‘হঠাৎ বিকট শব্দ, ঝড়ের গতি, এরপর কিছু বলতে পারব না’

‘ভৈরব স্ট্রেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পাঁচ মিনিট পর হঠাৎ বিকট শব্দ। মনে হলো, ঝড়ের গতিতে একটা ট্রেন যাচ্ছে, চারপাশে শুরু হলো প্রচন্ড চিৎকার-চেঁচামেচি। এরপর আর কিছু বলতে পারব না। জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম বগির ভেতরে অনেক লোকজনের ওপরে পড়ে আছি। জ্ঞান ফিরে বন্ধু নাঈমের সঙ্গে বেরিয়ে দেখি রক্ত আর মানুষের চিৎকার…।’
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় শুয়ে এভাবেই ট্রেন দুর্ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন মো. সাদেক (২২)। ট্রেনে করে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসছিলেন তিনি। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় তার হাত ভেঙেছে। পায়েও আঘাত পেয়েছেন।
সাদেকের বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বলই ইউনিয়নের গাবতলী গ্রামে। ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়েন তিনি। এ দিন কিশোরগঞ্জ এগারসিন্দুর ট্রেনটিতে তিনি ও তার বন্ধু মো. নাঈম (২২) উঠেছিলেন। তারা বসেছিলেন ট্রেনের শেষের বগির আগেরটিতে।
ট্রেন যাত্রীতে ঠাসা ছিল বলে জানালেন সাদেক। তাদের বগিতেই আসনবিহীন যাত্রী ছিলেন শতাধিক। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
সোমবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় এগারসিন্ধুর গৌধূলির দুটি বগি যাত্রীসহ উল্টে যায়। এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসেন।
তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত জানাতে না পারলেও প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করায় দুটি ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে পুলিশ ও র্যাব।
এছাড়াও উদ্ধার কাজে যোগ দিতে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা সদরদপ্তর থেকে ২৩ জন, নরসিংদী থেকে ১০ জন, বেলাবো থেকে তিনজনসহ মোট ৩৬ কর্মী ভৈরবে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ভৈরব ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তাদের কাছে ১৫টি মরদেহ রয়েছে। বাকি মরদেহ রয়েছে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে নিহতদের কারো পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ভৈরবে দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলীয় রুটগুলোতে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/এলএম/কেএম)

মন্তব্য করুন