ঢাবিতে ৪ ছাত্রকে মারধর করে হলছাড়া করার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলের চার শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধরের পর জোরপূর্বক মুচলেকা নিয়ে হলছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের হল শাখার নেতাদের বিরুদ্ধে।

বুধবার বেলা ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই চার শিক্ষার্থী।

তারা হলেন– ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আলম বাদশা, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী লুৎফুর রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আল আমীন ও একই সেশনের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল বেলা ৩টার দিকে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের নেতৃত্বে তাদেরকে কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর, জেরা ও টর্চার শেষে ‘জোরপূর্বক মুচলেকা’ নিয়ে হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

অভিযুক্ত বাকি ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি,আব্দুল আহাদ, আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব ও উপ আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা।

জানা যায়, ছাত্রত্ব শেষ হওয়া এক শিক্ষার্থীকে ৫৩২ নং রুম থেকে বের করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওই চার শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়।

মারধর শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী আলম বাদশা আলম বলেন, হলের ২০১৩-১৪ সেশনের অবৈধ ছাত্র সুমন আহমেদের মিথ্যা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান আমাদেরকে গতকাল বিকাল ৩টায় তার রুমে ডেকে আনে। এরপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সিয়াম ও তার সহযোগী আহাদ, হামিদ কারজাই মিলে আমাদের ফোন চেক করে এবং ফেসবুকে ডিটেইলস দেখে। কিন্তু কিছুই অনৈতিক কোনো তথ্য পায় নাই। এরপর আমাদের সবাইকে ৩-৪ ঘন্টা ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। স্ট্যাম্প দিয়ে পিঠে এবং পায়ে প্রচণ্ড আঘাত করে। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।

তিনি বলেন, এরপর সিয়াম রহমান আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক সরকার বিরোধী মুচলেকা নেয় যে, আমরা বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত নই। আমি রুমের বড় ভাইকে অন্যায় ভাবে বের করেছি এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে একমত না এরকম পোস্ট দিয়েছি এটা হলের বড়ভাইরা জানার পর হল থেকে বের করে দেয়। আমি সজ্ঞানে হল থেকে বের হয়ে যাচ্ছি এটা লিখে নেয়। মুচলেকা নেয়ার পর রাত ৮টার পর আমাদেরকে ছেড়ে দেয়। এরপর থেকে আমরা হলের বাইরে আছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিয়াম রহমান বলেন, ছাত্রলীগের নাম করে জোরপূর্বক একজনকে বের করে দিতে চাইলে আমি তাদের রুমে ডেকে কথা বলি। কেন ছাত্রলীগের নাম করে বের করে দিচ্ছে এবং বিভিন্ন সময় হলে মেহমান নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাই। পরে তাদের ফেসবুকে পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যঙ্গ করে পোস্ট দেখা যায়। আমি শুধুমাত্র একটা থাপ্পড় দিয়েছি শাসন করে। এর বাইরে কেউ হাত তুলেনি।

জোরপূর্বক মুচলেকার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদেরকে আমি নিজেই হলে তুলেছি। তাদের মধ্যে তিন জন পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যঙ্গ করার কারণে নিজ থেকেই হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলে। যাতে পুলিশি ঝামেলা বা কোনো ধরনের মারধরের শিকার না হয়। পরে স্বেচ্ছায় তারা লিখিত দেয় যে তাদেরকে আমরা বের করে দিই নাই। কিন্তু এখন তারা আমাদের নামে প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই চার শিক্ষার্থী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল কতৃপক্ষ। কমিটির সদস্যরা হলেন– আবাসিক শিক্ষক সহীদ কাজী, মাহমুদুল হাসান ও সহকারী আবাসিক শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম।

সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪মে/এসকে)