অদম্য বিপ্লব গরুর খামার করে স্বাবলম্বী

শাহাদৎ হোসেন, শেরপুর (বগুড়া)
 | প্রকাশিত : ১৮ মে ২০২৩, ১৩:১৯

শারীরিক প্রতিবন্ধী বিপ্লব, তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি কাজে লাগিয়ে সকল বাধা ডিঙিয়ে সফল হয়েছেন। প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মানোর প্রতিবন্ধকতা জয় করেছেন। গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বগুড়ার শেরপুরের অদম্য বিপ্লব হোসেন।

গবাদি প্রাণী পালন করে নিজে স্বচ্ছল হয়েছেন, পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করেছেন। সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি মাজের বোঝা নন।

বিপ্লব বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের জয়নগর মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হক প্রামানিকের ছেলে। তিনি শেরপুর উপজেলার রহিমা নওশের আলী ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। জন্মগতভাবেই বিপ্লব প্রতিবন্ধী। দুই পা ও দুই হাত পুরোপুরি বিকলাঙ্গ। হাটুতে ভর করে হাটেন, কোন কিছু ধরতে দুই হাতই ব্যবহার করতে হয় তাকে।

বিপ্লব ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রতিবন্ধী জীবন অনেক কষ্টের। এক সময় হতাশায় থাকলেও সেই হতাশা মুছে গেছে। ছোট বেলা থেকে পড়ালেখা করার ইচ্ছে ছিল। তাই বাবা মাকে বলি স্কুলে যাব। আগ্রহ দেখে তারা স্কুলে ভর্তি করায়। আজ স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ডিগ্রীতে পড়ছি।

তিনি জানান, গত ৫ বছর আগে তার বাবার কাছে থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে একটি বকনা গরু কিনেন। এরপর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করে দেন গবাদি পশু পালন। এক সময় তার বাবার কিনে দেওয়া গরুটি বাচ্চ প্রসব করে। এরপর বাচ্চাটির বয়স ৫ মাস হতেই তিনি সেটি বিক্রি করে দেন। গরুর বাছুর বিক্রির টাকায় তিনি একটি ছাগল কিনেন। এরপরই শুরু হয় তার স্বপ্ন দেখা, তা বাস্তবায়নও করেছেন। বর্তমানে বিপ্লবের খামারে দুটি গাভী গরু ও একটি বাছুর রয়েছে। এছাড়া ছাগল রয়েছে ৪টি।

গবাদি পশু পালনে বিপ্লবের বাবা তাকে সহযোগিতা করেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাবা আমাকে সাহায্য করেন। গরু নিয়ে মাঠে যান, ঘাস কেটে দেন, খড় কেটে দেন। আমিও মাঠে যাই। গরু ছাগলকে খাওয়াই।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে কোনও সহযোগিতা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোনও প্রয়োজন হলে আমি সেখানে যাই। তারা আমাকে পরামর্শ দেয়। ওষুধ দেয়। আমাকে একটা প্রকল্পের আওতায় খামার বড় করার কথাও বলেছেন।

বিপ্লবের বাবা ফজলুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ছেলে জন্ম নেবার পর ওকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকতাম। কিন্তু সেই দুশ্চিন্তায় এখন আর নেই। ও খামার করেছে। এখন দেখি আল্লাহ তার কপালে কী রেখেছে।

শেরপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিপ্লব একজন প্রাণী সম্পদ উদ্যোক্তা। ইতোমধ্যে আমরা বিপ্লবকে একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করেছি। প্রকল্পে যেসব সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেগুলো সে পাচ্ছে। বিপ্লবের যে খামার রয়েছে সেটা বর্ধিত করার জন্য আমরা তাকে একটি প্রত্যয়ন দিয়েছি। ব্যাংকে অনুরোধ জানিয়েছি যাতে যেন স্বল্প লাভে ঋণ দেয়।

আরও পড়ুন: চার দিনের সফর শেষে পাবনা ছাড়লেন রাষ্ট্রপতি

তিনি বলেন, শুধুমাত্র বিপ্লব নন শেরপুর উপজেলায় বিপ্লবের মতো আরও প্রায় ১০০ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন যারা প্রাণী সম্পদের উদ্যোক্তা। যাদের ডাটাবেস তৈরি করা হয়েছে। তাদেরকে প্রতিনিয়ত উপজেলা প্রাণী সম্পদের পক্ষ থেকে অনুপ্রেরণা, কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :