মনোনয়ন পাইয়ে দিতে ৩০০ কোটিও চাইতেন হানিফ, ফাঁদে পড়েন অনেকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:২০| আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:৪৭
অ- অ+

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে তাদের কাছে ২০০-৩০০ কোটি দাবি করেছিলেন প্রতারক আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া। নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে যারা খানিকটা দুর্বল তাদেরকে টার্গেট করে চলত এ প্রতারণা। তার ফাঁদে পড়েছেন এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তি। আর এই প্রতারণায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়ের মিথ্যা পরিচয় দিয়েছেন।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয়র মিথ্যা পরিচয় দিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কারও কাছে ৫০ কোটি, কারও কাছে ১০০ কোটি, কারও কাছে ৩০০ কোটি টাকা দাবি করতেন। আর তাদের কারও সঙ্গে দামি গাড়িতে করে দামি হোটেলে সাক্ষাৎ করতেন। ইতোমধ্যে মনোনয়ন পেতে ১০ থেকে ১১ জন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

র‌্যাব জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন বা পদোন্নতির আশ্বাস দিয়ে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে বিপুল অঙ্কের অর্থ দাবি করেন হানিফ। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পদ পাইয়ে দেয়া এবং নানা প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ, ৩০ জনের বেশি ব্যক্তিকে চাকরি পাইয়ে দেওয়াসহ প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া নামের ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দামি গাড়ি ও বিভিন্ন ভিডিও এবং এডিট করা ছবি জব্দ করা হয়। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকায়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আবু হানিফ দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয় ও সুসম্পর্কের কথা বলে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করে আসছিলেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে মনোনয়নপ্রাপ্তির মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করে আসছিলেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন ও পদোন্নতি, সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। প্রতারণা করার জন্য বিভিন্ন সময় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতেন।’

মঈন বলেন, ‘আবু হানিফ এইচএসসি পাস হলেও তিনি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন বলে মিথ্যা পরিচয় দিতেন। ২০০৮ সালে মটরপার্টসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। পরিবহন সেক্টরে দেশের বিভিন্ন রুটে তুষার এন্টারপ্রাইজ নামে তার বেশ কয়েকটি বাস ও নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রাইভেট কার রয়েছে। ঢাকার নাখালপাড়া এবং ধানমন্ডি এলাকায় দলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন বলে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালাতেন।’

র‌্যাব জানায়, ২০১৪ সালের পর থেকে একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করেন হানিফ মিয়া। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌশলে রাজনীতিবিদ, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজের পরিচয় মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরিচিত হন। পরে সুসম্পর্ক তৈরি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অফিস বা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি তুলে প্রতারণার কাজে সেগুলো ব্যবহার করতেন। তিনি ২০১৫ সালে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন। বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে অনুষ্ঠান, সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন সময় ভ্রমণ করে ছবি তুলে তা ফেসবুকে আপলোডের মাধ্যমে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পরিচিতি ও দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করেন হানিফ।

(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/এসএস/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করলে ভালো হতো: জামায়াত আমির
জামালপুরে মাদ্রাসায় ছাত্রী ভর্তিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে ডিএনসিসির কর বকেয়া ৩০ কোটি টাকা
শহীদ নিজামীর খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ: রফিকুল ইসলাম 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা