অবশেষে স্বপ্ন পূরণ, ৫৩৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকায় ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’
অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হলো। ৫৩৫ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকা এলো প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেন ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। শুক্রবার রাত ৯টা ৩৯ মিনিটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ট্রেনটি এসে পৌছায় রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে।
এর আগে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি প্রথমবারের মতো কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি আবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করবে।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলে যাত্রীবাহী ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েক দফা পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের সফল কার্যক্রম শেষে গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রেল সংযোগ উদ্বোধনের সময় ডিসেম্বর থেকে দুটি ট্রেন চালুর নির্দেশ দেন।
উদ্বোধনের পর গত ২৩ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে অনলাইনের পাশাপাশি কাউন্টার থেকে নতুন এই ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। সেদিন ৯টা ৫৫ মিনিটে কাউন্টারে খোঁজ নিলে অগ্রিম সব আসন বিক্রি শেষ বলে জানানো হয়। ওই দিন ডিসেম্বরের ১, ২ এবং ৩ তারিখের অগ্রীম টিকিট বিক্রি করা হয়।
এর আগে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের নতুন সময়সূচি প্রকাশ করে। বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) এসিওপিএস মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিত প্রকাশ করে বলা হয়, ‘ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামে ট্রেনটি চলবে। ট্রেনটির নম্বর ৮১৩/৮১৪। এতে ৭৮০টি সিট থাকবে। ১৬/৩২ লোডের ট্রেনটি ঢাকা থেকে সোমবার ও কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।’
‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ঢাকা থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে ঢাকা বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। আর কক্সবাজার থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে।
এদিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই রুটের ভাড়া নির্ধারণ করে একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রকাশিত তালিকায় দেখা গেছে, ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে সর্বনিম্ন ভাড়া লাগবে ১২৫ টাকা আর মেইল ট্রেনে লাগবে ১৭০ টাকা। শোভন চেয়ারে ৫০০ ও এসি বার্থে (ভ্যাটসহ) পড়বে ১ হাজার ৭২৫ টাকা।
এ ছাড়া সুলভ শ্রেণির ২৫০, শোভন শ্রেণির ৪২০, প্রথম চেয়ার/সিট ভাড়া (ভ্যাটসহ) ৬৭০, প্রথম বার্থের (ভ্যাটসহ) ১ হাজার, স্নিগ্ধা শ্রেণির (ভ্যাটসহ) ৯৬১ এবং এসি সিট শ্রেণির ভাড়া এক হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কমিউটার ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২১০ টাকা।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বাণিজ্যিক দূরত্ব ৫৩৫ কিলোমিটার ধরে এ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ব্রিটিশ সরকার বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে আরকানের (বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য) রেল যোগাযোগের গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রথম জরিপ কাজ চালায়। ১৮৯০ সাল থেকে শুরু হওয়া ওই জরিপ ১৮৯৩, ১৯০৩, ১৯১৭ ও ১৯১৯ সালে বিভিন্ন দফায় চলে। কিন্তু জরিপ চালানোর মধ্যেই এই কাজ সীমাবদ্ধ থেকে যায়।
ব্রিটিশরা ১৭৫৭ সালে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা; ১৭৬০ সালে চট্টগ্রাম ও ১৮৬০ সালে আরকান দখল করে। পরে পাকিস্তান স্বাধীন হলে ১৯৫৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকার একটি জরিপ চালিয়ে এই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় নিরূপণ করে। কিন্তু জরিপে কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হওয়ায় ১৯৫৭ সালে আবারও জরিপ কাজ চালানো হয়। পরে প্রকল্পটি আর এগোয়নি। স্বাধীনতার পর রেললাইন প্রকল্পটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ১৯৯৮ সালে জার্মান সরকারের আর্থিক সহায়তায় ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের দ্বিতীয় রুট হিসেবে বাস্তবায়নের প্রস্তাব আসলেও তা গৃহীত হয়নি। ২০০০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক নিয়োগের দরপত্র প্রদান করলে সেখানে চারটি কোম্পানি অংশগ্রহণ করে। পরের বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে রেল প্রকল্পটি আবারও মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটি নিয়ে আবারও নড়াচড়া শুরু হয়। ২০১০ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে প্রকল্পটি (ডিপিপি) অনুমোদন পায়।
(ঢাকাটাইমস/০১ডিসেম্বর/এলএম/কেএম)