রাজধানীর বাসে ই-টিকিটিং: মেশিনের অবস্থান পকেটে, ভাড়া কার্যকর হাতে

অভিজিত রায় কৌশিক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩৯

রাজধানীর গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে বচসা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে চালু হয়েছে ই-টিকিটিং সেবা। তবে এই সেবা শুধু নামেই। বাস্তবে ই-টিকিটিংব্যবস্থার সুফল পাচ্ছেন না গণপরিবহনে চলাচলকারীরা। নিয়ম অনুযায়ী ই-টিকিটিংয়ের নির্ধারিত ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও মেশিনের কোনো কার্যকর ভূমিকা বাস্তবে চোখে পড়েনি। অধিকাংশ গণপরিবহনে বর্তমানে ই-টিকিটিং মেশিনের অবস্থান হয়েছে চালকের সহকারীর পকেটে। আর ভাড়া আদায় হচ্ছে হাতে হাতে। ফলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও রয়েছে অগণিত। রাজধানীর বিভিন্ন ই-টিকিটিং সেবা চালিত গণপরিবহনে সরেজমিন তদন্তে এই চিত্র উঠে এসেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ই-টিকিটিং চালু হওয়া অধিকাংশ গাড়িতেই সরাসরি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। বিনিময়ে তাদের কোনো টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ টিকিট চাইলেও টিকিট দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন চালকের সহকারী। আবার কেউ কেউ মেশিনের সমস্যা বলেও চালিয়ে দিচ্ছেন। তবে টিকিট না দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে নানান অজুহাতও দেখাচ্ছেন তারা। আর যাত্রীরা অভিযোগ তুলছেন টিকিট দিলে বেশি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই, তাই টিকিট না দিয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছেন তারা।

রাজধানীর শ্যামলী থেকে মতিঝিল যাচ্ছেন আহসান হাবিব। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই দেশে ভালো কোনো কিছুই সম্ভব না। দেশের সবকিছু দিন দিন ডিজিটাল হচ্ছে। সরকার চেষ্টা করছে সবকিছু ডিজিটাল করার। কিন্তু আমরা পাবলিকরা কিছুই মানি না।

এই যাত্রী বলেন, কিছুদিন আগে চালু করা হলো ই-টিকিটিং। কিন্তু এর ব্যবহার কি আছে? প্রথম কয়েকদিন এর ব্যবহার দেখা গেলেও এখন আর নেই। এরা লোক দেখানোর জন্য সঙ্গে মেশিনটা রেখে দেয়। কিন্তু টাকা নেয় হাতে হাতে। কারণ, মেশিনে টাকা নিলে ভাড়া কম আসবে। আর হাতে নিলে তো ভাড়া বেশি নেওয়া যাবে।

অন্য এক যাত্রী তরিকুল ইসলাম। ভাড়া দিয়ে টিকিট না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাড়া দিয়ে টিকিট চাইলেও তারা টিকিট দেয় না। টিকিট চাইলে তারা এমন ভাব করে মনে হয় আমার কথা কিছুই শুনতে পায়নি। শুনেও না শোনার ভান করে। আবার অনেকে ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে যায়।

এদিকে চালকের সহকারীদের অভিযোগ ভিন্ন। তাদের ভাষ্য মতে খুচরা টাকার অভাবে অধিকাংশ যাত্রীর কাছ থেকে দুই-পাঁচ টাকা কম রাখতে হয়। আর টিকিটের মাধ্যমে এই টাকা কম দিলে মালিককে হিসাব দেওয়ার সময় গড়মিল হয়। ফলে নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে এই টাকার ঘাটতি পূরণ করতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রজাপতি পরিবহনের চালকের সহকারী বলেন, মেশিনের মাধ্যমে টিকিটে ভাড়া আদায় করা হলে টাকার গড়মিল হয়। দেখা গেল কারো ভাড়া আসলে ১৩টাকা। কিন্তু তিনি ১০ টাকা দিলেন। তাহলে এখানে তিনি তিন টাকা কম দিলেন। আর টিকিটের মাধ্যমে এই টাকা নিলে মালিককে হিসেব দেওয়ার সময় টাকায় কম পরে। তাই যদি কেউ টিকিট চাই তখন তাকে টিকিট দেওয়া হয়।

গাবতলী থেকে চলাচলকারী ৮ নম্বর পরিবহনের চালকের সহকারীকে ই-টিকিট না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি মেশিনের ঝামেলা হয়েছে বলে জানান।

এছাড়া বেশ কয়েকটি গণপরিবহনে চালকের সহকারীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভাড়া বেশি নিচ্ছে এমন অভিযোগ আমাদের কাছে কম আসে। তবে ই-টিকিটিং (পজ) মেশিন ব্যবহার করে না, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। এগুলো সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার হতে সময় লাগবে আরো। এগুলো নিয়ে আমাদের লোক আছে তারা কাজ করছে। আমাদের টিমগুলো কাজ করছে। সব ঠিক হতে আরও কয়েকমাস সময় লাগবে।

যারা কাজ করছে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, তারা সাধারণত পজ মেশিনগুলো ট্র্যাক করে। ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে কতগুলো মেশিন ব্যাবহার হচ্ছে সেগুলোর ডিলেইলস তথ্য সংগ্রহ করে। যাদের ক্ষেত্রে অভিযোগ থাকে তাদের ক্ষেত্রে পজ মেশিন নিয়ে নেওয়া হয় এবং জরিমানা করা হয়।

পজ মেশিন ব্যাবহার না করায় ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে অনেকের পজ মেশিন নিয়ে নেওয়া হয় এবং জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে গত ১২ নভেম্বর রাজধানীর পরিবাগে গণপরিবহনে ই-টিকিটিং চালুর বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। এ সময় তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ অভিযোগ পেয়ে আসছি। সেগুলো দূর করার পরিবহন মালিক সমিতি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। নানা সময়ে বাস কোম্পানিদের নিয়ে আমরা সভা করেছি। ২১টি সার্কুলার দিয়েছি ও ৯টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেছি।’

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু করা হয় জানিয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, ই-টিকিটিং তদারকরি জন্য পরিবহন মালিক সমিতি একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে। দুজন কর্মকর্তা এটি সমন্বয় করবেন। এছাড়া তিনটি নম্বর দিয়ে হটলাইন করা হয়েছে। সেগুলো হলো ০১৬১৮৯৩৩৫৩১, ০১৬১৮৯৩৬১৮৫ এবং ০১৮৭০১৪৬৪২২।

সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘এসব হটলাইনে অভিযোগ দেওয়া যাবে। সমিতির পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮ জন পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে বিষয়টি দেখবেন। পাশাপাশি কয়েকটি কোম্পানির পক্ষ থেকে তারাও স্পেশাল চেকার রাখবেন।’

এদিকে সব শেষ ১ মার্চ ১৩টি পরিবহন কোম্পানি ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে যাত্রীসেবার আওতায় আনা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বুধবার থেকে সাভার, গাজীপুর, যাত্রাবাড়ী, মদনপুর, আবদুল্লাহপুর ও নতুনবাজার থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ১৩টি প্রতিষ্ঠানের ৯৪৭টি বাসে ই-টিকিটিং সেবা পাবেন যাত্রীরা। এ নিয়ে ই-টিকিটিংয়ের আওতায় এল ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজারের বেশি গাড়ি।

এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিবের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে মোট পাঁচ হাজার ৬৫০টি বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে চলে তিন হাজার ১১৪টি এবং শহরতলীতে চলে দুই হাজার ৩৩৬টি।

(ঢাকাটাইমস/০৭এপ্রিল/কেআর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :