ডায়াবেটিস থেকে ওজন কমানোর মহৌষধ ঝিঙে
বাঙালির রান্নার একটি পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর সবুজ সবজি ঝিঙে। ঝিঙে বললেই আমাদের মনে পড়ে ঝিঙেফুল। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ। আর মনে পড়ে ঝিঙে-পোস্তর কথা। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে ঝিঙে শুনলেই অনেকে নাক সিঁটকান। ঝিঙে শরীরকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে। ঝিঙের উপকারিতা জানলে চমকে যাবেন। যারা ঝিঙে খেতে ভালোবাসেন না, তারাও খাবেন। কারণ, এর মধ্যে আছে শরীরকে ঠান্ডা রাখার ম্যাজিক। স্বাস্থ্যের জন্য অফুরন্ত উপকার দেয় ঝিঙে। শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত প্রচুর শাকসবজি খাওয়ার উপরেই জোর দেন চিকিৎসকরা।
ঝিঙে সারা বিশ্বে আবাদকৃত একটি সবজি। ইংরেজিতে রিজ গ্রাউন্ড নামে পরিচিত। ঝিঙের বৈজ্ঞানিক নাম লুফা একুট্যাংগুলা। ঝিঙের আদিনিবাস ভারত। ভারতে এখনও এদের বন্য প্রজাতি দেখা যায়। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদ করা হয়। এছাড়া চীন, ভারত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা ও আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
১০০ গ্রাম ঝিঙেতে রয়েছে ৯৩ গ্রাম জলীয় অংশ, শূন্য দশমিক ৩ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ২ দশমিক ৬ গ্রাম আঁশ, ৩০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১ দশমিক ৮ গ্রাম আমিষ, ৪ দশমিক ৩ গ্রাম শর্করা, ১৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৬ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ ও ৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
ঝিঙে ফাইবারে ভরপুর। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে খাবার হজম করতেও সাহায্য করে। রূপবিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ঝিঙে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিকে ভরা। নিয়মিত ঝিঙে খেলে ত্বক ভালো থাকে। শরীরের ইমিউনিটিও বাড়ায়। জেনে নিন ঝিঙের স্বাস্থ্য উপকারিতা।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
ঝিঙেতে ফ্যাট ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে নাম মাত্র। বরং ঝিঙে দেহে স্নেহ পদার্থ সঞ্চিত হতে দেয় না। পাশাপাশি সহায়তা করে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট পরিপাকেও। ঝিঙেতে থাকে ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট’ নামক এক প্রকার উপাদান যা ডায়াবিটিস কমাতে কাজে আসতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের উপকারী
ঝিঙে সুগার কমায়, রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ঝিঙে খুবই উপকারী। পুষ্টিবিদরা ঝিঙেতে বিদ্যমান পেপটাইড এনজাইম রক্তের চিনির পরিমাণ কমায়। রক্তের ইনসুলিনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে।
ঝিঙে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক
ঝিঙে সবজিতে প্রদাহরোধী ও অ্যান্টিবায়োটিকের চমৎকার গুণ রয়েছে। শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয় এটি। ত্বকেরও সুরক্ষা দেয়। এটি বিভিন্ন রোগজীবাণু, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
রক্তকে দূষণ থেকে রক্ষা করে
রক্তকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে ঝিঙে অতুলনীয়। যকৃতের জন্য খুবই উপকারী এই সবজি। পাশাপাশি এটি অ্যালকোহলের ক্ষতিকর প্রভাবও দূর করে।
জন্ডিস নিরাময় করে
জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঝিঙে আদর্শ পথ্য। ঝিঙের ‘জুস’ পান করলে যকৃতের কর্মক্ষমতা বাড়ে।
পাকস্থলী ভালো রাখে
ঝিঙেতে প্রচুর আঁশ থাকায় এটি পেট পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পাইলস রোগ দূরে রাখে। অ্যাসিডিটি ও আলসারও নিরাময় করে এটি। নিয়মিত ঝিঙে খেলে পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়ে, খাবারও হজম হয়।
চোখ ভাল রাখতে
ঝিঙেতে প্রচুর পরিমাণে ‘বিটা ক্যারোটিন’ বা ভিটামিন-এ থাকে, যা চোখ ভাল রাখতে সহায়তা করে। বিশেষত, বেশি বয়সি মানুষদের ক্ষেত্রে ঝিঙে অত্যন্ত উপযোগী। ঝিঙে এক দিকে অপটিক স্নায়ু ভাল রাখতে ও অন্য দিকে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ থেকে চোখের রক্তনালীগুলিকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
ঝিঙে আয়রনে সমৃদ্ধ। এই কারণে নিয়মিত ঝিঙে খেলে রক্তাল্পতার রোগীরা উপকার পেতে পারেন। ঝিঙেতে থাকে ভিটামিন-বি ৬ যা রক্তসঞ্চালন ভাল রাখতে বেশ কার্যকরী।
কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
ঝিঙেতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় উপাদান থাকে। সঙ্গে থাকে প্রচুর পরিমাণে সেলুলোজ। এক চামচ মধু সহযোগে এক কাপ ঝিঙের রস নিয়ম করে পান করলে, তা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে ও পেট ভাল রাখতে সহায়তা করতে পারে।
লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে
ঝিঙে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ, অ্যালকোহল ও অপাচ্য খাদ্যকণা থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফলে ভাল থাকে লিভার। পিত্তরসের ক্ষরণ ভাল রাখতেও ঝিঙের জুড়ি মেলা ভার। এই কারণই জন্ডিস থেকে সেরে ওঠার সময় ঝিঙে খেতে বলা হয়।
পাথরি দূর করে
ঝিঙে লতার শিকড় গরুর দুধে বা ঠাণ্ডা পানিতে ঘষে সকালবেলা পর পর তিন দিন খেলে পাথরি দূর হয়।
অর্শ রোগের জন্য উপকারী
ঝিঙে কৃমি ও শ্লেষ্ম নাশ করে। শূল, গুল্ম ও অর্শ রোগের পক্ষে উপকারী।
বমিবমি ভাব দূর হয়
পাকা ঝিঙার ৩-৪ টি বীজ বেটে এক কাপ জলে গুলে খেতে হবে। এতে পেটে বায়ু থাকলে কমে যাবে ও বমিবমি ভাব দূর হয়ে যাবে।
কুষ্ঠ রোগের জন্য উপকারী
ঝিঙে পাতার রস এক থেকে দেড় চামচ সকালে ও বিকেলে একটু জল মিশিয়ে খেতে হবে এবং রোগাক্রান্ত জায়গায় পাতার রস লাগাতে হবে। এতে কুষ্ঠরোগের উপকার হবে।
(ঢাকাটাইমস/২০ সেপ্টেম্বর/আরজেড)