পল্লবীতে প্রকাশ্যে সাহিনকে কুপিয়ে হত্যার দুবছর, মামলার তদন্ত কতদূর?

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ১৫:২৯ | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২৩, ১৪:৩৮

রাজধানীর পল্লবীতে সাত বছরের ছেলের সামনে সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সব আসামিই জামিনে মুক্ত। আদালতে দেওয়া গোয়েন্দা পলিশের অভিযোগপত্রে বাদীর নারাজির পর মামলাটি এখন তদন্ত করছে পিবিআই।

২০২১ সালের ১৬ মে বিকালে পল্লবী ১২ নম্বর সেকশনের ৩১ নম্বর সড়কে সাহিনুদ্দীনকে (৩৪) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন ১৭ মে নিহতের মা আকলিমা বেগম পল্লবী থানায় ২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালকে। মামলার পর তাকে ভৈরবের একটি মাজার থেকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। পাশাপাশি আরও ১৩ আসামি গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এছাড়া মামলার দুই আসামি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

আউয়াল হাভেলি প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এমডি। ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান আউয়াল তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব। ২০১৮ সালে আউয়ালকে তরিকত ফেডারেশন বহিষ্কার করলে পরের বছরই নিজেই দল গঠন করেন আউয়াল।

পল্লবীর উত্তর কালশীর সিরামিক এলাকার বাসিন্দা আকলিমার দুই ছেলের মধ্যে সাহিনুদ্দিন ছোট। বাউনিয়া মৌজার উত্তর কালশীর বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকায় ১০ একর জমি রেখে গেছেন আকলিমার প্রয়াত স্বামী।

মামলায় বাদী আকলিমা অভিযোগ করেছেন, পল্লবীর আলীনগর এলাকায় তাদের প্রায় ১০ একর জমি জবরদখলের পাঁয়তারা করছিল আসামিরা। এর জের ধরেই এম এ আউয়াল তার ভাড়াটে খুনি দিয়ে সাহিনকে খুন করান।

২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন।

অভিযোগপত্রে সুমন বেপারী, মোহাম্মদ তাহের, মো. গোলাম কিবরিয়া খান, মোহাম্মদ মুরাদ, টিটু শেখ ওরফে টিটু, মোহাম্মদ রকি তালুকদার, নূর মোহাম্মদ হাসান, মোহাম্মদ শরীফ, ইকবাল হোসেন, মো. তরিকুল ইসলাম ইমন, তুহিন মিয়া, মো. হারুনুর রশিদ, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক ও ইব্রাহিম সুমনকে আসামি করা হয়।

মামলার বাদী আকলিমা বেগম আদালতে এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দিলে আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশনকে (পিবিআই) পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়। মামলাটির তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক মনির হোসেন।

মামলাটির তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিদর্শক মনির হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই মামলায় সব আসামি বর্তমানে জামিন নিয়ে বাইরে আছেন। এরমধ্যে দুজন আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। আর স্বাক্ষীদের জবানবন্দিসহ নানা কাজ করছি। সব মিলিয়ে মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।’

মামলার এজাহারে আকলিমা বেগম উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন সুমন ও টিটু নামের দুই যুবক তার ছেলেকে জমির বিরোধ মেটানো হবে জানিয়ে ফোন করে ডেকে নেন। এসময় তার সাতবছরের ছেলে মাশরাফিকে মোটরসাইকেলে নিয়ে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে গেলে সুমন ও টিটুসহ ১৪-১৫ জন মিলে তাকে টেনেহিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যায়।

পরে গ্যারেজে ঢুকিয়ে সাহিনকে চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এরপর তাকে ওই গ্যারেজ থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে আবার কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই সাহিনুদ্দিনের মৃত্যু হয়। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত মনির ও মানিক নামে দুই জন র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।

জমির দালাল থেকে যেভাবে উত্থান আউয়ালের

রাজনৈতিক ক্ষমতা আর নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীর দাপটে কোনো কিছুই পরোয়া করতেন না এম এ আউয়াল। জাল-জালিয়াতি, ভূমি দখল ও প্রতারণায় সব সময় বেপরোয়া ছিলেন তিনি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তা আরও বেড়ে যায় বহু গুণ। বাড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় তার মাস্তানিও। বাড়তে থাকে দখল ও হামলার দৌরাত্ম্য।

একসময় কিছুই ছিল না যার, সেই আউয়ালের উত্থান জমির দালালি দিয়ে শুরু। এরপর দখল-জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছেন বিপুল অর্থের মালিক। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরপুরের পল্লবী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন সাবেক এই এমপি। সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা তার নেশা হয়ে গিয়েছিল।

জমি দখলে নিতে হত্যায় জড়ান আউয়াল

পৈতৃকসূত্রে মিরপুর সিরামিকসের ভেতরে এক বিঘার বেশি পরিমাণ জমির মালিক ছিলেন নিহত সাহিনের দাদা। পরবর্তী সময়ে এর মালিক হন তার বাবা জৈনুদ্দিন। তার মৃত্যুর পর সাহিনেরা (দুই ভাই) জমি দেখভাল করছিলেন।

আউয়ালের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেড’ কম টাকায় এই জমি কিনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় সাহিনের দুই ভাইয়ের নামে চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, মাদক মামলা দেওয়া হয়। জমির দখল নিতে আউয়াল এসব কিছু করেন বলে বলে সাহিনের পরিবারের অভিযোগ।

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :