লভ্যাংশ দেয়নি ৯ মাসেও

বিনিয়োগকারীর টাকায় ফরচুন সুজ মালিকের ক্রিকেট বিলাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৩৮
অ- অ+

পুঁজিবাজারে লাভের আশায় ফরচুন সুজের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ‘ধরা’ খেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গেল বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও বিনিয়োগকারীদের বেনিফিসিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে এখনো একটি পয়সাও দেয়নি কোম্পানিটি। বিনিয়োগকারীদের ঠকালেও কোম্পানির মালিকের বিলাসিতার অভাব নেই।

ফরচুন সুজের টাকায় বহুল সমালোচিত মালিক মিজানুর রহমান ক্রিকেটে বিনিয়োগ করছেন দেদারছে। কোটি টাকা খরচ করে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেট টুর্নামেন্টে। এছাড়াও কোম্পানিটির মালিকের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির বিস্তর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূত্র মতে, গেল বছরের জন্য চামড়া খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফরচুন সুজ ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এক মাসের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের হিসাবে লভ্যাংশ হস্তান্তরের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ৯ মাসেও একটি টাকা পায়নি এর বিনিয়োগকারীরা।

ফরচুন সুজের শেয়ার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ১৭ কোটি টাকা দেওয়ার কথা। কোম্পানি আইন অনুযায়ী লভ্যাংশ ঘোষণার এক মাসের মধ্যে লভ্যাংশ বিও হিসাবে দিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। গেল বছরের ৮ ডিসেম্বর এজিএম বা সাধারণ সভা করে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। সেই হিসাবে জানুয়ারির ৮ তারিখের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত লভ্যাংশ বিতরণ করেনি ফরচুন সুজ।

এর মাধ্যমে কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করেছে বলে মন্তব্য করেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একটি কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করেই যাচ্ছে তবুও তার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না ডিএসই বা বিএসইসি। এর দ্বারা বোঝা যায়, কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করছে না ফরচুন সুজ। তারা বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে আরাম-আয়েশ করছে। ক্রিকেটে টাকা ওড়াচ্ছে। অথচ বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ দিচ্ছে না। বিএসইসি বা ডিএসই কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে এমনও শুনিনি।’

এদিকে বিনিয়োগকারীদের ঠকালেও বিলাসিতা বন্ধ নেই কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের। কোটি টাকায় নিয়েছেন বিপিএলের দল ফরচুন বরিশাল। ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মতে, বিপিএলে এমন একটি দল পরিচালনা করতে ন্যূনতম ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা খরচ হয় প্রতিটি দলের। এছাড়াও আরো অনেক বেশি খরচ করে দলগুলো। দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক, থাকা-খাওয়া, ক্রিকেট সরঞ্জাম প্রদান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ আরো নানান খাতে প্রচুর খরচ হয় দলগুলোর। সে তুলনায় লাভ আসে না বললেই চলে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে যে টাকা পায় দলগুলো তা খরচের ১০ ভাগও না বলে মন্তব্য করেছেন বিসিবি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

এত এত টাকা খরচ করছে ক্রিকেটের পেছনে অথচ বিনিয়োগকারীদের মাত্র ১৭ কোটি টাকা দিতে এত অসুবিধা কেন হচ্ছে জানতে চেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কোম্পানিটির বিনিয়োগকারী সাইফুল ইসলাম।

তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি বেতনের টাকা থেকে অল্প অল্প করে জমিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকার শেয়ার কিনি। এরমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার কিনেছি ফরচুন সুজের। এক বছর হয়ে গেলেও ঘোষিত লভ্যাংশের একটি পয়সাও পাইনি। ডিএসইতে অভিযোগও দিয়েছি। বিএসইসিও জানে। তবুও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শোনা যায়, ফরচুন সুজের মালিকানায় এসেছেন আরেক শেয়ার কারসাজির কারিগর আবুল খায়ের হিরো। এর সাথে সাকিব আল হাসানও আছে বলে শুনেছি। এদের কারণেই বিএসইসি নিশ্চুপ হয়ে আছে।’

২০২২ সালের বিপিএলে ৮ম আসরে অংশ নেয় ফরচুন বরিশাল। এর আগে এ দলটির নাম ছিল বরিশাল বার্নার্স। কিন্তু ফরচুন সুজের মালিক মিজানুর রহমান দলটির স্বত্ব কিনে নিয়ে নাম পরিবর্তন করে রাখেন ফরচুন বরিশাল। গেল বছর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে দল গঠন করে রানার্স আপ হয়েছিলো দলটি। এবারও দল ধরে রেখেছেন মিজান। এবার আরো বেশি বাজেটের দল গঠন করেছেন। ক্রিকেটে এমন দেদারসে টাকা খরচ করার মূলধন পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করেছেন বলে দাবি বিনিয়োগকারীদের।

পুঁজিবাজারের টাকায় বিলাসিতা করছেন মিজান দাবি করে ডিএসইর একটি পক্ষ বলছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেখেও না দেখার ভান করছে। ডিএসইর পক্ষ থেকে বিএসইসিকে জানানো হয়েছে দাবি করে এই সূত্রটি বলছে, এক মাসের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ না করলে ক্যাটেগরি বদলে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে, দশ মাস পার হয়ে গেলেও কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি বিএসইসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম ঢাকা টাইমসকে কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এরপর কমিশনারকে ফোন দেওয়া হলে তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

সূত্র মতে, এবার ২০২৩ সালের বিপিএলের ৯ম আসরে তামিম ইকবালকে অধিনায়ক করে দল গঠন করেছেন মিজানুর রহমান। তার দলে পাকিস্তানী খেলোয়াড়ের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। ফখর জামান, শোয়েব মালিক, মো. আমিরের মতো তারকাবহুল খেলোয়াড় রয়েছেন ফরচুন বরিশালে। এমন একটি তারকাসমৃদ্ধ দল পরিচালনা করতে প্রচুর টাকা খরচ করতে হয় বলে জানা গেছে।

এসব বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় ফরচুন সুজের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সঙ্গে। বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে মেসেজ দেওয়া হলেও তার কোনো উত্তর দেননি তিনি। কোম্পানির এমডি মিজানুর রহমানের সহধর্মিনী রোকসানা রহমানকে ফোন করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

এরপর চেষ্টা করা হয় কোম্পানি সচিব রিয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়াকে। তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। মেসেজেরও কোনো উত্তর দেননি। তাই কোম্পানির কোনো বক্তব্য জানার সুযোগ হয়নি।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির ৪৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ ধারণ করছেন কোম্পানির পরিচালকরা এবং অবশিষ্ট ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ডিএসইর তথ্যমতে, কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ার সংখ্যা ১৭ কোটি ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৬৩টি। ২৫০ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৭০ কোটি টাকা।

(ঢাকাটাইমস/০২অক্টোবর/এএস/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কাতারের আমিরকে ধন্যবাদ জানিয়ে পত্র তারেক রহমানের
বিএনপির সমাবেশে সাংবাদিক পরিচয়ে শিবিরকর্মী!
৫ বছরের শিশু ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
হঠাৎ অসুস্থ লুৎফুজ্জামান বাবর, নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা