পুলিশের দায়ের করা মামলার জের

আখাউড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের কেউ কারাগারে কেউবা ফেরারি

​​​​​​​আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:০১ | প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৬

মাছ ধরার জাল ভাড়ায় খাটিয়ে সংসার চলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের মোগড়া উত্তর পাড়ার মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে আলমগীর মিয়া (৪৬)। তার ৫ ছেলে-মেয়ে। দুই ভাই শারীরিক প্রতিবন্ধি। ৮ জন মানুষের ভরণ পোষণের দায়িত্ব আলমগীরের কাঁধে। গত ২৮ অক্টোবর রাতে আখাউড়া থানায় দায়ের হওয়া একটি নাশকতার মামলায় আটক হন তিনি। গত দেড় মাস যাবত জেলে আছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কারাগারে থাকায় নিদারুণ অর্থেকষ্টে ভুগছে দরিদ্র পরিবারটি। পুলিশের দায়ের করা মামলার তথ্য মতে তিনি উপজেলা শ্রমিক দলের সদস্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের দিন আখাউড়া থানার উপপরিদর্শক মোবারক আলী বাদী হয়ে বিএনপি-জামায়াতের ৬১ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় পুলিশের সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টিসহ ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে ২৩ জন জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে রয়েছে জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র চাকুরীজীবীসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ। গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপির বহু নেতাকর্মী। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে তাদের পরিবার পরিজন। প্রথম দিকে স্থানীয় নেতারা তাদের পরিবারের খোঁজখবর রাখলেও এখন কাউকে পাশে পাচ্ছে না ভূক্তভোগীরা।

আলমগীর মিয়ার স্ত্রী বিউটি বেগম বলেন, আমার স্বামীকে রাজনীতি করতে দেখি নাই। জাল বেয়ে মাছ ধরে সংসার চালায়। আমার ছোট ছোট ৫টি ছেলে মেয়ে। তার উপর ঘরে দুইজন প্রতিবন্ধি মানুষ। আয় রোজগারের কেউ নাই। এতগুলো মানুষ নিয়ে আমি খুব কষ্টে আছি। স্বামী আটক হওয়ায় কেউ এখন জাল ভাড়া নেয় না।

স্বামীর জামিনের বিষয়ে অসহায় এই নারী বলেন, ‘ঘরে কোনো বুঝের মানুষ নাই। কে যাইবো জামিন করাইতে। কিভাবে জামিন চাইতে হয় তাও তো আমি জানি না। কেউ আমাদের খবরও নেয় না।’

মায়ের পাশেই দাঁড়িয়েছিল আলমগীর মিয়ার ৫ বছরের অবুঝ শিশু মাঈশা। সে বলে ‘দেড় মাস ধরে আব্বাকে দেখি না। আব্বাকে দেখতে মন চায়।’

আখাউড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান কয়েকটি ভোগ্য পণ্যের ডিলার। পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় তিনিও আসামি। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি বাড়িতে থাকেন না।

মাহমুদুল হাসান বলেন, দূর থেকে পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছি। এলাকায় না থাকায় ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা করেছে পুলিশ।

মনিয়ন্দ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাজমুল ইসলাম চৌধুরী পুলিশের মামলার তালিকাভূক্ত আসামি। দেড় মাস যাবত বাড়ির বাইরে থাকছেন। তার আপন ভাই ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মো. মজিবুর চৌধুরী প্রকাশ লিলুও মামলার আসামি। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

নাজমুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাড়িতে নারী শিশুরা খুব কষ্টে আছে। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে মিথ্যা মামলা দিয়েছে পুলিশ। এভাবে কতদিন বাহিরে থাকবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আশা করি সহসাই ভালো কিছু হবে।

উপজেলার আমোদাবাদ গ্রামের মোবারক হোসেন শহরের একটি ওষুধের ফার্মেসিতে বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করেন। তিনি মামলার আসামি হওয়ায় কর্মস্থলে যেতে পারছে না। চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন তিনি।

উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মহসীন ভূইয়া বলেন, যাযাবরের জীবন যাপন করতেছি। একেক সময় একেক জায়গায় থাকি। তিনি বলেন, নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ আমার একটি ছেলে সন্তান হয়েছে। ছেলেটি অসুস্থ্য হয়ে কয়েকদিন দিন হাসপাতালে ছিল। কিন্তু আমি পাশে থেকে চিকিৎসা করাতে পারছি না।

আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ডা. খোরশেদ আলম বলেন, উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির কমিটির কয়েক ’শ নেতাকর্মী এখন ঘর ছাড়া।

(ঢাকাটাইমস/০৯ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :