রূপালী লাইফের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ, এখন কিনবেন তো ঠকবেন, সত্যি!

রুদ্র রাসেল, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৫ জুন ২০২৩, ০৯:৪৯ | প্রকাশিত : ০৫ জুন ২০২৩, ০৮:৪১

এই মুহুর্তে আপনি কি রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কিনেছেন বা কিনছেন? কিনেছেন তো ঠকেছেন। কেননা, মাত্র এক মাস আগেও এই শেয়ারটির বাজার দর ছিল ৯০ টাকা বা তার নিচে। এক মাসের ব্যবধানে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে এখন প্রায় ২২৩ টাকা।

রূপালী লাইফের এই দর কি স্বাভাবিক? মোটেও না। কতিপয় শেয়ারধারী (গ্যাম্বলার) বাজার থেকে এই শেয়ার কমমূল্যে হাতিয়ে নিয়ে দাম বাড়িয়ে এখন সাধারণ জনগনকে কেনানোর ফাঁদ পেতেছেন। তারা বাজারেও তেমন একটা প্রভাব বা প্রচারণা তৈরির চেষ্টা করছেন যে, ঈদের আগে এ শেয়ারের ৩০০ টাকা দর হবে।

তবে এটিকে বাজার বিশ্লেকরা কৃত্রিম-অসম্ভব এবং মানুষ ঠকানোর প্রক্রিয়া মনে করছেন। তারা বলছেন, এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ হাতিয়ে নেওয়ার কারসাজি।

একাধিক সূত্রে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী থেকে ৯০ টাকা বা তার নিচের দরে জনৈক লুৎফুল গনি টিটু এই শেয়ার কিনেছেন। বিতর্কিত এই বিনিয়োগকারীর বিরুদ্ধে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের উচ্চমূল্য দেখিয়ে একাধিকবার মানুষ ঠকানোর অভিযোগ আছে।

এমনকি শেয়ার কারসাজির দায়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) লুৎফুল গনি ও তার স্ত্রীকে জরিমানাও করেছে।

জানা গেছে, টিটু ও তার সঙ্গীরা এখন বাজারে অনেকটা মার্কেটিংয়ের মতো করে ছড়াচ্ছেন যে, রূপালী লাইফের শেয়ারের দাম বাড়বে। আদতে কয়েকগুণ বৃদ্ধির পর এই শেয়ারের এমন কোনো ইতবাচক দিক বা মেরিট নেই যে, এ শেয়ারের দাম বাড়তে পারে।

রূপালী লাইফের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য বলছে, সবশেষ গত বছর রূপালি ইন্সুরেন্স ডিভিডেন্ট (লভ্যাংশ) দিয়েছিল ১৮ পার্সেন্ট (শতাংশ) ক্যাশ। আর এর আগের বছর দিয়েছিল ১৩ পার্সেন্ট।

তবে এটা আহামরি ডিভিডেন্ট নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১০ মে এই শেয়ারের দাম ছিল ৯২ টাকা ১০ পয়সা। মাত্র ১৮ দিনের মাথায় ২৯ মে এর দাম ওঠে ১৭০.৫০ টাকা। পরদিন ১৮৭.৩০ টাকা, এর পরের দিন ১৯৭ টাকা, পরদিন ২০৮ টাকা এবং সপ্তাহের প্রথম দিন গতকাল রবিবার ২২২ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ এ কোম্পানিই এখন বাজারে লিড নিচ্ছে।

এভাবে লাফিয়ে দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'এটা সম্পূর্ণ গ্যাম্বলিং (জুয়া)। জুয়াড়িরা জড়িত। এসব কোম্পানির কোনো আয় নেই। তবু লাফিয়ে দাম বাড়ার পেছনে ফ্লোর প্রাইস আর মার্জিন লোন।'

'এছাড়া তারা কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে যেভাবে অর্থ হাতাচ্ছে, তা চলতে থাকলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। এ কারণে বিদেশিরা এখন আর আমাদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে চায় না। তারা ভয় পান।'

পুঁজিবাজারের এই বিশ্লেষক আরও বলেন, 'রূপালী লাইফের এই দাম বাড়ার প্রক্রিয়া কোনো স্বাভাবিক স্টক মার্কেটের নয়। এটি পাতানো, সাজানো। এটি স্রেফ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নি:স্ব করে অর্থ হাতানোর ফন্দি।'

এ ধরনের শেয়ার কিনে পাতানো ফাঁদে পা না দেওয়ার বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ।

শেয়ার বাজারে থাকা একটি তেল কোম্পানির উদাহরণ টেনে এ বাজার বিশ্লেষক বলেন, 'রাইস বার নামে একটি তেল কোম্পানির ১৭ টাকার শেয়ার রাতারাতি ১২০ টাকায় পৌঁছে গেল। না বুঝে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার ধুম পড়ে গেল। এখন তা ০.২ টাকা। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হলেন। লাভবান হলো কথিত বিনিয়োগকারীরা (জুতাড়িরা)। এতে কোম্পানি, উদ্যোক্তা ও শেয়ার মার্কেটের রাঘব বোয়ালরা জড়িত।'

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপালী লাইফের শেয়ারের সংখ্যা কম। এ কারণে জুয়াড়িরা ছক কষে কম দামে এসব শেয়ারের বেশিরভাগ কিনে হাতে নেন। এরপর কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানো হয়। আবার তারাই সহযোগিদের নামে উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনতে থাকেন। আর দাম উঠতে থাকে। তাদের সাজানো ফাঁদে ফাঁসাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোভ দেখানোর জন্য এক ধরনের প্রচারনাও বাজারে তারা ছড়ায়।

এরপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে টোপ গেলানো হয়। সর্বশান্ত করা হয় তাদের। হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। এভাবে বড়শি ফেলে সাজানো ছকে হাতিয়ে নেওয়া হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কষ্টের টাকা। রূপালী লাইফসহ কয়েকটি কোম্পানি এই গ্যাম্বলিং করছে।

এসব দিকে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নজর দেওয়ার তাগিদও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'গ্যাম্বলারদের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। নজরদারি রয়েছে। কেউ এমন কিছু করছে বলে তথ্য পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এদিকে যে লুৎফুল গনি টিটু রূপালী লাইফ শেয়ার কারসাজির হোতা বলে পুঁজিবাজারে আলোচনা, তিনি গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। আলোচিত এ বিনিয়োগকারীকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।

এছাড়া টিটুর মালিকানাধীন সাতরং এগ্রো ফিশারিজকেও জরিমানা করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এসব ঘটনায় টিটুর স্ত্রী শাম্মী নেওয়াজ ও ইবিএল সিকিউরিটিজ জড়িত বলে বিএসইসি তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে। তাদেরও এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে দর বাড়ানো হয়। মাত্র ২০ দিনে প্রায় ২০ শতাংশ মুনাফা (আরোপিত/অনারোপিত) করে নেয়, যা ক্যাসিনোকেও হার মানিয়েছে।

তবে রূপালী লাইফে লুৎফুল গনি টিটুর সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন কোম্পানিটির সেক্রেটারি আমিরুল ইসলাম মুকিত।

তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'কেন রূপালী লাইফের শেয়ারের দাম লাফিয়ে বাড়ছে, সে কারণ আমার জানা নেই।'

আমিরুল ইসলাম মুকিত দাবি করেন, লুৎফুল গনি টিটুর সঙ্গে রূপালী লাইফের কি সম্পর্ক এবং টিটু নামের ওই বিনিয়োগকারী কতগুলো শেয়ার কিনেছেন, সে বিষয়ে কিছুই জানি না।'

(ঢাকাটাইমস/০৫জুন/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :