প্রসূতি আঁখি ও নবজাতকের মৃত্যু: তদন্তের তথ্য জানাতেও গড়িমসি সেন্ট্রাল হাসপাতালের

ইডেন কলেজের ছাত্রী প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তদন্তে কী উঠে এসেছে- তা অজানাই রয়ে গেছে।
এ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সংবাদ সম্মেলন করে জানানোর কথা বলা হলেও পরবর্তীতে সেই পথ থেকে সরে আসে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ওই তদন্ত শেষ হয়েছে কি না বা তদন্তে কী পাওয়া গেছে— তা জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ হন হাসপাতালটির ভাইস চেয়ারম্যান এম এ কাশেম। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘এটা এখন বাসি খবর। এই খবর নেওয়ার দরকার নেই।’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে হাসপাতালের এবং চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের নানা ধরনের অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে। ফলে এটি তারা বাইরে প্রকাশ করেনি। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আঁখি ও তার নবজাতক সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকাজ শেষ করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় গতি পাচ্ছে না তদন্ত।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা দেখে তার অধীনে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেলেন সন্তানসম্ভবা মাহবুবা রহমান আঁখি। গত ৯ জুন প্রসব ব্যথা নিয়ে তিনি সেন্ট্রাল হাসপাতালের আসেন।
স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করার কথা থাকলেও অস্ত্রোপচার করা হয়। এসময় আঁখির নিয়মিত চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহা সেন্ট্রাল হাসপাতালে ছিলেন না। তবে তিনি হাসপাতালে আছেন বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মাহবুবাকে ভর্তি করানো হয়, যা পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে উঠে আসে।
সিজারিয়ান অপারেশনের কয়েক ঘণ্টার মাথায় নবজাতকের মৃত্যু হলেও তা গোপন রেখে স্বজনদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে থাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মাহবুবার স্বজনরা বিয়টি জেনে যান। আর মাহবুবাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আট দিন পর মারা যান মা মাহবুবা।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসা অবহেলায় মা ও নবজাতকের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনায় আসে বিষয়টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দেয়, যা কিছুদিন পর আবার চালু হয়।
এমন পরিস্থিতিতে ১৯ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আঁখির চিকিৎসায় অবশ্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। গাফিলতি ছিলো ডা. সংযুক্তা সাহার, অস্ত্রোপচার কক্ষের (ওটি) চিকিৎসকদেরও। রোগীর অস্ত্রোপচারের সময় তারা জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের ডাকেননি।’
নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘এই ঘটনায় হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
সেন্ট্রাল হাসপাতালের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে কী না? দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কী না— জানতে রবিবার দুপুরে ফোন করা হয় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ কাশেমের মুঠোফোনে।
তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এগুলো। এখন আর জানার কোনো দরকার নেই। এটা বাসি হয়ে গেছে। বহুত পরে জানতেছেন, এটা আরও আগে জানা উচিৎ ছিল।’
নবজাতকসহ মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় ১৯ জুন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পরে ২ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব উম্মে হাবিবা স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে সেন্ট্রাল হাসপাতালের পাশাপাশি তিনজন চিকিৎসককে আঁখির মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে আঁখির স্বামী ইয়াকুবকেও দায়ী করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
আর হাসপাতালের অবকাঠামো, জনবল, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোনো অসামঞ্জস্য রয়েছে কি না, তা যাচাই করে ব্যবস্থা নিতেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যু দায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল এড়াতে পারে না। কারণ, বিএমডিসির নিবন্ধন নবায়ন না থাকার পরেও চিকিৎসকদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। তিনি রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে এ ঘটনায় ১৪ জুন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন ইয়াকুব আলী সুমন।
মামলায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. মুনা সাহা, ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী মো. জমির, ডা. এহসান, ডা. মিলি ও সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজসহ আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়। ইতোমধ্যে মামলার সব আসামিকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা সবাই জামিনে রয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক রাসেল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আঁখির ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের কাছে আসেনি। ওইসব প্রতিবেদন পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
এ ব্যাপারে মৃত মাহবুবা রহমান আখিাঁর স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলার বিষয়ে আমি নিয়মিত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এখনও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসেনি। তাই পুলিশও মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারছেন না।’
(ঢাকাটাইমস/০২অক্টোবর/এএ/আরআর/ডিএম)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

গারদের শিকের ফাঁক দিয়ে হাতকড়া পরা বাবাকে ছোঁয়ার চেষ্টা শিশু জান্নাতের

ঢাকা টাইমসকে একান্ত সাক্ষাৎকার: রাজাবাড়ি ব্রিজটি অক্টোবরেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম

রাজনৈতিক অস্থিরতার ছাপ দেশের অর্থনীতিতে

ডিবি পরিচয়ে বাড়ছে অপরাধ

আমরা আগে নগর গড়ি, তারপর পরিকল্পনা করি: অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল

যুদ্ধের ক্যাম্পে পরিবারের কারও কথা মনে ছিল না

ফিডের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় খামারিরা

গ্রেপ্তার এড়িয়ে কেমন আছেন আদম তমিজী হক?

এইচএসসির ফল বিশ্লেষণ: প্রতিবার ফলাফলে মেয়েরাই যে কারণে এগিয়ে
