প্রত্যাশা নতুন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ধারা আরও বেগবান হবে

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
| আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩০ | প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০২

২৪ এপ্রিল বঙ্গভবনের দরবার হলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে শপথ নিয়েছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতি মেয়াদ শেষে উত্তরসূরির কাছে দায়িত্ব অর্পণের নজির রাখলেন। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সামরিক-বেসামরিক আমলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।

একজন সাহসী এবং দৃঢ়প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের জন্ম পাবনায় ১৯৪৯ সালে। ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন প্রত্যক্ষভাবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিবাদী ভূমিকার জন্য গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন তিনি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জড়িত হন আইন পেশায়। ১৯৮২ সালে বিসিএস বিচার ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদে মনোনীত হন। ছাত্রনেতা, সাংবাদিকতা, আইনজীবী, বিচারক, দুদক কমিশনারের বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী মো. সাহাবুদ্দিন যখন যে দায়িত্ব পালন করেছেন, তা নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। দুদকের কমিশনার হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কথিত পদ্মা সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তদন্তে অভিযোগটি মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্য বলে প্রমাণিত হয়। কানাডার কোর্টেও সমর্থিত হয় প্রতিবেদনটি। বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষায় যা অনন্য ভূমিকা পালন করে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন রেকর্ড সময় রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকা মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে।

জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়। এই পদে আর কোনো পক্ষ থেকে কোনো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়নি। ১৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। একক প্রার্থী থাকায় ওই দিনই মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন আয়োজনে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি তাঁর কিছু ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সাধ্যমতো সব কিছুই করবেন তিনি। আমরাও আশা করি, তিনি তাঁর মহতী ইচ্ছা পূরণে সর্বাত্মক সফল হবেন।

বিদায়ি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ইতিহাসে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দীর্ঘতম দায়িত্ব পালনের রেকর্ড গড়েছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমান ইন্তেকাল করলে একই বছরের ২০ মার্চ তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান। পরে ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, সংবিধান অনুয়ায়ী কেউ দুই মেয়াদের (১০ বছর) বেশি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। বিদায়ি রাষ্ট্রপতিকে অশেষ শ্রদ্ধা। আমরা তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

বাংলাদেশে অগ্রযাত্রার যে ধারা সূচিত হয়েছে, আমরা আশা করি নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে সেই ধারা আরো বেগবান হবে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সুস্বাস্থ্য ও কর্মজীবনের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিনকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :