সরেজমিন ঢাকা সিএমএম কোর্ট
গারদের শিকের ফাঁক দিয়ে হাতকড়া পরা বাবাকে ছোঁয়ার চেষ্টা শিশু জান্নাতের

মায়ের কোলে চেপে আদালত পাড়ায় এসেছে পাঁচ বছর বয়সী শিশু জান্নাত। বাবাকে দেখতেই কোল থেকে নেমে দৌঁড়ে সামনে এগিয়ে যায় সে। বাবা তখন পুলিশ পাহারায় ঢাকার সিএমএম আদালতের গারদখানায়। কাছাকাছি যেতেই জান্নাতকে বাধা দেয় গারদখানার পুলিশ। গারদের লোহার শিকের ভেতরে বাবা, বাইরে ছোট্ট জান্নাত।
পুলিশের বাধায় থেমে যায় জান্নাতের ছুটে যাওয়া; সেখান থেকেই বাবার হাত ছুঁতে হাত বাড়ায় সে। বাবার হাতে হাতকড়া, ভেতর থেকে বারবার কন্যার হাত ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। সেই চেষ্টাতেই হঠাৎ বাবার হাতের সামান্য স্পর্শ লাগে জান্নাতের কোমল হাতে। কিন্তু আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ। বাবার ভালবাসার উষ্ণতায় মন ভরার আগেই ফিরে আসতে হয় জান্নাতকে।
এমন আবেগঘন পরিবেশে বাবা-মেয়ে দুজনেরই চোখ গড়িয়ে জল পড়ছিল। মা ও ফুফুও আবেগাপ্লুত। একটু দূরে দাঁড়িয়ে গারদের দিকে তাক করা মোবাইল ক্যামেরায় বাবাকে দেখে জান্নাত। তার ১১ মাস বয়সী ছোট ভাই রোজানও এসময় অপলক তাকিয়ে থাকে বাবার দিকে। বুধবার বেলা পৌনে ১১টায় ঢাকার সিএমএম আদালতের গারদখানায় দেখা যায় এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
এর কিছু সময় আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে হাজিরা দেওয়ার জন্য আদালতে আনা হয় জান্নাতের বাবা রফিকুল ইসলাম বাবুকে। তিনি রাজধানীর শাহআলী থানার হরতাল-অবরোধে সহিংসতা ও ভাংচুরের মামলায় গত ১৫ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন। সেই থেকেই কারাগারে তিনি। ওই মামলায় হাজিরা দিতে তাকে কারাগার থেকে আদালতে আনে পুলিশ।
রফিকুল ইসলাম বাবুর বোন শায়েলা আফরোজের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের। তিনি বলেন, আমার ভাই ওইদিন (১৫ নভেম্বর) পৌনে ৩টার দিকে ফ্যাক্টরি থেকে নিচে দুপুরের খাবার খেতে নামে। এ সময় পুলিশ এসে তাকে ধরেই মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে গাড়িতে উঠিয়ে শাহ আলি থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে পা থেকে কোমড় পর্যন্ত বেধড়ক পিটুনি দেয়। এরপর মাগরিব পর্যন্ত থানায় রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
শায়েলা আফরোজ বলেন, আমরা খবর পেয়ে থানায় গেলে দেখা করতে দেয়নি পুলিশ। পরে কেরানীগঞ্জ কারাগারে দেখা করতে গেলেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, রফিকুল ইসলাম বাবু এক সময় মিরপুর শাহ আালি থানা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। ২ বছর আগে সে রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছে। এরপরও হামলা-মামলার শিকার হতে হচ্ছে তাকে। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন কোর্টে (সিএমএম) সরেজমিন ঘুরে আরও কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমস প্রতিবেদকের।
২০১১ সালের একটি মামলায় হাজিরা দিতে আসেন বিএনপি কর্মী রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ওই বছর উত্তরায় হরতালের আগেরদিন মিছিলের প্রস্তুতির সময় পুলিশ আমাদের তিনজনকে আটক করে। সেই ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে মামলায়। রফিকুল ইসলাম দক্ষিণখান কাওলা বিএনপির কর্মী।
তিনি বলেন, মামলায় হাজিরা দিতে দিতে অবস্থা খারাপ। অসুস্থ শরীর নিয়ে আর দৌঁড়াতে পারছি না। মামলা ঝুলে আছে, সাক্ষীরা আসছে না কোর্টে। এই ভোগান্তির শেষ কোথায় জানি না।
উত্তরখান থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী মারুফ হাসান সাকিল ৯ নভেম্বর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। আজ বুধবার সিএমএম কোর্টে সাকিলকে দেখতে এসে এসব কথা বলেন উত্তরখান থানার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী তাহমিদ ফুয়াদ।
তিনি বলেন, ভাইকে (মারুফ হাসান সাকিল) রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে জ্বালাও পোড়াও মামলা দিছে। আমি আজ একমাস ধরে আমার নিজের বাসায় থাকতে পারছি না। ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াই। কবে নিজের বাসায় যেতে পারব তা-ও জানি না।
কাজী আবুল বাশার (৭০) ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপি নেতা। আদালতে হাজিরা দিতে আসার সময় মাসখানেক আগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সিএমএম কোর্টে কথা হয় তার স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা। যার হিসেব রাখাও মুশকিল। তিনি বলেন, জেলে থাকা অবস্থায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে!
(ঢাকাটাইমস/০৭ডিসেম্বর/টিআই/বিবি)

মন্তব্য করুন