জাতির মুক্তির জন্য ‘এক দফা’ ঘোষণা করা হয়েছে: মির্জা ফখরুল

সরকারের পদত্যাগে বিএনপির এক দফা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, জাতিকে মুক্তির জন্য সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ‘এক দফা’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই পদযাত্রা এখন আর পদযাত্রা নয়। এটি জনগণের বিজয়যাত্রায় রূপ নিচ্ছে। এ যাত্রায় সবাইকে শামিল হয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।
বুধবার বিকালে দিনাজপুর ইন্সটিটিউট মাঠে রংপুর বিভাগীয় পদযাত্রা কর্মসূচির প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, শ্রমিকদল, তাঁতীদল, মৎসজীবী দল ও জাসাস যৌথভাবে এর আয়োজন করে।
দেশ ও মাটিকে রক্ষার জন্য জনগণকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবার লড়াইটা একটু ভিন্ন। এ লড়াই কঠিন লড়াই। আমাদের স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকার লড়াই। বর্তমান আওয়ামী সরকার গণতন্ত্রের মোড়কে সেই পুরনো বাকশালকেই ফিরিয়ে এনেছে। সেজন্য তারা হিরো আলমের মতো প্রার্থীকেও সহ্য করতে পারে না। লজ্জা-লজ্জা-লজ্জা।
নিজেকে দিনাজপুরের বুড়ো সন্তান উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু আমি নই, আমাদের নেত্রী দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াও দিনাজপুরের সন্তান।
‘গণ আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশনায়ক তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ত্বরান্বিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সার-কীটনাশকসহ সব জিনিসের মূল্য ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাকশালি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন শুরু হয়েছে। শিগগির এ গণআন্দোলনে সরকারের পতন হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
এ সময় তিনি পদযাত্রায় যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানান এবং হামলায় আহতদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেন।
সমাবেশ থেকে চলমান পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে লক্ষ্মীপুর কৃষক দল নেতা সজীব হোসেন হত্যার প্রতিবাদে আগামী ২১ জুলাই সারাদেশে শোক র্যালি বের করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, পদযাত্রা কর্মসূচির রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়কারী এবং বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু, জাতীয়তাবাদী মৎসজীবী দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মাহতাব, তাঁতীদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জাসাস সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল প্রমুখ।
পদযাত্রায় যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীদের পথে পথে বাধা-হামলা
পথে পথে বাধা ও হামলা উপেক্ষা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা দিনাজপুরের পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
বুধবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পর থেকে এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাসযোগে দিনাজপুরে বিভাগীয় পদযাত্রায় অংশ নিতে আসছিলেন। দুপুরে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মাদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি বাস আটকে দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভাঙচুর করেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করেন। এরপর থেকে থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। এ সময় চারটি বাস ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। জেলার প্রবেশ মুখে আরও বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা।
(ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/জেবি/ইএস)

মন্তব্য করুন