উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে শেখ হাসিনার নাম চিরভাস্বর হয়ে থাকবে

ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার (সিআইপি)
| আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫৭ | প্রকাশিত : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৯

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান। যিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কান্ডারিসহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তিনি ‘সাউথ সাউথ’ ও ‘সেরেস’ পদকসহ অন্যান্য পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলাদেশে নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য ইউনেস্কো থেকে ‘শান্তির বৃক্ষ (ট্রি অব পিস) অভিধায়ও সিক্ত হন।

শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার খবর পান।

১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাকে তার পথ থেকে একবিন্দু টলাতে পারেনি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বাংলার আকাশে-বাতাসে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। সে সময় গৃহবন্দি করা হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে। দেশে ফিরে আসার পর তিনি ঘোষণা দেন স্বৈরশাসকের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে । সেই লক্ষ্যে তার নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলনের সূচনা হয়। সকল বিরোধীদল স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শরীক হয় যার মূল নেতৃত্বে থাকেন শেখ হসিনা। সফল আন্দোলনে পতন ঘটে স্বৈরশাসকের।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন খেতাব আর সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য পদক, পুরস্কার ও স্বীকৃতির পালক এখন শেখ হাসিনার মুকুটে একের পর এক যুক্ত হচ্ছে।

রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্বনেতা হয়ে ওঠার যে ম্যাজিক তিনি বিশ্বকে দেখিয়েছেন তা এখন উন্নত বিশ্বে শেখ হাসিনা উন্নয়নের রোল মডেলে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ এখন অর্জন করেছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পপূর্ণতা। দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সূচকের প্রবৃদ্ধির ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। একারণেই বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬-২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় স্বর্ণযুগ হিসেবে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নিখুঁত নেতৃত্বে অর্জিত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন চতুর্থাংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। গঠিত হয় মহাজোট সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনেন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে রেকর্ড সৃষ্টি করে তিনি চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন। তার গৃহীত পদক্ষেপে দেশবাসী আজ তার সুফল পাচ্ছে। অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।

এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর কণ্টকাকীর্ণ পিচ্ছিল পথ অতিক্রম করা নীলকণ্ঠির ন্যায় জীবন পাড়ি দিয়ে বিশ্ব নেতৃত্বে আলোকবর্তিকায় রূপ নেওয়ার নাম হলো শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারাভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার তার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ১৯ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় কুচক্রীদের সব মরণফাঁদ ভেদ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তার লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন দৃঢ় অবিচল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে তাঁর যাদুকরি নেতৃত্বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা, নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম নানাবিধ উপাধি দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বার বার বুলেট ও গ্রেনেডের মুখ থেকে বেঁচে ফেরা এক বহ্নিশিখা। তিনি তার জীবনকে বাংলার মেহনতি দুঃখী মানষের কল্যাণে উৎসর্গ করে এগিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ব মানবতার দিকে দুর্বার গতিতে। গণমানুষের কল্যাণই তার রাজনীতির মূল দর্শন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যার পর ১৯৮১ সালের শুরুতে দলের দায়িত্ব নিয়ে দলকে তিনি শুধু চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ই আনেননি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে যেমনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি উদার, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এখন তিনি। শত বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে উন্নয়নের নৌকা সামনে এগিয়ে নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। দেশের যোগাযোগ খাতে নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। রাজধানীতে চালু হয়েছে মেট্রোরেল। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করেছে দেশ, একদিনে ১০০ সেতুর উদ্বোধন, একদিনে ১০০ মহাসড়ক-সড়ক উদ্বোধন, একদিনে ১ কোটি মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনা হয়েছে।

এ চার বছরে বিশ্বে নতুন নজির স্থাপন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার তা হচ্ছে, ২ লাখ ১০ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর প্রদান। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বমঞ্চে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য বড় একটি অর্জন। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রাথমিক স্বীকৃতি দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে সরকার। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতিতে দেশ এরই মধ্যে ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করেছে।

পরিশেষে বলছি, আপন কর্মমহিমায় শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা, হিমাদ্রিশিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কান্ডারি। তার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্ব মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে শেখ হাসিনার নাম চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

লেখক: চেয়ারম্যান, বিবিএস গ্রুপ ও নাহী গ্রুপ। সাবেক ভিপি, সোহরাওয়ার্দী হল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :