প্রণোদনার বীজ ও সার বঞ্চিত কৃষক

মো. শাহানুর আলম, ঝিনাইদহ
| আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০৫ | প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৮

বিকাশ বিশ্বাস পেশায় একজন পল্লি চিকিৎসক। উপজেলার চাপরাইল বাজারে রয়েছে তার একটি ওষুধের দোকান। তিনি ভাটাডাঙ্গা গ্রামের সন্তোশ বিশ্বাসের ছেলে। তার স্ত্রী ববিতা বিশ্বাস কালীগঞ্জে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করেন।

এই দম্পতির কেউ কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও তাদের নাম রয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ভুট্টা আবাদে দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে উপকরণ বিতরণের তালিকায়।

তাদের দুজনের স্ব-স্ব জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কৃষি অফিস থেকে উঠানো হয়েছে ২ কেজি ভুট্টার বীজ, ১০ কেজি পটাশ ও ২০ কেজি ঢ্যাপ সার (মোট ৪ কেজি বীজ ও ৬০ কেজি সার)। এ দম্পতির নাম ব্যবহার করে সরকারি প্রণোদনার সামগ্রী তোলা হলেও তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই তবুও নাম আছে কৃষি প্রণোদনার তালিকায়। আবার তালিকায় নাম আছে এমন অনেককে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নে চলতি অর্থবছরে সরকারি প্রণোদনার আওতায় জনপ্রতি ২ কেজি ভুট্টার বীজ ও ৩০ কেজি সার প্রদানের জন্য ১শ জন প্রান্তিক কৃষকের নামের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার প্রদান করা হয়।

কিন্তু প্রস্তুতকৃত তালিকার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। অনেকের তালিকায় নাম আছে কিন্তু বীজ সার কিছুই পাননি। আবার অনেকের কৃষি অফিসের অন্যান্য প্রণোদনা যেমন- সরিষা, পেঁয়াজ, ধান বীজের তালিকাতেও নাম রয়েছে। আবার ভুট্টা প্রণোদনায় তালিকায় একই ব্যক্তির নাম দুবার উল্লেখ করে সার ও বীজ উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রায়গ্রাম ইউনিয়নের ভাটাডাঙ্গা গ্রামের বিকাশ ও ববিতা দম্পতির মতো আরও অনেকের নাম দিয়ে সরকারি বীজ ও সার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া রায়হানের বিরুদ্ধে। এ তালিকায় সিংগী গ্রামের সোহেল রানা একই গ্রামের জিল্লুর রহমান (চাকরিজীবী), চা দোকানি সিহাব উদ্দিন, ভাটাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল কাদেরসহ অনেকের নাম থাকলেও তারা কোনো বীজ সার পাননি। এমনকি এই প্রণোদনায় তাদের নাম আছে সেটাও তারা জানতেন না।

শুধু তাই নয়, তালিকায় নাম থাকা অনেকেই প্রকৃত কৃষক নন। আবার যারা বীজ ও সার পেয়েছেন তারা তাদের জমিতে ভুট্টা চাষও করেননি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহাবুব আলম রনির দায়িত্বে অবহেলার কারণে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনিয়ম করে কৃষকের সরকারি অনুদানের বীজ ও সার আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর। ভুক্তভোগী এক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকারিয়া রায়হান প্রকৃত কৃষকদের নাম না দিয়ে নামে বেনামে সরকারি প্রণোদনা তুলে নিয়েছেন। অসৎ উপায়ে তিনি প্রকৃত কৃষকদের হক মেরে দিচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার যোগসাজশে তিনি প্রতিটি প্রণোদনার সময় আসলেই এমন করেন। কৃষকদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। নিয়মিত এলাকাতেও আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে।

ইতিপূর্বে এই কৃষি কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কৃষকের পেঁয়াজের প্রণোদনার টাকা আটকে রাখা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তিনি সেই টাকা দিতে বাধ্য হন। এভাবে একের পর এক অনিয়মকে তিনি নিয়মে পরিণত করে কৃষি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

রায়গ্রাম ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া রায়হান বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না, দেখে জানাতে হবে। এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম রনি জানান, এমনটি হওয়ার কথা নয়। আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি। আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার জন্য আগে থেকে নাম অনলাইনে আপলোড করে রেখেছি। অনেক সময় স্থানীয় রাজনীতিবিদরা তালিকা তৈরিতে প্রভাবিত করেন।

(ঢাকা টাইমস/১৫ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ইএইচ/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :