রমজানে যাকাত ও ফিতরা প্রদানের গুরুত্ব

ড. মো. শাহজাহান কবীর
| আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৫৮ | প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৩০

রমজান ফার্সি শব্দ। অর্থ হচ্ছে : জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তি রমজানের হক আদায় করে রোজা রাখে আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেন।

হাদীসে বর্ণিত, রাসূলে পাক (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা, মুমিনরা এ মাসে সারা বছরের জন্য ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে।

আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ)

সমাজের অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য রমজানে দান খয়রাত করা, যাকাত প্রদান করা, সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আয-যারিয়াত ও সূরা আল-মা'আরিজে এরশাদ করেন, ‘তাদের সম্পদে বঞ্চিত যাঞ্ছাকারীদের নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে। পাওনাদারের টাকা দিয়ে পাওনাদারকে নিম্নমানের কিছু কিনে দেয়া ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কী হতে পারে?

পবিত্র কুরআনের সূরা আল-ইমরানে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত কল্যাণ পাবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস দান করবে। আর তোমরা যা দান করো আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত।’

ইসলামী শরীয়াহ মতে, সাদকা ও যাকাত এমনভাবে দেয়া উচিত, যা গ্রহীতা স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মুদ্রা বা টাকাই অগ্রগণ্য। কেননা, এর দ্বারা গ্রহণকারী নিজের পছন্দ ও ইচ্ছামতো প্রয়োজন মেটাতে পারেন।

যাকাত, সাদকাতুল ফিতর ও যেকোন ফরজ-ওয়াজিব সদকা, যা নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করতে হয় এবং যেসব শুধুই গরীবের হক, এ ক্ষেত্রে তাদেরকে বলার দরকার নেই যে ‘এটা যাকাত’ বা ফিতরা’। কেননা, এতে গ্রহীতা লজ্জিত, অপমানিত ও সংকোচ বোধ করেন। শুধু ফরজ-ওয়াজিব দান নয় বরং নফল দান-খয়রাতের ক্ষেত্রেও কাউকে অসম্মান করা বা ছোট করার সুযোগ ইসলামে নেই।

মুসলিম উম্মাহর খুশির দিন হিসাবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামক দু’টি দিন নির্ধারিত রয়েছে । ঈদুল ফিতরের খুশির দিনে ধনীদের সাথে গরীবরাও যাতে করে সমানভাবে আনন্দ ও খুশিতে শরীক হতে পারে সেজন্য মুসলিম উম্মাহর বিত্তবান ব্যক্তিগণের উপর যাকাত ও ফিতরার বিধান ফরয করা হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে যাকাত বণ্টনের জন্য ৮টি খাতের উল্লেখ করে সূরা আত-তাওবার ৬০ আয়াতে এরশাদ করেন, “সাদাকাহ হচ্ছে শুধুমাত্র গরীবদের এবং অভাবগ্রস্তদের, আর এই সাদাকাহ আদায়ের জন্য নিযুক্ত কর্মচারীদের এবং দীনের ব্যাপারে যাদের মন রক্ষা করতে অভিপ্রায় হয় তাদের, আর গোলামদের আযাদ করার কাজে এবং কর্জদারদের কর্জে কর্জ পরিশোধে, আর জিহাদে, আর মুসাফিরদের সাহায্যার্থে। এ হুকুম আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়।

হাদিসে বর্ণিত, রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘‘হে মুয়ায! তুমি জানিয়ে দাও আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা ধনী ব্যক্তিদের থেকে নিয়ে দরিদ্র ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’’ (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।

ফিতরাকে ইসলামী শরীয়তে ‘যাকাতুল ফিতর এবং সাদাকাতুল ফিতর’ বলা হয়েছে অর্থাৎ ফিতরের যাকাত বা ফিতরের সাদকা। ফিতর বা ফাতূর বলা হয় সেই আহারকে যা দ্বারা রোযাদার রোযা ভঙ্গ করে ।

হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) যাকাতুল ফিতর হিসাবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-দাস প্রত্যেকের উপর এক ছা খেজুর অথবা এক ছা যব ফরয করেছেন এবং তিনি ঈদের ছালাতের উদ্দেশ্যে লোকেদের বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্য হাদীছে বর্ণিত, হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, ‘আমরা এক ছা’ খাদ্য অথবা এক ছা’ যব অথবা এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ পনির অথবা এক ছা‘ কিছমিছ থেকে যাকাতুল ফিতর বের করতাম’।

অত্র হাদীছে যাকাতুল ফিতর প্রদানের ব্যাপারে বিভিন্ন খাদ্যশস্যের নামসহ সাধারণভাবে ‘ত্বা‘আম’ বা খাদ্যের কথা এসেছে, যা দ্বারা পৃথিবীর ঐ সকল খাদ্যশস্যকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রধান খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। ‘

টাকা দ্বারা ফিতরা আদায়ের রীতি ইসলামের সোনালী যুগে ছিল না। রাসূলে পাক (সা.) ও ছাহাবায়ে কেরাম টাকা দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

রাসূলে পাক (সা.) এর যুগে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা বাজারে চালু থাকা সত্ত্বেও তিনি খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন, আদায় করতে বলেছেন এবং বিভিন্ন শস্যের কথা হাদীছে উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং, খাদ্যশস্য দ্বারা ফিতরা আদায় করাই ইসলামী শরীয়তের বিধান। ব্যক্তি নিজে যা খায়, তা থেকেই ফিতরা আদায়ের মধ্যে অধিক মহববত নিহীত থাকে। যে ব্যক্তি ৫০ টাকা কেজি দরের চাল খায় সে উক্ত মানের চাল এক ছা‘ ফিতরা দিবেন। আর যে ব্যক্তি ৬০ টাকা বা ৭০টাকা কেজি দরের চাল খায় সে উক্ত মানের চাউল এক ছা‘ ফিতরা দিবেন।

হাদীছে বর্ণিত, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূলে পাক (সা.) সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। রমজান শেষে শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ফিতরা আদায়ের অতিউত্তম সময়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :