শাকিব খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ: মুখ খুললেন পরিচালক আশিকুর রহমান

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ মার্চ ২০২৩, ১৮:৩০

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এর শুটিংকালে এক নারী সহ-প্রযোজককে ধর্ষণ করেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান— গত ১৫ মার্চ এফডিসিতে গিয়ে এমনই অভিযোগ করেন রহমত উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। যিনি নিজেকে ওই ছবিটির প্রযোজক বলে দাবি করেন। তিনি কিং খানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও মিথ্যা আশ্বাসের অভিযোগও তোলেন।

গত কয়েক দিন ধরে এ নিয়ে তুমুল বিতর্কের পর অবশেষে মুখ খুললেন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির পরিচালক আশিকুর রহমান। মঙ্গলবার বিকালে নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লম্বা এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘শাকিব খানের নামে যে অভিযোগগুলো উঠেছে সেগুলো ত্রুটিপূর্ণ ও বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক।

ঢাকাটাইমস পাঠকদের জন্য নির্মাতা আশিকুর রহমানের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘অপারেশন অগ্নিপথ চলচ্চিত্রটি নিয়ে বিগত কয়েকদিনে যথেষ্ট পরিমানে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। এই চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসাবে আমার অবস্থান ও বক্তব্য উপস্থাপন করছি। চিত্রনায়ক শাকিব খানের নামে যে অভিযোগ গুলো এসেছে, সেগুলো ত্রুটিপূর্ণ ও বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক। আমি উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। অভিযোগ করার মাধ্যমে কী লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে এটা অভিযোগকারীর কাছেই পরিষ্কার নয়।’

‘যদি অনৈতিক কোনো কাজ কেউ করে থাকে, তবে তা যে কোনো দেশের আইনে অপরাধযোগ্য। এবং আমাদের সবারই সেটার বিচার চাওয়া উচিত। কিন্তু ঘটনার বদলে টাকা বা অন্য কোনো সুবিধা চাওয়াটা পুরপুরি অগ্রহণযোগ্য। তবে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত যেকোনো অভিযোগকে সত্যি বলা যায় না এবং অপরাধ প্রমাণের দায়িত্ব একমাত্র পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। একটি চলচ্চিত্রের ঘাড়ে বন্দুক রেখে, ব্যাক্তিগত রোষানলের বিষয়ে সমাধান করা অগ্রহণযোগ্য।’

‘শাকিব খান ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুইবার অস্ট্রেলিয়াতে শুটিং করতে আসেন। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ৭-৮ দিনের শুটিং করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ‘সুপার হিরো’ চলচ্চিত্রের শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়াতে আসেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি নাকি পালিয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে, যেটা বাস্তবে কখনো হওয়া সম্ভব না। এই দেশে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসলে, তা খতিয়ে শেষ না দেখা পর্যন্ত তাকে দেশত্যাগ বা প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় না। ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে এই দুই চলচ্চিত্রের সকল কলাকুশলী সম্মান ও আতিথেয়তা সহকারে অস্ট্রেলিয়া আগমন ও ত্যাগ করেন।’

‘২০১৮ সালে শাকিব খান ও অন্যান্য কলাকুশলীরা যখন হোটেল হলিডে ইন-এ অবস্থান করছিলেন, তখন অস্ট্রেলিয়া পুলিশের দুইজন তদন্তকারী কর্মকর্তা তার রুমে যান। প্রায় ২০-৩০ মিনিটের অবস্থান শেষে তারা অন্যান্যদের আরও কিছু সাধারণ প্রশ্ন করে চলে যান। এই ঘটনা ছাড়া শাকিব খানের সাথে পুলিশের আর কোনো ইন্টারেকশন আমার জানা নেই। সেদিনও আমরা ইনডোরে মুভির দুইটা সিকোয়েন্স শুট করি।’

‘তার এক দিন পর আমি, রবিউল রবি ও শাকিব খানের আরেকজন লিগ্যাল প্রতিনিধি কোগরা পুলিশ স্টেশনে যাই, উক্ত ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য। শাকিব খানের প্রতিনিধি পুলিশের সাথে বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে আলাদা একটি রুমে বসেন। প্রায় ১ ঘণ্টার রুদ্ধদার আলোচনা শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাদের জানান, জনাব শাকিব খানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতা তারা পান নাই। তারপর তিনি শাকিব খানের সাথে সরাসরি ফোনে কথা বলেন এবং তাকে কোনো সন্দেহ ছাড়া নিশ্চিন্তে সিডনিতে শুটিং করতে বলেন।’

‘উক্ত ঘটনার পর আমরা আরও দুই সপ্তাহেরও বেশি সিডনিতে শুটিং করি। সফলভাবে শুটিং করার পর ‘সুপারহিরো’ চলচ্চিত্রটি ২০১৮ সালে মুক্তি পায় এবং দর্শকদের মন জয় করে সুপারহিট হয়।’

‘যেকোনো কাজ করার সময় ছোটখাটো অনেক ত্রুটি থাকে। সেগুলোকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করাটা মোটেও সমীচিন নয়। খাবারদাবারসহ যে সকল অনর্থক অভিযোগ এসেছে, সেগুলো আসলে অনভিপ্রেত ও ক্ষুদ্র মানুষিকতার পরিচয় দেয়। শুটিংয়ের বিশাল কর্ম ব্যস্ততার মাঝে সময় পাওয়া কঠিন। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা বিরতিহীন শুটিং করার পর সবারই মূল লক্ষ্য থাকত বিশ্রাম নেওয়া ও পরের দিনের শুটিংয়ের প্রস্তুতি নেয়া।’

‘শাকিব খান এবং আমরা যতক্ষণ একসাথে শুটিং করেছি, কখনও আপত্তিকর কিছু চোখে পড়েনি। এছাড়া কাজের বাইরে কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে আমি কখনো আগ্রহ দেখাইনি। আমি যে কয়বার অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে ব্যক্তিগত ভাবে শুধুমাত্র এই মুভির জন্য গিয়েছি, তার খরচ, এই মুভিতে আমার পারিশ্রমিকের থেকে বেশি। এই মুভিতে কাহিনিকার ও পরিচালক হিসাবে আমি যে সময় ও শ্রম দিয়েছি, তা টাকার অংকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।’

‘অপারেশন অগ্নিপথ’ চলচ্চিত্রটি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ মিলিয়ে শুট করার একটাই কারণ ছিল, সেটা হলো- আমরা অনিন্দ্য সুন্দর একটি দেশকে বাংলাদেশের সিনেমার পর্দায় উপস্থিত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু স্বার্থান্নেষী ও ঈর্ষাকাতর মানুষের কারণে আমরা অসাধারণ একটি গল্প পর্দায় আনতে পারিনি। এই মুভিটি পর্দায় আসলে বাংলা ভাষায় দর্শকরা অসাধারণ একটি স্পাই থ্রিলার উপভোগ করতে পারত।’

‘আমরা সবাই এখনও চাই এই মুভির কাজ শেষ করতে। সময় বলে দেবে, এই চাওয়াটা কতটুকু পাওয়া সম্ভব। তবে, মাত্র ৮ দিনের শুটিং আর দুই মিনিটের টিজারে যে ঘটনার জন্ম দিয়েছে, আমার মনে হয় না বিগত কয়েক বছরে কোন চলচ্চিত্রের এতটা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুভিটি সত্যিকারের অগ্নিপথ পাড়ি দিয়ে একদিন সোনালি পর্দায় মুক্তি পাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

এর আগে গত ১৫ মার্চ এফডিসিতে গিয়ে শাকিব খানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করেন রহমত উল্লাহ। নিজেকে তিনি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির প্রযোজক দাবি করেন। তার অভিযোগ, ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ছবিটির শুটিংয়ে গিয়ে নিজের হোটেল কক্ষে এক নারী সহ-প্রযোজককে ধর্ষণ করেন কিং খান।

তবে শাকিব খানের দাবি, রহমত উল্লাহ ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির প্রযোজক নন। এমনকি, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, সেগুলোর কোনোটাই সত্যি নয়। ওই কথিত প্রযোজকের বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটছেন শাকিব খান। শনিবার রাতে তিনি গিয়েছিলেন গুলশান থানায় রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে।

কিন্তু সেদিন কিং খানের মামলা নেয়নি গুলশান থানা। বরং তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে আদালতে মামলা না করে অভিনেতা রবিবার যান ডিবি কার্যালয়ে। সেখানে অভিযোগ জানান। ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ শাকিব খানকে আশ্বাস দেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

(ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/এলএম/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :