রিতা-মিতা কি জীবিত আছেন? কেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন না দুই বোন?

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ মে ২০২৩, ১১:২৬ | প্রকাশিত : ১৪ মে ২০২৩, ০৯:২৬

মনে আছে রিতা-মিতার কথা? চিকিৎসক আর প্রকৌশলী এই দুই বোনকে উদ্ধার করা হয়েছিল মিরপুরের একটি বাড়ি থেকে। সে বেশ আগের কথা। পরে সেই বাড়ি পরিচিতি পায় ‘ভূতের বাড়ি’ হিসেবে। এখন কেমন আছেন এই দুই বোন? সন্ধান করেছে ঢাকা টাইমস।

রিতার পুরো নাম আইনুন নাহার। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। মিতার নাম নুরুন নাহার। পেশায় ছিলেন প্রকৌশলী। দুই বোন খবরের শিরোনাম হন প্রায় দেড় যুগ আগে।

মিরপুরের প্রায় ভুতুড়ে একটি বাড়িতে ‘রহস্যময়’ জীবন কাটাচ্ছিলেন দুই বোন। জানাজানির পর ২০০৫ সালের ৭ জুলাই তাদের উদ্ধার করা হয়। সে সময় দেশজুড়ে আলোচনার টপিকে পরিণত হন ‘রহস্যময়’ দুই বোন।

এখন কেমন আছেন রিতা-মিতা? স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন তারা? খোঁজ নিতে ঢাকা টাইমস কথা বলেছে নানা সূত্রে। জানা গেছে, রিতা-মিতা তাদের বড় বোন হেনার তত্ত্বাবধানে তার ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে আছেন। ‘মানসিক অসুস্থতা’ নিয়েই বোনের বাড়ির একটি কক্ষে তাদের দিন কাটে। দেখাশোনা করেন একজন নারী।

উদ্ধার পরবর্তী রিতা-মিতাকে সরকারি-বেসরকারিভাবে চিকিৎসা ও নানা সুযোগ করে দেওয়া হয়। এরপরও কেন তারা ফিরলেন না স্বাভাবিক জীবনে? তাদের বাড়িটিরই বা কী অবস্থা?

রিতা-মিতাকে মিরপুরের ‘ভুতুড়ে বাড়ি’ থেকে উদ্ধার করেছিলেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান। উদ্ধারের পর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রিক বিভাগে তখনকার চিকিৎসক ডা. মুহিত কামালের অধীনে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন রিতা-মিতা।

সরকার রিতাকে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে এবং মিতাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। এরপর কদিন ভালোভাবেই কাজ করেন রিতা-মিতা। এসময় তাদের মিরপুরের বাড়িটি সংস্কার করতে ভাড়া বাসায় উঠেন দুই বোন।

২০১৩ সালে হঠাৎ লাপাত্তা রিতা-মিতা। দিন, সপ্তাহ, মাস তাদের খোঁজ নেই। দুই মাস পর তাদের সন্ধান মেলে বগুড়ার আকবরিয়া হোটেলে। এতদিন সেখানেই অবস্থান করছিলেন তারা।

বগুড়া থেকে উদ্ধারের পর রিতা-মিতাকে বড় বোন কামরুন্নাহার হেনার জিম্মায় দেওয়া হয়। সেই থেকে সেখানেই আছেন। রিতা-মিতাদের মিরপুরের বাড়িটি দেখাশোনা করছেন বড় বোন কামরুন্নাহার হেনা। হেনার সঙ্গে প্রতিবেদক একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি সাড়া দেননি।

এখন যেভাবে দিন কাটে রিতা-মিতার

রিতা-মিতার বর্তমান জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে পেরেছে ঢাকা টাইমস। তারা সারা দিন নিজেরা গল্প করে, গান করে, আড্ডা দিয়ে সময় কাটায়। সময়মতো কাজের মেয়ে খাবার দিয়ে আসে রুমে। তারা সাধারণত ঘর থেকে বের হন না। নিয়মিত নামাজ-কালাম, দোয়া-দরুদ পড়েন। তাদেরকে সার্বক্ষণিক দেখভাল করেন এক নারী গৃহকর্মী।

নিজের নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রিতা-মিতার মিরপুরের এক প্রতিবেশী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ওরা যখন চাকরিতে যোগ দিয়েছিল বা সুস্থ হয়ে বাইরে যেতে শুরু করেছিল, তখন কিছু লোক তাদের দেখে নানা কথা বলত। এসব কথা শুনে তারা ঘাবড়ে যেত। মানসিকভাবে পীড়িত হতো। পরে আস্তে আস্তে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেন তারা।’

কেন স্বাভাবিক জীবন হলো না তাদের

রিতা-মিতা কেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন না প্রশ্ন ছিল জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. বিধান রঞ্জন পোদ্দারের কাছে। দুই বোনকে নিয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি এই মানসিক চিকিৎসক।

তবে ঢাকা টাইমসকে ডা. বিধান রঞ্জন বলেন, ‘ওনারা সিজোফ্রেনিয়া রোগী। এই রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৩০ ভাগ চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে যায়। ৬০ ভাগ রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে থাকেন। আর ১০ ভাগ রোগী ভালো হয় না। তবে নিয়মিত ওষুধ সেবন ও যত্ন নিলে মোটামুটি ভালো না হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্ভব।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এ পরিচালক বলেন, ‘তবে আমার ধারণা রিতা-মিতার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, ওনাদের রোগের শুরুতে দেখাশোনার পর্যাপ্ত লোক ছিল না। তাই তাদের আজকের এই অবস্থা।’

যা বললেন আইনজীবী এলিনা খান

রিতা-মিতার সবশেষ অবস্থা নিয়ে হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট এলিনা খানের কাছে জানতে চেয়েছে ঢাকা টাইমস। এই মানবাধিকার আইনজীবী বলেন, ‘রিতা-মিতার বড় বোন কামরুন্নাহার হেনা ইদানীং ফোন ধরছেন না। ওনারা দুই বোনের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করছেন বলে মনে হচ্ছে না। আর রিতা-মিতাদের বাড়িতে যে দোকনদারকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে তার আচরণও সন্দেহজনক বলে আমার মনে হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪মে/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :