নাফিজ উত্তরার কিশোর আদনান হত্যা মামলার আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:৫৬

২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবিরকে খেলার মাঠে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে প্রতিপক্ষ। চিকিৎসার জন্য তাকে উত্তরা লুবানা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আলোচিত এই হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি ছিলেন নাফিজ মোহাম্মদ আলম। এই নাফিজকে রবিবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তার হেফাজত থেকে বিপুল মাদকদ্রব্য, সিসা সরঞ্জাম এবং পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে র‌্যাবকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন নাফিজ আলম।

রবিবার সন্ধ্যায় নাফিজকে গ্রেপ্তারের পর রাতে তার বাসা থেকে মদ উদ্ধারে কথা জানান গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের সময় নাফিজের বাসা থেকে বিদেশি মদের পূর্ণ, অর্ধেক ও খালি বোতল এবং পুলিশের স্টিকারযুক্ত একটি মোটরবাইক জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় নাফিজের বিরুদ্ধে একটি মাদকের মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

ভাটারা থানা পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বসুন্ধরার ১৪ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এসময় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা আসামি নাফিজ মোহাম্মদ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই নাফিজের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। অভিযানে নাফিজের ফ্ল্যাট থেকে বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের ১৭টি মদের বোতল, নয়টি মদের খালি বোতল, মদের ২২টি বোতলের খালি বক্স, বিদেশি ব্রান্ডের ৩২ ক্যান বিয়ার, দুটি সিসা স্ট্যান্ট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তার ব্যবহৃত পুলিশ লেখা একটি মোটর সাইকেল (রেজি: নম্বর- ঢাকা মেট্রো-ল-৩৪-৩২০৬) জব্দ করা হয়।

এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নাফিজ। সে সময় নাফিজের বাসা থেকে মাদক উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল র‌্যাব। তখন তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তারমধ্যে একটি মাদক এবং অপরটি পর্নোগ্রাফি আইনে এবং আরেকটি বিটিআরসির অধীনে।

আদনান হত্যায় জড়িত নাফিজ

জানা যায়, উত্তরায় ‘গ্যাং-কালচার’ নিয়ে ভয়ঙ্কর ওঠে স্থানীয় কিশোরদের একটি অংশ। ‘নাইন স্টার’, ‘ডিসকো বয়েজ’ ও ‘বিগবস’ নামের গ্রুপে সক্রিয় কিশোররা শুরুতে মূলত পার্টি করা, হর্ন বাজিয়ে প্রচণ্ড গতিতে মোটরসাইকেল চালানো এবং রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করত। এক পর্যায়ে তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। যার সর্বশেষ শিকার উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবির। এ ঘটনায় আদনানের বাবা কবির হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

দুইবছর তদন্তের পর ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ স্কুলছাত্র আদনান হত্যা মামলার ফেসবুক গ্রুপের ২৬ সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দেয় পুলিশ। অপরদিকে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেই অভিযোগপত্রে নাফিজের নাম অপ্রাপ্ত বয়স্কদের তালিকায় তিন নম্বরে ছিল।

মামলায় চার্জশিট দুই ভাগে দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আসামিদের মধ্যে নয়জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। প্রাপ্ত বয়স্কদের বিচার প্রকাশ্য আদালতে ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিচার কিশোর আদালতে হবে। প্রাপ্তবয়স্করা ছিলেন- নাঈমুর রহমান অনিক, শাহরিয়ার বিন সাত্তার, রবিউল ইসলাম ওরফে সিয়াম খান, আক্তারুজ্জামান ছোটন, রবি মৃধা, আরিফুল ইসলাম সোহাগ, বাহাউদ্দিন হাসান শাওন, স্বপন মন্ডল ওরফে পটলা বাবু ও নুরে আলম।

অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ছিলেন- সাফাত জাকির, রায়হান ইসলাম জিহাদ, নাফিজ মোহাম্মদ আলম, খন্দকার মেহরাব হোসেন, সাফিন হোসাইন, মারসাতুল রহমান রাব্বি, জাহিদুল ইসলাম জুইস, হাসিবুল হক শিশির, আল আমিন তুষার, রাজিন আহমেদ হৃদয়, ফখরুল ইসলাম শ্রবণ, শাকিল সরকার, কবির মিয়া ও সাদ বিন সত্তার ডিস্কো সাদ।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/এসএস/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :