দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ফেনী-১ আসন: নৌকার প্রার্থী চান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
| আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৩, ১০:২৮ | প্রকাশিত : ২২ আগস্ট ২০২৩, ০৯:২৭

নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে মহাজোট থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক স্থানীয় নেতারা সরব হয়ে উঠেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চান এবার এ আসনে দলের যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। এ আসনের বর্তমান এমপি মহাজোট থেকে নির্বাচিত জাসদের শিরীন আখতার। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া না বা নেওয়ার বিষয়টি ফয়সালা না হওয়ায় নিষ্ক্রিয় রয়েছে স্থানীয় বিএনপির কর্মকান্ড। নিশ্চুপ স্থানীয় জাপাও। গোপনে সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত। ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীর তৎপরতাও রয়েছে।

সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া-ফুলগাজী-পরশুরাম) আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের একাধিক স্থানীয় নেতাপ্রার্থী হওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। তবে এবার জাসদের কব্জা থেকে আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।

ছাগলনাইয়া,পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-১ আসন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদের (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি এলাকার উন্নয়ন ও গ্রামাঞ্চলে উঠান বৈঠক করে নারীদের সংগঠিত করেছেন বলে জাসদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। আর এবারও তিনি মহাজোট থেকে প্রার্থী হবেন এমন আশা ব্যক্ত করছেন জাসদের নেতাকর্মীরা।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শিরীন আখতার এমপির সমালোচনায় মুখর রয়েছেন। তারা এবার দলীয় প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিতে বিভিন্ন সভা এবং অনুষ্ঠানে শীর্ষ নেতাদের প্রতি অবিরত আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন।

তারা মনে করেন, বিএনপির এ শক্ত ঘাঁটিতে টিকে থাকতে হলে জোটের শরিক নয়, আওয়ামী লীগ থেকেই প্রার্থী দেওয়া উচিত। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ব্যাংকার জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী পাপ্পু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ আবদুল্লাহ ও মিজানুর রহমান, পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামালউদ্দিন মজুমদার, ছাগলনাইয়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল মনোনয়ন চাইবেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এবং আদালতের সম্মতি পেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা আশা করছেন। তাদের মতে, ফেনী জেলা খালেদা জিয়ার জন্মভূমি হওয়ায় এখানকার মানুষের কাছে তার অন্য রকম গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

ফেনী-১ আসন থেকে টানা পাঁচবার প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় এ আসনে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন।

বর্তমান সরকারের শুরু থেকে স্থানীয় নির্বাচনে ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ হাতছাড়া হয়েছে বিএনপির। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা আশাবাদী হলেও দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর মামলা-হামলায় বর্তমানে কোণঠাসা হয়ে আছে স্থানীয় বিএনপি। তবে কোনো কারণে এ আসন থেকে খালেদা জিয়া প্রার্থী না হলে জিয়া পরিবারের সদস্য নাসরিন ইস্কান্দার অথবা ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা রয়েছে।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে ফেনীর সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার এবং জেলা কমিটির আহ্বায়ক মোতাহের হোসেন চৌধুরী রাশেদ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়তে চান। অন্যদিকে দলীয়ভাবে সম্ভব না হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন। ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচন সামনে রেখে গোপনে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে।

পরশুরাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, তৃণমূলের কর্মী হিসেবে আমার কিছু চাওয়া-পাওয়া আছে। আমি পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রার্থী যদি বাছাই করা হয়, মাঠের প্রার্থী যদি দেওয়া হয় তা হলে এখানে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হবে। স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ যাকে সবসময় কাছে পায় এমন প্রার্থী চান। আর সে লক্ষ্যে জণগণের পাশে থেকে সবসময় কাজ করছি।

ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, এটি খালেদা জিয়ার এলাকা, এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়োজন। আগেও আমি মনোনয়ন চেয়েছি। গতবার ক্ষুদ্র স্বার্থ ছেড়ে বৃহৎ স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখে শিরীন আখতারকে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়েছি। তাকে জোটের স্বার্থে সংসদ সদস্য করে কোনো সুফল আমরা পাইনি। নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোতাহের হোসেন চৌধুরী রাশেদ বলেন, প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যেই এ আসনে দল গোছানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। তবে নির্বাচন করতে দলীয় সিদ্ধান্ত পেলেই ভালো করে মাঠে নামব।

জেলা জাসদের সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, এ আসনে শিরীন আক্তার এমপি নির্বাচিত হয়ে যে উন্নয়ন করেছেন তা দেশের অন্যান্য স্থানে হয়নি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও মহাজোট থেকে এ আসনে তাকে মনোনয়ন দেবেন বলে শতভাগ বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হননি তারা এমপির সমালোচনা ও বিরোধিতা করছেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু গ্রেফতারের আগে জানান, আমি খালেদা জিয়ার আসনে কাজ করি, এখানে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারলে করবেন, না হলে আমি করব। দল থেকে এটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে বিগত চার বছর ধরে সরকারদলীয়দের বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করেই সেখানে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

(ঢাকাটাইমস/২২ আগস্ট/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :