এই শিক্ষালয়ের মূল প্রতিষ্ঠান উত্তরণ ফাউন্ডেশন এই আয়োজন করে। সামাজিক এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি) হাবিবুর রহমান। শুক্রবার দিনব্যাপী পিকনিকের এই আয়োজনে ছিল- বিশেষ ভোজ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসি, উল্লাস, দৌড়াদৌড়ি, খেলাধুলা করে আনন্দে মেতে ওঠে। বিস্কুট দৌড়, চেয়ার সিটিং, মোরগ লড়াই, কবিতা আবৃতি, গান পরিবেশনাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শিশুরা। দুপুরে খাবার দেওয়া হয় মোরগ-পোলাও। ছিল সাপের খেলাও। সব মিলিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে পুরো দিন কেটেছে তাদের। এ রকম অনুষ্ঠানে এর আগে কখনো অংশগ্রহণ করেনি বলে জানায় তারা।
উত্তরণ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ও কো-অর্ডিনেটর এম এম মাহাবুব হাসান বলেন, ‘সাভার থেকে এই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত বেধে পল্লীর জনগোষ্ঠী ছাড়াও হিজড়া ও যৌনকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। বেধে পল্লীর শিশুদের পড়াশোনার জন্য ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় আমরা উত্তরণ শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই। আগামীতেও এ ধরনের সমাজকল্যাণমূলক আরো নানা কাজের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ড. এবিএম আসিফ কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা এই শিশুদের খেলায় খেলায় শেখাই যেন তারা পড়াশোনাকে উপভোগ করতে পারে। এতে পড়াশোনাকে তারা অতিরিক্ত চাপ মনে করে না।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি হেডকোয়াটার্সের এডিসি কাজী মাকসুদা লিমা, পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন, নাট্য পরিচালক ইরানী বিশ্বাস ও ফাউন্ডেশনের অন্যান্য সদস্যরা।
বেদেপল্লীতে আলো ছড়াচ্ছে উত্তরণ শিক্ষালয়
উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি) হাবিবুর রহমান। সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করছে তার এই সামাজিক প্রতিষ্ঠান। পিছিয়েপড়া বেদে জনগোষ্ঠীর জন্য আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিগত ‘উত্তরণ কম্পিউটার সেন্টার’ ও ‘উত্তরণ শিক্ষালয়’ নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয় মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ খড়িয়া গ্রামের বেদেপল্লীতে। কম্পিউটার বিষয়ক ব্যবহারিক শিক্ষা দেয় ‘উত্তরণ কম্পিউটার সেন্টার’। আর উত্তরণ শিক্ষালয় থেকে শিশু শ্রেণি থেকে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। যারা পাঠদান করান তাঁরাও বেদে সম্প্রদায়ের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া সন্তান।
যেসব শিশু স্কুলে যায় তাদের প্রতিদিনকার স্কুলের পড়া ও বাড়ির কাজ বা হোমওয়ার্ক ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এই শিক্ষালয় থেকে। আবার যারা এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি, অথচ পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ আছে তাদের এ শিক্ষালয় থেকে পাঠদানে সহযোগিতা করা হয়। এই শিক্ষালয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
কথা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. শাকিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি বেদে সম্প্রদায়েরই একজন। এখন লৌহজং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী। আরো তিনজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বেদে সম্প্রদায়ের সদস্য এ শিক্ষালয়ে পাঠদান করাচ্ছেন। পাঠদানের জন্য উত্তরণ ফাউন্ডেশন আমাদের কিছু সম্মানিও দিচ্ছে।’
(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/এমআই/কেএম)