চলমান সংকট নিরসনে প্রয়োজন তারুণ্যের সাংস্কৃতিক মহাজাগরণ

এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার পিপিএম
 | প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩১

তারুণ্যই একটি দেশের প্রাণশক্তি। বাংলাদেশ তার জন্মলগ্নের বহু পূর্ব থেকেই- বিশেষ করে ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন আর ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে বারবার সেটি প্রমাণ করে এসেছে। তাই বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং দেশীয় স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির এই অশুভ ষড়যন্ত্রের হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা তরুণ প্রজন্মের জন্য আবার নতুন করে সময়ের দাবি হয়ে দেখা দিয়েছে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তরুণদের এখনই জেগে উঠতে হবে, কেননা তরুণ এবং যুবকরাই এদেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অগ্রসেনা এবং জীবনচক্রে সামনের সময়গুলোতে নিজেদের এবং আগামী প্রজন্মের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে হলেও আজকে তাদেরকেই এই গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে। ঘরে ঘরে সকল শ্রেণীর নারী-পুরুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এই সুগভীর ষড়যন্ত্রের প্রকৃত চেহারা।

সাধারণ মানুষদের সচেতন করে আগ্রহভরে নির্বাচনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে বাংলার আনাচে-কানাচে, গ্রাম-শহর সকল স্থানে, এমনকি প্রাথমিক স্তর থেকে সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্তরে মাসব্যাপী পরিকল্পিতভাবে ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে বিজয় দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালির শ্বাসত সাংস্কৃতিক চেতনাকে পুনরায় উজ্জীবিত করতে হবে। প্রয়োজনে এই কার্যক্রমটিকে সরকারী উদ্যোগে জাতীয় কর্মসূচীর আওতাভুক্ত করে নিয়মিতভাবে প্রশাসনিক তত্বাবধানের রাখতে হবে, যাতে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো চক্র এই মহান কর্মকান্ডকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করার সুযোগ না পায়।

৫৬ হাজার বর্গ মাইলের প্রতিটি কোনায় কোনায় বেজে উঠতে হবে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিকথা, দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীত, রণ সঙ্গীত, পথনাটক, মঞ্চনাটক, আবৃত্তি আর নাচ-গান সহ সাংস্কৃতিক সকল বিষয়গুলো মানুষের সামনে তুলে ধরে তাদেরকে নিরলসভাবে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে মননে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নতুন বীজমন্ত্র রচিত করে সমগ্র বাঙালিজাতীকে আবার জাগিয়ে তুলতে হবে। নির্বাচন পর্যন্ত এই উৎসবমুখর সাংস্কৃতিক যাত্রা চলমান রাখা সম্ভব হলে প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি ও অশুভ শক্তিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক বা না করুক, সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনে নিঃসন্দেহে উৎসবে পরিণত হবে আগামী সংসদীয় নির্বাচন।

আর ষড়যন্ত্রের বীজমন্ত্র নিয়ে যারা নির্বাচনকে অন্যায় ভাবে প্রতিহত করবার চেষ্টা করবে, সাংস্কৃতিক গণজাগরণের কারণে তারা কোনভাবেই এই সুবিধা ব্যবহার করতে সাহস করবে না। সেইসাথে প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারার বিভিন্ন কর্মকান্ড যদি সাংস্কৃতিক মূল ধারার সাথে একাত্ম হয়ে সকল পশ্চিমা ও দেশীয় ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে, তাহলে নিঃসন্দেহে কোনো বিদেশী বা দেশী ষড়যন্ত্রকারীরাই এদেশের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করতে পারবে না। নাটক, সিনেমা শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের এই মানুষগুলোর কর্মকাণ্ডকে নিরাপদ করার জন্য প্রগতিশীলধারার রাজনৈতিক দল-উপদলগুলো যদি তাদের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে, সেক্ষেত্রে কোনো অশুভ শক্তিই বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর সাহস পাবে না।

আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ব্যাপী রাজধানী ঢাকা সহ সকল বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রামে গ্রামে অবাধে সকল অনুষ্ঠানমালা চলতে থাকবে। সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে, তার বহুল প্রচারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা যেতে পারে। বিভিন্ন বিনোদনমাধ্যমে প্রচার করা যেতে পারে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় সম্প্রচারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। প্রয়োজনে বিজয় উৎসব প্রচারে বিশেষ প্রনোদনা প্রদান করা যেতে পারে। স্টেজ শোর পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রজেক্টরের মাধ্যমে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র, নাটক, শর্টফিল্ম, দেশাত্মবোধক গান-কবিতা আবৃত্তিসহ নানা ধরনের প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সরকারের বিবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অব্যাহতভাবে প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। জেলায় জেলায়, গ্রামে গ্রামে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় ইতিহাস তুলে আনতে হবে আরো গভীর শিকড় থেকে।

দেশের প্রতিটি শিল্পী, কবি, গীতিকার, বাচিক শিল্পী, নাট্যকারসহ সকল পর্যায়ের সকল ধরনের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এই মহান কর্মযজ্ঞে। বাংলাদেশের পরিসীমার সকল প্রান্তে এখন থেকে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চলমান এই মহান বিজয়উৎসব হবে সকল প্রতিক্রীয়াশীল স্বাধীনতাবিরোধী ও দেশের সার্বভৌমত্বহরণের ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে একটি সার্থক ও গঠনমূলক প্রতিবাদ। রাজপথে আবার হবে আলোর মিছিল। দেশের গানে, মা-মাটি-মানুষের টানে বাংলার সেই শ্বাসত আবহমান সংস্কৃতির পূণ্যস্রোতে কেটে যাবে অশনীর কালো ছায়া।

আর প্রশাসনিকভাবে যারা নিরাপত্তারক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা ন্যায়সঙ্গত ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলেই এই জাগরণকে কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। তেমনি করে, যদি তথ্য মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং স্বেচ্ছাসেবী সাংস্কৃতিক ও মানবিক সংগঠনগুলো সমবেতভাবে এখন থেকেই কাজ শুরু করে, তাহলে যে সাংস্কৃতিক জাগরণ বা মহাবিপ্লব সংঘটিত হবে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচিত করবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আর, তা করতে না পারলে বাংলার দিগন্তরেখায় যে ভয়াবহ দূর্যোগের অশনী সংকেত দেখা দিয়েছে, তার সর্বগ্রাসী প্রাবল্যের চরম মূল্য দিতে হতে পারে আপামর জনগনকে।

সেইসঙ্গে বড় রকমের ক্ষত দেখা দিতে পারে আমাদের স্বাধীন মানচিত্রে। তাই নিঃসন্দেহে বাংলার স্বাধীনতার অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় সার্বজনীন সাংস্কৃতিক জাগরণ তথা মহাবিপ্লব গড়ে তোলা এখন অতি-আবশ্যক সময়ের দাবি, যার বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে বাংলার বহুলপরীক্ষিত সেই তরুণ প্রজন্মকেই।

লেখক: পুলিশ সুপার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :