৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় বিএনপির

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৬

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। এর তিন বছর পার না হতেই নিহত হন দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান। এরপর একাধিকবার বড় ধরনের ভাঙনের মুখেও পড়ে দলটি। চার দফায় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা এ দলটি ১/১১ সরকার আসার পর থেকেই অস্তিত্ব সংকটে পড়ে।

তবে দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসে অতীতের সব ব্যর্থতা ও গ্লানি মুছে ফেলতে চান বিএনপির নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপিই এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রবর্তন করেছে। আর বিএনপির নেতৃত্বেই ছিনতাই হওয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। দেশের আকাশ কালোমেঘ দূর হয়ে গণতন্ত্রের নতুন সূর্য উদিত হবে, মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত বাকস্বাধীনতা ফিরে পাবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই আমাদের শপথ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দলটির প্রতিষ্ঠা থেকে জড়িত আছি। আমি আশাবাদী জনগণ এবার রুখে দাঁড়াবে সরকারের বিরুদ্ধে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন ও দুর্বল করতে ষড়যন্ত্র করেছে। বিএনপিকে ধ্বংস করতে সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেও পারেনি। জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। অতি শিগগির জনগণ গণতন্ত্র ফিরে পাবে, ফিরে পাবে ভোটের অধিকার- এ আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শপথ।’

মূলত, জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে সরিয়ে যখন এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন, তখন বিএনপির সিংহভাগ সিনিয়র নেতাই এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। নেতৃত্বহীন বিএনপির হাল ধরেন প্রয়াত জিয়াউর রহমানের সহধর্মীনি বেগম খালেদা জিয়া। গৃহবধূ খালেদা জিয়া হয়ে ওঠেন রাজপথের নেত্রী।

গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করলে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হোন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলেও সে সময়ের বিএনপির শাসনামল অনেকটা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকলেও পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৬ শাসনামলে দলটি দুর্নীতিকে পাশ কাটাতে পারেনি দলটি। আওয়ামী লীগসহ বিরোধী জোটের সাথে জড়িয়ে পড়ে সহিংসতায়।

সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন সরকার ক্ষমতায় এসেই আটক করে খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ বিএনপির শীর্ষনেতাদের। তখন দলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। দলটির দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গুম ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সহস্রাধিক নেতাকর্মী। বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতারা মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েন।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, রাজপথে দাঁড়াতেই পারেনি দলটি। এমনকি ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে নেওয়া হলেও রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি চারবার ক্ষমতায় থাকা এ দলটি। দণ্ড ঘোষণার পর রাজনীতি থেকে দূরে আছেন বেগম খালেদা জিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করছেন। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের মনে নানা শঙ্কা দানা বাধলেও বড় সাফল্য হচ্ছে- বিএনপিতে ভাঙন ধরেনি।

ক্ষমতা হারানোর ১৪ বছর পর গেল বছর অনেকটা ঘুরে দাঁড়ায় বিএনপি। নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। যার ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন নিয়ে এখন মাঠে রয়েছে বিএনপি। এতে বিএনপির সঙ্গী হয়েছে ৩৬টি রাজনৈতিক দল। গত এক বছরের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রাজনীতিতে দেশে-বিদেশেও দলের গুরুত্ব বেড়েছে।

নেতাদের ভাষ্য, যারা এক সময় এড়িয়ে চলত তারাসহ নতুন করে অনেকেই নিয়মিত সম্পর্ক রাখছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই ঘুরে দাঁড়িয়েছি। পিছু হটা শিখিনি। বিজয়ের লক্ষ্য অর্জন করব অল্প সময়ের মধ্যে।

চার দশক পার করা দলটির নেতাকর্মীদের অনেকে বর্তমান প্রেক্ষাপটের নানা হিসাব-নিকাশে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও হতাশ নন বলে দাবি বিএনপি নেতাদের। তারা বলছেন, ‘বিএনপির হারানোর কিছু নেই। ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। এমন কোনো অত্যাচার নেই যে তারা (সরকার) করেননি। এবার ঘুরে দাঁড়াবার পালা।’

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ঢাকা টাইমসকে বলেন, দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের সংকটকালে বিএনপির জন্ম হয়েছে। ফিরে আনা হয়েছিলো বহুদলীয় গণতন্ত্র। তারই ধারাবাহিকতায় ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রদলের দীপ্ত শপথ হচ্ছে- চলতি বছরই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। ছাত্র-জনতা ফিরে পাবে তাদের অধিকার। যায় যাক আমাদের প্রাণ।

দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনম সাইফুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমরা জাতিকে বার্তা দিতে চাই, জনগণ ১৫টি বছর ভোট দিতে পারেনি। ডাকাতি করা হয়েছে বাকস্বাধীনতা। কেড়ে নেওয়া হয়েছে অধিকার। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন বৃথা যাবে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেই আমরা ঘরে ফিরব। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই আমাদের শপথ।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, জনগণের জন্য, দেশের প্রয়োজন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির জন্ম হয়েছিল। সেই গণতন্ত্র আজ পরাধীন। সবই আজ কৃর্তত্ববাদি সরকার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। আজ আনন্দ নয়, যতদিন আমরা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে না পারব, ততদিন রাজপথই হবে আমাদের ঠিকানা। এই আমাদের শপথ।

কর্মসূচি

বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ সকাল সাড়ে ১০ টায় জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। এতে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। বিকাল ৩টায় বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

(ঢাকাটাইমস/০১সেপ্টেম্বর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কোরবানির ঈদ সামনে, মশলার বাজারে উত্তাপ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :