যাদের কোনো যোগ্যতা নাই তারাই ট্রল করে: জায়েদ খান
ঢালিউডে আলোচিত চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তিনি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির টানা দুই বারের সাধারণ সম্পাদকও। গেল নির্বাচনেও জিতেছিলেন, তবে উচ্চ আদালতের রায়ে চেয়ারে বসতে পারেননি। নিজের সঙ্গে হওয়া এই অন্যায় নিয়ে সবসময় তিনি সরব। নতুন করে সরব হয়েছেন দেশে হিন্দি সিনেমা মুক্তির বিরুদ্ধে।
সেই বিষয় এবং অভিনেতার ক্যারিয়ারের সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে জায়েদ খানের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস। আলাপচারিতায় ছিলেন লিটন মাহমুদ।
‘পাঠান’ এবং নিপুণ আক্তারের বক্তব্য। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
প্রথমত, নিয়মিত এ ধরণের হাস্যকর কথাবার্তা বলেই যাচ্ছে। যে কিনা ভোটে হেরেও অবৈধভাবে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে আছে তার থেকে এসব কথা অস্বাভাবিক কিছু না। সে নিজের মতো মন্তব্য করে পরে মিটিং ডেকে সবাইকে সেটা বলেছেন। শিল্পী সমিতির কাজ মিটিং ডেকে সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছু করা। সে (নিপুণ) সেটা করছে না। হিন্দি সিনেমা ঢোকানোর চেষ্টা করা মানেই সে আমাদের ইন্ড্রাস্টি ধ্বংসের চেষ্টা করছে।
‘পাঠান’ আমদানির বদলে নিজের সিনেমা ভারতে চালানোর দাবি করেছেন। একসময় তো আপনিই বিদেশি সিনেমার বন্ধে আন্দোলন করেছেন।
আমি এখনো হিন্দি সিনেমার বিপক্ষে। হিন্দি সিনেমা দেশে আসুক আমি চাই না। তবে সাফটা চুক্তির আওতায় ছবি যদি আনতেই হয়, আমাদের ছবিও যথাযথভাবে ভারতে চালাতে হবে। আমাদের অনেক ভালো সিনেমা থাকতে তারা সাফটা চুক্তির মাধ্যমে পুরোনো সিনেমা নেবে। তারপর সেটি কোনো হলেও চালায় না। তাদের ছবি আমাদের এখানে এসে কেন অনেকগুলো হল দখল করবে? এমনটা হবে কেন? সবকিছুতেই আমাদের প্রতি বৈরিতা।
আর বিষয়ে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আমি আসলে আমার বলতে বাংলাদেশের সিনেমার কথা বলেছি। যদি তাদের সিনেমা চালাতে হয় তাহলে আমাদের সিনেমাও তাদের দেশে চালাতে হবে।
বাংলা সিনেমা ভারতে গেলে সে দেশের সিনেমার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে টিকে থাকতে পারবে? আবার বলিউডের সিনেমা বাংলাদেশে আসলে দেশীয় সিনেমার ভবিষ্যৎই বা কী?
কখনোই না, তাদের সঙ্গে আমরা টেক্কা দিতে পারব না। তাদের অনেক বড় ইন্ড্রাস্টি, অনেক বড় বাজেট। তাদের সিনেমা আসলে সমস্ত হলগুলো দখল করে নেবে। বাংলাদেশে যারা ফিল্মের সঙ্গে জড়িত তাদের কী হবে? সেখানে আমাদের সিনেমা টিকবে কী করে? দেশের ইন্ডাস্ট্রি তো ধ্বংস হয়ে যাবে!
প্রতি সপ্তাহেই বাংলাদেশে হলিউডের সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে অথচ সেখানে তো বাংলা সিনেমা যাচ্ছে না। তাহলে বলিউডের সিনেমা মুক্তিতে বাঁধা কেন?
হলিউডের সিনেমা হাতে গোনা কয়েকটি সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাচ্ছে। দেখবেন কোনো সিঙ্গেল স্ক্রিনে সেসব হলমালিকরা হলিউড সিনেমা চালায় না। সাধারণ দর্শক যারা ইংরেজি ভাষার সিনেমা অতোটা বোঝেও না। আর হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশের সঙ্গে রিলেটেড এবং এদের প্রেক্ষাপট যদি সিঙ্গেল স্ক্রিনও দখল করে নেয়, তবে প্রতি সপ্তাহে তাদের সিনেমা আসবে। এতে আমাদের প্রডিউসারদের কী হবে? বাংলাদেশের সিনেমার সঙ্গে জড়িত কলাকুশলীদের কী হবে? আমিতো আমার নিজের চিন্তা করছি না। আমি ইন্ড্রাস্টির চিন্তা করি। আজকে আমি বিদেশি সিনেমা নিয়ে আন্দোলন করছি দেশের সাংস্কৃতিককে ও বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া এফডিসিকে বাঁচানোর জন্য।
অনেকে বলছে, বাইরের সিনেমা চালালে এবং সেসব দেশে বাংলা সিনেমা চললে বাংলা সিনেমার জন্য বিশ্ববাজার তৈরি হবে। এই কথার সঙ্গে কি আপনি একমত?
অনেকে আবেগী হয়ে এসব কথা বলছেন। বাংলা সিনেমার জন্য বিশ্ববাজার তৈরি হবে, এটা ভুল ধারণা। কারণ আমাদের সিনেমার বাজেট থাকে খুবই কম। আমাদের দেশের প্রডিউসাররা তো হাজার কোটি টাকা দিয়ে সিনেমা বানাবে না। যদি কেউ বানায়ও, তারা আমাকে সে সিনেমায় নেবে কেন? বাংলাদেশের শিল্পী নেবে কেন? তারা বলিউড থেকে শিল্পী নেবে। তাদের তখন বাধা থাকবে না। কারণ তারা স্বাভাবিকভাবেই এখানে সিনেমা মুক্তি দিতে পারছে। এতে আমাদের শিল্পী কলাকুশলীরা কিন্তু ধ্বংসের দিকে যাবে। নেপালের দিকে তাকালে এর প্রমাণ মিলবে। সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে হিন্দি সিনেমা চালানো শুরু হয়েছিল। আজ তাদের ইন্ড্রাস্টি ধ্বংসের দিকে।
‘পাঠান’ ও আপনাকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ট্রল করছে।
যাদের কোনো যোগ্যতা নাই তারাই ট্রল করে। যাদের কোনো কাজ নাই, বাসায় ভাত নাই, তারাই এসব করে। ভালো পরিবারের কেউ ট্রল ও সমালোচনা করে না। যাদের তারা ট্রল করছে তাদের ছুঁতে হলে ট্রলকারীদের হাজার বছর সাধনা করতে হবে। বাংলাদেশ ধ্বংস হচ্ছে এদের কারণে। প্রধানমন্ত্রী অভূতপূর্ব উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিচ্ছেন, তারপরও তাকে কিছু মানুষ ট্রল করছে। এরা আসলে দেশদ্রোহী।
কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো একটি মঞ্চে আপনার নাচ ও গান ভেসে বেড়াচ্ছে। এটি কোথায়?
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল হিস্ট্রি (ইতিহাস) বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। ওই ডিপার্টমেন্টের পুনর্মিলনী ছিল টিএসসিতে। সেখানেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। সেখানে গান করেছি। সঙ্গে অনেক নামি শিল্পীরা গান করেছেন, তাদের সঙ্গে পারফর্ম করেছি।
নায়ক না হল জায়েদ খান কী হতেন?
ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল নায়ক হওয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যাররা একদিন সবাইকে জিজ্ঞেস করছিলেন, পড়ালেখা শেষ করে কে কী হতে চাই। সবাই যার যার মতো বলছিল। কেউ এসপি, কেউ জর্জ, কেউ ম্যাজিস্ট্রেট। আমি সেদিন দাঁড়িয়ে বলেছিলাম আমি নায়ক হতে চাই। এমনকি সবাই যখন বিসিএস দেওয়ার চেষ্টা করতো আমি কখনো ফর্মও তুলিনি। আমি এফডিসি গেটে এসে দাড়িয়ে থাকতাম।
মুক্তির অপেক্ষায় থাকা কাজগুলো
‘সোনার চর’, ‘বাহাদুরী’ এবং ‘মুজিব: একটি জাতীর রূপকার সিনেমাগুলো মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এই সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে জায়েদ খানকে সবাই নতুন করে চিনবে।
(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/এজে)