মাত্র সাত রানের লিডেই থামতে হলো কিউইদের

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৩৮ | প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৫৯

সিলেট টেস্টে লোয়ার অর্ডারের জুটিতে ভর করে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাত রানের লিড নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। নবম উইকেটে কাইল জেমিসন আর টিম সাউদির ৫২ রানের জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ রানের লিড পায় কিউইরা। তবে এই লিডটা বেশি বড় করতে দেননি বাংলাদেশের পার্ট টাইম বোলার মুমিনুল হক। এক ওভারেই তিনি ফিরিয়েছেন জেমিসন ও সাউদিকে। এতে ৩১৭ রানে শেষ হয় নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস।

বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৩১০ রানেই অলআউট হয়। এরপরেই ব্যাটিংয়ে নামে কিউইরা। টাইগারদের বোলিং তোপে দ্বিতীয় দিনে ৮ উইকেটে ২৬৬ রান তুলতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড। তখনও বাংলাদেশের থেকে ৪৪ রানে পিছিয়ে ছিল কিউইরা। টাইগার সমর্থকরা ধরেই নিয়েছিল তৃতীয় দিনে দ্রুত ২ উইকেট ফেলে দিয়ে লিড নিবে বাংলাদেশ। কিন্তু কাইল জেমিসন আর টিম সাউদির মতো লোয়ার অর্ডার ব্যাটারকে আউট করতেই রীতিমত ঘাম ঝরেছে বাংলাদেশের।

তৃতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলতে থাকেন এই দুই ব্যাটার। এই দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটারের জুটিতে ভর করে বাংলাদেশের বিপক্ষে লিডের খাতা খুলে বসে কিউইরা।

তবে লিড বড় করার আগেই কিউইদের ৩১৭ রানে অলআউটি করে দেন মুমিনুল ইসলাম। মুমিনুলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান কাইল জেমিসন। আউট হওয়ার আগে করেন ৭০ বলে ২৩ রান। আর ৬২ বলে ৩৫ রান করে বোল্ড হয়ে ফিরে যান টিম সাউদি। যার ফলে প্রথম ইনিংসে ৩১৭ রানেই থামে কিউইরা।

এর আগে দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে দেখেশুনেই খেলতে থাকে দুই কিউই ওপেনার টম ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়ে। এই দুই ব্যাটার দেখেশুনেই এগোতে থাকেন। অবশেষে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা এই জুটিকে থামান তাইজুল ইসলাম। তাইজুলের বলে ফাইন লেগে নাঈম হাসানের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান টম লাথাম। আউট হওয়ার আগে করেন ৪৪ বলে ২১ রান। তার বিদায়ে ৩৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় কিউরা।

৩৬ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন ডেভন কনওয়ে ও কেন উইলিয়ামসন। তবে এই জুটিকে বেশিদূর এগোতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ।

মিরাজের বলে সিলি পয়েন্টে শাহাদাত হোসেন দিপুর হাত ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ডেভন কনওয়ে। ৪০ বলে ১২ রান করেন তিনি।

ডেভন কনওয়ের বিদায়ের পর জুটি গড়েন কেন উইলিয়ামসন ও হেনরি নিকোলস। এই জুটিতে ভর করে ১৬ ওভার ৪ বলে দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে কিউরা। এই পর ২৪ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৭৮ রান করে লাঞ্চ বিরতিতে যায় নিউজিল্যান্ড। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে ক্রিজে অপরাজিত থাকেন কেন উইলিয়ামসন (২৬) এবং হেনরি নিকোলস (১১)।

তবে লাঞ্চ বিরতির পর এই জুটিকে আর বেশিদূর এগোতে দেননি শরিফুল ইসলাম। শরিফুল ইসলামের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান হেনরি নিকোলস। আউট হওয়ার আগে করেন ৪২ বলে ১৯ রান।

দলীয় ৯৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ড্যারেল মিচেলকে নিয়ে জুটি গড়েন কেন উইলিয়ামসন। বাংলাদেশের বিপক্ষে উইলিয়ামসন আজ তুলে নেন অর্ধশতক। ৬ টি চারের সাহায্যে ৭৫ বলে ৫০ রান তুলে নেন তিনি।

কেন উইলিয়ামসনের পথ ধরে পথ ধরে অর্ধশতকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মিচেল। তবে তার আগেই তাকে ফেরান তাইজুল ইসলাম। তাইজুলের শিকার হয়ে মিচেল ৫৪ বলে ৪১ রান করে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ভেঙে যায় ৬৬ রানের জুটি।

তবে মাত্র ৪ রানে থাকা অবস্থায় মিচেলকে সাজঘরে পাঠানোর দারুণ সুযোগ মিস করেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের ৩৫ তম ওভারে শরিফুল ইসলামের অফ স্টাম্পের বাইরে বল মিচেলের ব্যাটের কানা ঘেঁষে চলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে।

জয়-সোহানরা আবেদন করেছিলেন। যদিও তেমন জোরালো আবেদন ছিল না। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া দেননি তাতে। টাইগার অধিনায়ক শান্তও আর রিভিউ নেননি। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, মিচেলের ব্যাটের কানা ছুঁয়েছে ওই বল। অর্থাৎ রিভিউ নিলে সাফল্য পেত বাংলাদেশ।

ড্যারেল মিচেলের বিদায়ের পর টম ব্লান্ডেলকে নিয়ে জুটি গড়েন উইলিয়ামসন। তবে এই জুটিও ভাঙার সুযোগ পায় টাইগাররা। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।

তাইজুলের বলে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন অর্ধশতক তুলে নেওয়া কেন উইলিয়ামসন। তবে মিড উইকেটে দাঁড়ানোর তাইজুল ইসলাম ব্যর্থ হন ক্যাচটি তালুবন্দী করতে। শেষ পর্যন্ত ৫২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান করে চা পানের বিরতিতে যায় নিউজিল্যান্ড।

চা পানের বিরতি থেকে ফিরে বেশি সময় ক্রিজে থাকতে পারেননি টম ব্লান্ডেল। ২৩ বলে ৬ রান করে নাঈম হাসানের বলে কট বিহাইন্ড বলে সাজঘরে ফিরে যান তিনি।

১৭৫ রানে ৫ উইকেট যাওয়ার পর জুটি গড়েন কেন উইলিয়ামসন ও গ্লেন ফিলিপস। এই জুটিও বেশিদূর এগোতে পারতো না যদি কেন উইলিয়ামসনের ক্যাচ মিস না করতেন শরিফুল ইসলাম।

৬৩ রানের পর ব্যক্তিগত ৭০ রানের মাথায় আবারও জীবন ফিরে পান উইলিয়ামসন। এবার উইলিয়ামসনের ক্যাচ মিস করেন শরিফুল ইসলাম। নাঈম হাসানের বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন উইলিয়ামসন। কিন্তু শরিফুল ব্যর্থ হন ক্যাচটি তালুবন্দী করতে। জীবন পেয়ে গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে বড় সংগ্রহের দিকে এগোতে থাকেন উইলিয়ামসন।

অবশেষে এই জুটি ভাঙেন মুমিনুল হক। মুমিনুলের বলে শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান গ্লেন ফিলিপস। আউট হওয়ার আগে করেন ৬২ বলে ৪২ রান।

গ্লেন ফিলিপসের বিদায়ের পর সেঞ্চুরি তুলে দুইবার জীবন পাওয়া কেন উইলিয়ামসন। একবার নয় দুই দুইবার বাংলাদেশি ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় জীবন পান তিনি। আর জীবন পেয়েই তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৯তম সেঞ্চুরি। ৬টি চারের মাধ্যমে ৭৫ বলে ত ৫০ রান করার পর ১৮৯ বলে তুলে নেন ১০০ রান। যার মধ্যে রয়েছে ১১ টি চারের মার।

তবে সেঞ্চুরি তুলে নিলেও নিজের ইনিংসে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেননি। ২০৫ বলে ১০৪ রান করে তাইজুলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান সাজঘরে।

তার পথ ধরে ফিরে যান ইস সোধি। তাকেও ফেরান তাইজুল। তাইজুলের বলে শর্ট লেগে শাহাদাত হোসেন দিপুর হাতে ক্যাচ তুলে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ২৬৪ রানে ৮ উইকেট হারায় কিউইরা।

৮৪ ওভারে ২৬৬ রান করার পর আলো স্বল্পতার কারণে দ্বিতীয় দিনের খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করে আম্পায়াররা। বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল ইসলাম ৪ টি, শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান ও মুমিনুল হক একটি করে উইকেট নেন।

এর আগে সিলেটের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এর আগে প্রথম দিনে ৮৫ ওভার খেলে ৯ উইকেটে ৩১০ রান করেছে টিম টাইগার। দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই টিম সাউদির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান শরিফুল ইসলাম। যার ফলে আগের দিনের ৩১০ রানের সঙ্গে কোন রান যুক্ত করার আগেই অলআউট বাংলাদেশ। এর পরেই ব্যাটিংয়ে নামে কিউইরা।

(ঢাকাটাইমস/৩০ নভেম্বর/এনবিডব্লিউ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :