আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট করিনি, তাদের সব পরামর্শ আমলে নেওয়া হয়নি: অর্থমন্ত্রী

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যেসব পরামর্শ দিয়েছিল তার সবগুলো আমলে নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট করিনি। আইএমএফ যতগুলো পরামর্শ দিয়েছে বাজেট প্রণয়নে সবগুলো আমলে নেওয়া হয়নি।

শুক্রবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে মন্ত্রী একথা বলেন।

ছয়জন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে আগামী অর্থবছরের বাজেট করা হয়েছে— বিএনপিসহ বাজেট নিয়ে সমালোচনাকারীদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশনে বাজেট করিনি। যতটুকু পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেছি ততটুকু করেছি। তাদের পরামর্শের যেটুকু গ্রহণ করা যায় সেটুকু করবো। সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

আইএমএফ নিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইএমএফ আমাদেরকে কখনও কখনও এসে দেখে। শুধু আমরা না, আইএমএফের সাথে যারা সম্পৃক্ত, সবাইকেই দেখে। ব্যালেন্স শিট ঠিক আছে কি না, রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট ঠিক আছে কি না, ইনকাম-এক্সপেনডিচার ঠিক আছে কি না..এগুলোতে দেখে। এই দেখাটা ভালো। আইএমএফের সাথে যারা কাজ করে, আমি মনে করি যে, এটা একটা ভালো দিক। ভালো দিক এই জন্য বলব যে, তারা শুধুমাত্র অর্থ দিয়ে…অর্থ দেয়া মানে লোন দেয়া; লোন দিয়েই সাহায্য করে না, পাশাপাশি কিছু প্রজেক্টও সাজেস্ট করে।

তিনি বলেন, আইএফএমের শর্ত আছে সবার থেকে কর নিতে হবে। মধ্য আয়ের মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু তারা কেউই কর দেয় না। তারা কর দিলে চাপ কমত।

আরও পড়ুন> এবারও বাজেট বাস্তবায়নে সফল হবে সরকার: অর্থমন্ত্রী

৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হবে না মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, বর্তমান সরকার বিগত বাজেটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছে। ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। এবারও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব। এবারও বাজেট বাস্তবায়নে সফল হবে সরকার।

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রথমবারের মতো আয়কর রিটার্ন পেতেও ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা টিএনআই খোলে তাদের কর দেওয়ার সামর্থ্য আছে। কর দিতে না চাওয়ার মানসিকতা থেকে জাতিকে বের হতে হবে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আপনারাই আগে বলতেন এ দেশে মিডিল ইনকাম জনসংখ্যার হার বেশি, কিন্তু তারা ট্যাক্স দেয় না। এরা সবাই যদি ট্যাক্স দিতে তাহলে অন্যদের ভাগে কম ট্যাক্স দিতে হত। আমি মনে করি, এখন সময় এসেছে সবাইকে ট্যাক্স পেমেন্ট করতে হবে।

বাজেটে এবার রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন মন্ত্রী।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সরকার যখন প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন এনবিআর রাজস্ব ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটা ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যদি ৫৯ হাজার কোটি টাকা থেকে এখন যদি তিন লাখ কোটি টাকাতে যায়, যেটুকুন বাড়তি বলছেন, এটা আমরা অর্জন করতে পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রজেকশন যেগুলো আছে, আমরা ফুলফিল করতে পারব।’

মানুষের কর্মদক্ষতা ও দায়বদ্ধতার ওপর ভর করেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছুর মূলে হচ্ছে এ দেশের মানুষ, জনগোষ্ঠী। তাদের কর্মদক্ষতা, দেশের প্রতি তাদের মায়ামমতা, মানুষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা। এটা অসাধারণ এক উদাহরণ আমি মনে করি। সেজন্য আমার বড় বিশ্বাস, আপনার মতো করে আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের পরাজয় নেই। ইনশাআল্লাহ, আমরা বিজয়ী হবই হব।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, মন্ত্রিপরিষদসচিব মো: মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/০২জুন/ইএস)