জামালপুরের মেলান্দহে গান্ধি আশ্রমটি হতে পারে বিনোদন কেন্দ্র

ইমরান মাহমুদ, জামালপুর
| আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩, ১৭:২৫ | প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২৩, ১৭:২০

প্রায় ৮০ বছর আগে জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাশহাটিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় গান্ধি আশ্রম। গান্ধি আশ্রমটিকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষে পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে লড়াই, সংগ্রাম পরিচালিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় স্বদেশের হিতব্রতে সে সময়ে জামালপুরে মানুষের কল্যাণে গড়ে উঠেছিল গান্ধী আশ্রমটি।

মহত্মা মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস আন্দোলনের পথ রেখা ধরে ১৯৩৪ সালে এক একর জায়গার উপর এই গান্ধী আশ্রমটি প্রতিষ্ঠত হয়। এই আশ্রমটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, তৎকালীন বৃটিশ আন্দোলনের কিংবদন্তী ও কৃষক নেতা জামালপুরের কৃতী সন্তান নাসির উদ্দিন সরকার। আর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তারই জ্যেষ্ঠ কন্যা রাজিয়া খাতুন। সে সময় আশ্রমের কার্যক্রমের মধ্যে খাদি কাপড় বোনা থেকে শুরু করে শিক্ষা কার্যক্রম, পাঠাগার, স্বাবলম্বন, হস্তশিল্প, কারুশিল্প তৈরি, শরীরচর্চা, স্বাস্থ্য সেবাসহ স্বদেশের কল্যাণে নানা কর্মসূচি স্থান পেয়েছিল।

স্বদেশ চেতনা ও স্বদেশ প্রেমে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল গান্ধি আশ্রমের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের শাসকচক্র বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়ে আশ্রমটির বহু মূল্যবান স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। সে সময়ে তাদের হামলায় আশ্রমের অফিস ঘরটি ছাড়া প্রায় সব কিছুই ধ্বংস হয়েছিল। বাঙালির মুক্তির পথ খুঁজতে প্রকাশ্যে ও গোপন অসংখ্য সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল গান্ধী আশ্রমের ওই ঐতিহাসিক ঘরটিতে। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে যোগ দিয়েছিলেন শেরে বাংলা এ,কে,এম ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মওলনা ভাসানী, সাম্যবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ মণি সিংহ, বারানী দত্ত, খোকা রায়, অনিল মূখার্জি, সুরেন্দ্র মোহন ঘোষ, জ্ঞান চক্রবর্তী, মুক্তি যুদ্ধকালীন ইন্ধিরা গান্ধীর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শান্তিময় রায়, রবি নিয়োগী, বিধুভূষণ সেন, নগেন মোদক, সাব্যসাচী লেখক রনেশ দাশ, বিপ্লবী কথা সাহিত্যিক সত্যেন সেন, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, আশু দত্ত, কৃষক নেতা হাতেম আলী খান ও আব্দুস সাত্তার, হেমন্ত ভট্টাচার্য্য, সম্মথ দে, খন্দকার বাকীসহ বহু বিশিষ্টজন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই অফিস ঘরটি মুক্তি যোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল এবং অস্ত্র ও রসদ রাখাসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বদেশের কল্যাণে মানবতা, শান্তি, সহিঞ্চুতা, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বাণী নিয়ে এখনও নিরন্তর কাজ করে চলেছে ঐতিহাসিক এই গান্ধী আশ্রমটি।

এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠির উদ্যোগে ২০০৭ সালের ২রা অক্টোবর মহাত্মাগান্ধীর জন্ম দিন উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ আহুত আন্তর্জাতিক অহিসং দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে পুনরায় শুরু হয় মানব কল্যাণে জামালপুরের গান্ধী আশ্রমের নানা কার্যক্রম।

এই গান্ধী আশ্রমের পাশেই ২০০৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে বিশাল আকৃতির জাদুঘরটির নির্মাণ কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে । বাহারী ফুল আর বিভিন্ন গাছপালা ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক দৃষ্টিনন্দন এই গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরটি যে কোন পর্যটকের মনকে আকৃষ্ট করবে।

বিভিন্ন সময়ে এখানে ঘুরতে আসা দেশি-বিদেশি অতিথিরা নানা প্রজাতির বৃক্ষ যেমন, বকুল, হরিতকী, জারুল, মে-ফ্লাওয়ার, কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদির চারা রোপণ করে গেছেন। এসব অতিথির মধ্যে রয়েছেন সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্রী পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, দিল্লী বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রফেসর রাবী চক্রবর্তী, ডা.দীপক মিত্তালী, সঞ্চয় ভট্টাচার্য, ড. খন্দকার শওকত হোসেনসহ আরো অনেকেই।

স্থানীয় ঝাউগড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও গান্ধী আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা নাসির উদ্দিন সরকারের দৌহিত্র হিল্লোল সরকার বলেন, জাদুঘরটি চালু হলে এলাকটি একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হবে। তিনি বলেন, গান্ধী আশ্রমটিকে ঘিরে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই গান্ধী ট্রাষ্টের উদ্যোগে এলাকার হত দরিদ্র ছেলে মেয়েদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সেলাই প্রশিক্ষণ ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :