ডিআইজি মোল্যা নজরুল পরিবর্তনের কারিগর, যে কারণে অনুসরণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৪ জুন ২০২৩, ১১:৪৪ | প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২৩, ০৮:৫৪

গাজীপুরের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মহাসড়কই ছিল ভয়াবহ যানজটের কবলে। ভুক্তভোগী মাত্রই দুঃসহ সেই যন্ত্রণার কথা জানেন। তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে এই দুঃসহ অবস্থা লাঘব হয়েছে অনেকাংশেই। যার জোরালো ভূমিকায় এই অবস্থার পরিবর্তন এসেছে, তিনি হলেন জিএমপির সদ্য বিদায়ী কমিশনার পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম।

কেবল গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশই নয়, পুলিশের এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দায়িত্ব নিয়ে যখন যেখানে গেছেন দেখিয়েছেন সাফল্য, সহকর্মীদের কাছে হয়েছেন অনুসরণীয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তা মোল্যা নজরুল ধরেছেন সৌদি নাগরিক হত্যার ক্লু, মুদ্রা পাচার, প্রশ্ন ফাঁসসহ বড় অপরাধী চক্র, উদঘাটন করেছেন বেশ কিছু আলোচিত ঘটনাও।

‘মোল্যা নজরুল ইসলাম শুধুই একজন পুলিশ অফিসারই নন, পরিবর্তনের কারিগরও। একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কতটা উন্নয়ন ঘটাতে পারেন, তিনি তার উদাহরণ।’

মোল্যা নজরুলকে নিয়ে এমন মন্তব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দিন মিয়ার।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘তিনি (মোল্যা নজরুল) জিএমপিতে আসার পর অল্প সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যানজট নিরসন, সুশৃঙ্খল বিশ্ব ইজতেমার পরিকল্পনাসহ বেশকিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। সত্যিই তিনি পরিবর্তনের কারিগর।’

মোল্যা নজরুল ২০২২ সালের ১৩ জুলাই জিএমপি কমিশনারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সম্প্রতি তাকে বদলি করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ডিআইজি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে এপিবিএনে যোগদান করবেন তিনি।

সদ্য বিদায়ী জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল সম্পর্কে বিজিএমইএ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নাসির উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যেকোনো সময় চাইলেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন জিএমপি কমিশনার।’

মোল্যা নজরুলকে ‘ডায়নামিক ইনোভেটিভ’ উল্লেখ করে তার জুনিয়র সহকর্মী জিএমপির সিটিএসবি অ্যান্ড প্রটেকশন ডিভিশনের ডিসি মো. আরিফুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্যারের মধ্যে বিচক্ষণ নেতৃত্বগুণ আর সকলকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুন্দর মানসিকতা খুঁজে পাই।’

গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কণ্ঠেও মোল্যা নজরুল সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা শোনা গেছে। তারা বলছেন, দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার লাইফ-লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। যা ব্যবহার করে ৩৬টি জেলায় যেতে হয় মানুষকে।

তীব্র যানজটের কারণে যে সড়ক মানুষের কাছে উৎকণ্ঠার ছিল, তা স্বাভাবিক করেছেন মোল্যা নজরুল। তার দক্ষ পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের প্রশংসাও করেন নগরবাসী। বলেন, আব্দুল্লাহপুর-গাজীপুর চৌরাস্তা যেতে আগে লাগত আড়াই ঘণ্টা, এখন লাগে ৩০-৪০ মিনিট।

অন্যদিকে, মোল্যা নজরলের ম্যাজিকে যানজট নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি থেকে রেহাই পেয়েছে দেশ। এমন তথ্য দেন শিল্প-কলকারখানা অধ্যুষিত গাজীপুরের পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।

কর্মক্ষেত্রে আলোচিত যত সাফল্য

২০১২ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি থাকাকালে সৌদি দূত খালাফ আল আলী, ব্লগার রাজীব, ডা. নিতাই হত্যাকাণ্ডসহ বেশকিছু ক্লুলেস খুনের রহস্য উদঘাটন করেন। বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ডাক্তার নিতাই হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক হত্যা, আদাবর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি রমিজ হত্যা, ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ড, মহিলা আইনজীবী রওশন আরা হত্যা, ধর্ষিত শিশুকন্যা চাঁদনী, গৃহবধূ সাদিয়া আফরিন রীতা হত্যাকাণ্ড, আওয়ামী লীগের মহিলা সাংসদ সাহিদা তারেক দিপ্তির বাসায় ডাকাতি, সাবেক নৌ বাহিনী প্রধানের বাসায় ডাকাতি, একাধিক স্বর্ণের দোকানে ডাকাতিসহ চাঞ্চল্যকর অনেক ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেতৃত্ব দিয়ে বিশেষ নজর কাড়েন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোল্যা নজরুল ইসলাম। ডিবিতে থাকাকালীন সাহসী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বিপিএম ও পিপিএম পদকে ভূষিত হন।

২০১৫ সালের আগুন সন্ত্রাসের এক কঠিন পরিস্থিতিতে মোল্যা নজরুল ইসলামকে জয়পুরহাট জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় তিনি প্রায় ৫ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী ও ২৩ জন ডাকাতকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এনে পুনর্বাসন করেছেন। তার নির্দেশনায় জনসচেতনতামূলক কাজকর্মে আলোচিত কালাইয়ে বন্ধ হয়ে গেছে বহুল আলোচিত কিডনি বেচাকেনার ব্যবসা। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নকে ডাকাত মুক্ত, আক্কেলপুর ও পাঁচবিবি পৌর শহরকে মাদক ও বাল্য বিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

২০১৬ সালে জয়পুরহাট মিশন শেষে মোল্যা নজরুল ইসলামকে বিশেষ পুলিশ সুপার পদে সিআইডিতে বদলি করা হয়। সিআইডিতে মাত্র ৩ বছর দায়িত্ব পালনকালে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের মহোৎসব বন্ধ হয়। গ্রেপ্তার হয় প্রশ্নফাঁসকারী সর্ববৃহৎ চক্র।

এছাড়াও মাদক থেকে মানি লন্ডারিংয়ের প্রথম মামলায় রাষ্ট্রের অনুকূলে মাদক ব্যবসায়ীদের শতকোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাও আরেকটি বড় অর্জন তার। জঙ্গি অর্থায়ন, মাদক, প্রতারণা, সংঘবদ্ধ অপরাধসহ মোট ২৭টি প্রেডিকেউ অফেন্সের অধিকাংশ ঘটনায় মানি লন্ডারিং মামলার সূচনাকারী প্রথম কোনো পুলিশ কর্মকর্তা তিনি। এ সকল মামলায় অপরাধীদের বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংকে জমানো কোটি কোটি অবৈধ নগদ অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে ভূমিকা পালন করেন, যা পুলিশ বাহিনীতে বিরল।

এমএলএম এবং সমবায়ের নামে সাধারণ জনমানুষের কোটি কোটি টাকা লোপাটকারীদের আইনের আওতায় আনা, এয়ারপোর্ট ঘিরে 'রেডিও জকি' নামে এনজিও খোলাসহ নানা উপায়ে প্রতারণাকারীদের আইনের আওতায় আনা, বিদেশি নাগরিকদের অভিনব উপায়ে কার্ড জালিয়াতির চক্র গ্রেপ্তারসহ দেশের বড় বড় স্বর্ণ চোরাকারবারিদের আইনের আওতায় আনার মতো উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

এসব সফলতার কারণে তিনি বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানসহ পুলিশ ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিনন্দন ও প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

২০১৯ সালে অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিশনাল ডিআইজি) পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর মোল্যা নজরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয় আরেক বিশেষায়িত ইউনিট নৌ-পুলিশে। সেখানেও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। কয়েক কোটি মিটার কারেন্ট জাল ধ্বংস করে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

২০২২ সালের জুনে উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া পর জিএমপির কমিশনার করা হয় তাকে। তার নেতৃত্বে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা প্রশংসিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতি প্রদানও করেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যাপক প্রশংসা করেন, যা পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘পুলিশ ফোর্স এক্সেমপ্লারি গুড সার্ভিস ব্যাজ-২০২২’ অর্জন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট পুলিশ হওয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী জিএমপিতে নেতৃত্ব দেন।

নড়াইলের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মোল্যা নজরুল ইসলাম। বাবা হাশেম মোল্যা এবং মা রেনু হাশেমের ৬ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০০১ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।

২২ বছরের চাকরি জীবনে সাহসিকতা ও দক্ষতার জন্য পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম (বার) ও পিপিএম (বার) অর্জন করেন একাধিক বার।

মোল্যা নজরুল ২০০৬ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গমন করেন। মিশনে দায়িত্ব পালনকালে বন্যায় অবরুদ্ধ এক দম্পতিকে উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। মোল্যা নজরুল ইসলামই একমাত্র পুলিশ কর্মকর্তা যিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য ‘পিপিএম’ পদক অর্জন করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৪জুন/আরআর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :