হাতিরঝিলে হাঁস: শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকবে তো? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

পুলক রাজ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩১| আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৩৮
অ- অ+

রাজধানীর হাতিরঝিলের লেকে সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে ৩০০ হাঁস ছাড়া হয়। এমনকি জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে এই হাঁস উপকারে আসবে বলেও দাবি করছে রাজউক। তবে প্রাণিবিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আশঙ্কা রয়েছে শেষ পর্যন্ত এসব হাঁস পরিকল্পনার অভাবে বেঁচে থাকবে কি না।

এর আগে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রাজধানীতে রমনা পার্ক লেক ও খিলগাঁও বটতলা ঝিলে হাঁস অবমুক্ত করেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র। কিন্তু তদারকির অভাবে কয়েক মাসের মাথায় বেশিরভাগ হাঁস চুরি হয়ে যায়। কিছু হাঁস বিভিন্ন রোগে মারা যায়। এখন কয়টা বেঁচে আছে সেই হিসাবও সংশ্লিষ্টদের কাছে নেই। ফলে যে উদ্দেশ্যে হাঁস অবমুক্ত করা হয়েছিল তার সুফল মেলাতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজউকের হাতিরঝিল লেকের পুলিশ প্লাজা সংলগ্ন দ্বীপ থেকে জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে রাজউকের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এবং রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ৩০০ হাঁস অবমুক্ত করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাতিরঝিলে হাঁস যারা ছেড়েছেন তারা তো ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে ছেড়েছেন। যারা হাতিরঝিল লেকে হাঁস ছাড়ছেন তাদের মাথায় নেই বোটের তেল পড়ছে কি না, দূষিত তেল নিষ্কাশন হচ্ছে কি না। আর এটা ম্যানেজ করবার মতো ক্যাপাসিটিও নেই তাদের। আমরা যদি বলি, বোটের তেল নিষ্কাশন হবে, ওটা কালকেই বন্ধ করে দেবো, বোটের মালিকদের জরিমানা করা হবে, সেই জরিমানাটা করবারও কেউ নেই। বোট মালিকরা বলবে, আমার বোট থেকে হাতিরঝিল লেকের পানিতে তেল পড়ছে না। আর আমরা বলব পড়ছে। নিয়ন্ত্রণে আনা এবং দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।’ ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যারা ৩০০ হাঁস হাতিরঝিল লেকে ছাড়লেন তারা অবশ্যই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ছেড়েছেন। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এই উদ্যোগ নিতে গিয়ে যদি ক্ষতি হয় তাহলে না ছাড়লেই হতো। হাঁস পালনের জন্য আমাদের দেশে হাঁসের রাখালও আছে। কিন্তু এই হাঁসগুলো দেখার জন্য কাউকে রাখা হয়েছে কি না সেটাও জানতে হবে। দেখতে হবে নৌকা শুদ্ধভাবে চলছে কি না? হাতির ঝিলে মাছ আছে কি না দেখতে হবে, কারণ মাছ থাকলে হাঁসের বিষ্টা খেয়ে মাছেরও উপকৃত হবে। আর মাছ না থাকলে লেকের ক্ষতি হবে এতগুলো হাঁস ছাড়ার জন্য।’

ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘হাঁস চাষ করতে গেলে দেখতে হবে কতটুকু জমি আছে। সেই অনুযায়ী হাঁস ছাড়া উচিত। বেশি ছাড়লে আবার ক্ষতি আছে। দেখতে হবে খাবারসহ সবকিছু ঠিক আছে কি না?’

তিনি বলেন, ‘হাঁসও তো একটা প্রাণী, আমিও একটা প্রাণী, ওদেরও নাম আছে আমাদেরও নাম আছে। হ্যাঁ ওরা হয়তো আমাদেরকে অন্য নামে দেখে। ওরা আসলে আমাদেরকে বোঝে। না বুঝলে একটা প্রাণী কেন আমাদেরকে দেখে পালাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘হাতিরঝিল লেকে ৩০০ হাঁস লালন-পালান করার মতো রাখাল আছে কি না? ওই ক্যাপাসিটি ওদের আছে কি না? ওই ৩০০ হাঁসের কনফোর্ড জোন আছে কি না? একেবারে গাদাগাদি করে রেখে দিলে তো হলো না। ৩০০ হাঁস অনেক বেশি। সুন্দরের জন্য ১০ থেকে ২০টি হাঁস দিলে চমৎকার লাগবে। ৩০০ হাঁস পালা ও ৩০০ হাঁসের রাখাল যদি ভালোভাবে রাখতে না পারে তাহলে তো আর হলো না। ওদেরও তো আমাদের মতো প্রাণ আছে। দিন শেষে যদি হাঁসগুলো ভালো না থাকে তা হলে তো খুব খারাপ হবে, ওদের প্রতি অত্যাচার হবে। এসব হাঁসের জন্য থাকার খাঁচা দরকার দিন শেষে যেন ভালো থাকে। দেখতেও ভালো লাগবে। প্রতিদিন খাঁচা থেকে বের হচ্ছে আবার দিন শেষে ঢুকে যাচ্ছে। এসব কিছুও দেখা উচিত বলে মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘এসব হাঁসকে ঠিকঠাক মনিটরিং করে রাখতে হবে। ওদের জন্য চিকিৎসকও রাখা দরকার। সঠিক পরিচর্যাও দরকার। ওই প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যা যা দরকার চূড়ান্ত থাকতে হবে। আর সঠিকভাবে যদি ওদের পরিচর্যা না করা হয় হাঁসগুলো মারা যাবে। সঙ্গে প্রজেক্টও ফেইল হবে। টাকাও নষ্ট হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাণিবিদ ড. শেফালী বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘৩০০ হাঁস অনেক বেশি। এরপরও যদি আরও ছাড়া হয় ওই লেক নষ্ট হয়ে যাবে। এই ৩০০ হাঁসের সঠিক পরিচর্যা না থাকলেই লেক নষ্ট হবে। সঙ্গে হাঁস ও মাছ মারা যাবে। বুড়িগঙ্গা নদীর মতো হয়ে যাবে।’

ড. শেফালী বেগম বলেন, ‘হাতিরঝিল লেকে হাঁস লালন-পালন করলে বোট বন্ধ করতে হবে। কারণ বোট চলাচলের জন্য শব্দ আর পানিতে পড়া তেলে এসব হাঁসের প্রচুর ক্ষতি হবে। শুধু হাঁস থাকলে হবে না, মাছও থাকতে হবে। কারণ মাছ না থাকলে হাঁসের বিষ্টা পানিতে পড়বে এবং এই বিষ্টার গ্যাসের কারণে পানি দূষিত হবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন লেকে হাঁস অবমুক্ত করা হয়েছিল। তার সুফল কখনো মেলেনি সঠিক তদারকি ও বিষাক্ত নোংরা পানির কারণে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে এই হাঁস কোনো কাজে আসবে না।’

হাতিরঝিলের প্রকল্প পরিচালক শেখ জিয়াউল হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাতিরঝিল লেকে ৩০০ হাঁস ছাড়ার উদ্দেশ্য আমাদের লেকের জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে ও লেকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। এ জন্যই আমরা এই মহৎ কাজ করেছি এবং এসব হাঁসের সঠিক তদারকির জন্য আমাদের জনবলও রয়েছে। আশা করছি এর সুফল মিলবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫ফেব্রুয়ারি/পিআর/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করলে ভালো হতো: জামায়াত আমির
জামালপুরে মাদ্রাসায় ছাত্রী ভর্তিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে ডিএনসিসির কর বকেয়া ৩০ কোটি টাকা
শহীদ নিজামীর খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ: রফিকুল ইসলাম 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা