গোপনে মাদকদ্রব্য এনে আকিজের লাখ টাকা জরিমানা, কড়া সতর্ক করে ডিএনসির চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ মে ২০২৩, ১৯:৫২

বিদেশ থেকে অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য মিথাইল অ্যালকোহল (মিথানল) আমদানির দায়ে আকিজ পার্টিকেল বোর্ড লিমিটেডকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরবর্তীতে একই অপরাধ করলে প্রতিষ্ঠানটির মিথানল আমদানির লাইসেন্সের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দিয়ে কড়া সতর্ক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।

সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আকিজ গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ জরিমানার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। তাদেরকে অর্থদণ্ডের টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ১০ এপ্রিল ঢাকা টাইমসে ‘গোপনে মাদকদ্রব্য আনছে আকিজ পার্টিকেলস মিলস’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অগোচরে মিথানল আমদানি ও আমদানি ও ব্যবহারের দায়ে আকিজকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও কড়া সতর্ক করার খবর পাওয়া গেল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মিথানল ‘গ’ শ্রেণির মাদক। লাইসেন্স পাওয়ার আগেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের চোখ ফাঁকি দিয়ে ৫০৮ মেট্রিক টন মিথানল আমদানি করে আকিজ পার্টিকেল বোর্ড লিমিটেড। আর লাইসেন্স পেয়ে সেটির আওতায় ৬ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন মিথানল আমদানির তথ্যও গোপন করে তারা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক তদন্ত প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে আসে।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের প্রধান উপপরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তদন্তে আকিজ পার্টিকেল বোর্ড লিমিটেডের বিরুদ্ধে মিথানল আমদানি লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গের প্রমাণ পাওয়া যায়।’

‘এরপর আকিজকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে আকিজকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে আকিজ এখনও জরিমানার টাকা পরিশোধ করেনি।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তদন্তে ধরা পড়ে আকিজ পার্টিকেলের মিথানল আমদানির নানা কারসাজি। আকিজ পার্টিকেল তাদের সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সে মিথানল আমদানির পরিমাণ (লিমিট) বৃদ্ধির আবেদন করলে নিয়মানুয়ায়ী তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে মিথানল আমদানি ও ব্যবহারের তথ্য গোপন করার বিষয়টি।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের প্রধান উপপরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী প্রথমবার এ ধরণের অপরাধ করলে জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আকিজ পার্টিকেলসকে জরিামানা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় একই অপরাধ করলে বা শর্ত ভঙ্গ করলে লাইসেন্সের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সরকারি এ সংস্থাটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আকিজ পার্টিকেল বরাদ্দকৃত কোটার বাহিরে অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতিত ৬৬২৩ মেট্রিক টন মিথানল আমদানি করেছে, যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২-১৮ এর ৬৩ নং আইন (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গের সামিল।’

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মিথাইল অ্যালকোহল (মিথানল) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ২০১৮ সালে মিথাইল অ্যালকোহল ‘গ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটি একটি তফসিলভুক্ত মাদকদ্রব্য। আমদানি রেকর্ড ও ভাউচার (বিল অব এন্ট্রি) পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে প্রায় ৫০৮ মেট্রিক টন মিথানল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই আমদানি করেছে।

পরবর্তীতে লাইসেন্স পাওয়ার পর নভেম্বর/২০২১ হতে সেপ্টেম্বর/২০২২ পর্যন্ত সর্বমোট ৭ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন মিথানল আমদানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বার্ষিক বরাদ্দকৃত কোটা ২ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। প্রতি কোটায় এককালীন উত্তোলন কোটা ৫০ শতাংশ হিসেবে ১ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন।

অধিদপ্তর থেকে প্রতি কোটায় প্রথমবার মিথানল আমদানির অনুমতি নিলেও পরবর্তীতে তার বরাদ্দকৃত কোটার বাইরে অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতিত ৬ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন মিথানল আমদানি করেছে। যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৬৩ নং আইন (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গের শামিল।

মাদকদ্রব্য আমদানি লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী লাইসেন্সধারী প্রতিবার কোনো মাদকদ্রব্য আমদানির পর অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে রিপোর্ট করার বিধান রয়েছে। উক্ত কর্মকতার ব্যক্তিগত উপস্থিতি ও পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়া কোনো মাদকদ্রব্যের কোনো মোড়ক খুলতে বা বিক্রয় কিংবা উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

তবে আকিজ পার্টিকেল বোর্ড মিলস এসব নিয়মের ধার ধারেনি। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম কোটাসহ পরবর্তী ৬ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন মিথানল আমদানির কোনো তথ্য এবং মোড়ক খোলার সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করেনি।

এ বিষয়ে আকিজ পার্টিকেল বোর্ড মিলসের ম্যানেজার শাহরিয়ার জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পার্টিকেল বোর্ড তৈরীতে মিথানল কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল মিথানল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সার্কুলার মতে মাদকদ্রব্য নয়। সকল সরকারি নিয়ম মেনেই আমদানি করা হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/০২মে/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

মিল্টন সমাদ্দারের কর্মকাণ্ডের দায় তার স্ত্রী এড়াতে পারেন না: ডিবিপ্রধান

‘আইন যেটা চাইবে সেটাই হবে’, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী

অনুমোদনহীন স্টিকার: রাজধানীতে ৩৬৩ গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ট্রাফিক বিভাগের

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকে ডিবিতে ডাকা হয়েছে

ফ্ল্যাটের ভুয়া দলিল মর্টগেজ দিয়ে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক লোন নেয় চক্রটি

কষ্টিপাথরের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে অপহরণ, গ্রেপ্তার ৭

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যা বললেন মিল্টন সমাদ্দার

৭ লাখ টাকার জালনোটসহ কারবারি গ্রেপ্তার

তিন দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার

চুরির টাকায় বান্ধবীকে ফোন উপহার, ঘুরতে যান কক্সবাজার, অতঃপর বিপুল স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :